
নয়া দিল্লি: মাছে-ভাতে বাঙালি। আর রাজধানীতে বাঙালিদের আখাড়া বলা চলে চিত্তরঞ্জন পার্ক। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান এখানে হয়। মেতে ওঠেন শহরের বাইরে থাকা বাঙালিরা। সেই বাঙালিদের খাদ্যাভাসেই কোপ? বিতর্কের শুরু তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের একটি পোস্টকে ঘিরে। তাঁর পোস্ট করা ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের মাছ বাজারে হুমকি দিচ্ছেন গেরুয়া পরিহিত কয়েকজন। মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে, এই বলে মাছ বাজার বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন। সেই ঘটনাকে ঘিরেই তোলপাড় বাংলা থেকে দিল্লির রাজনৈতিক মহল। কী সেই বিতর্ক?
চিত্তরঞ্জন পার্কের এক নম্বর মার্কেটের গেটের সামনে মাছ বাজার। সম্প্রতিই কয়েকজন যুবক এসে বাজারে চড়াও হন। বলেন যে মাছ বাজারের লাগোয়া কালী মন্দির। তারা নিজেদের সনাতনী বলেই দাবি করে। মন্দিরের পাশাপাশি মাছ বাজার কিভাবে চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মাছ বাজার বন্ধ করে হনুমান চালিশা পাঠের হুমকিও দেন।
Please watch saffron brigade BJP goons threaten fish-eating Bengalis of Chittaranjan Park, Delhi. Never in 60 years has this happened, residents say. pic.twitter.com/jt5NCQHo9i
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) April 8, 2025
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই ভিডিয়ো পোস্ট করেন। এই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত। মাছে-ভাতে বাঙালির কাছ থেকে খাবারের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
Terrorising Hindu fishmongers into shutting legal shops next to a temple they built – BJP goons caught on video but not yet arrested. Hello @DelhiPolice – Or are we all supposed to eat dhoklas and chant Jai Shri Ram? pic.twitter.com/XKcRUEknFo
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) April 9, 2025
আরেক তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও মাছের ডিম দিয়ে বানানো ফ্রায়েড রাইসের ছবি পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, “মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে কোনও সমঝোতা নয়”।
যদিও ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছেন দিল্লি বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব। বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, মন্দির এবং মাছের বাজার নিয়ে কোনও সংঘাত নেই। মহুয়া মৈত্র নিজে বিতর্ক তৈরি করছেন। যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের গ্রেফতার করার দাবি দিল্লি পুলিশকে জানান দিল্লি বিজেপি সভাপতি।
অন্যদিকে, বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও এই বিতর্ক নিয়ে বলেন, “তিনি নিজে সবে মাত্র মাছ খেয়ে আসলেন। বিজেপির সঙ্গে মাছের কোনও সংঘাত নেই।”
সিআর পার্কের মাছ বাজারে হুমকির ঘটনাকে আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মানছেন মাছের ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। মাছ বাজারে বিক্রি চলছে নিজস্ব নিয়মে। রাজনীতিকে দুষছেন সব পক্ষই। সিআর পার্ক মার্কেট ওয়ান-এর মাছ বিক্রেতাদের দাবি, “এই বাজার থেকেই দিল্লি সব নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের বাড়ির মাছ যায়। তারা নিজেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। কেউ কখনও মাছ এবং মন্দির নিয়ে কোনও আপত্তি জানায়নি”।
তবে ঘটনা যে ঘটেছে, তা বিস্তারিতভাবে জানালেন তারাও। জানান, নবরাত্রি চলাকালীন প্রথমে এসে হুমকি দেওয়া হয় মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার। এরপর দিন কয়েক আগে এসে ফের মাছ বাজার বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়। সিআর পার্ক মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং অবাঙালি সেক্রেটারি জানান, মাছ বিক্রেতাদের চাঁদায় পুজো হয়। এই মন্দিরের অংশ তারাও। মানুষ মাছ কিনে মন্দিরে মাথা ঠেকিয়ে বাড়ি যান। অকারণ রাজনীতি করা হচ্ছে।