Dhurandhar: পাকিস্তানে ভারতের ‘ধুরন্ধর’ অপারেশন, পাঁচ দশকের গোপন লড়াই কীভাবে ঠাঁই পেল সিনেমায়?
'Dhurandhar' operation in Pakistan: ধুরন্ধর ছবির পরিচালক আদিত্য ধরের টিমের এক সদস্য সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানান, প্রথম তিন এজেন্টের মধ্যে দু’জন প্রথম চেষ্টাতেই টার্গেট হিট করেছিলেন। একজন পাক সেনায় চাকরি পেয়ে উচ্চপদে ওঠেন এবং সেখান থেকে পাক সেনার বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠান। দ্বিতীয় এজেন্ট হয়ে ওঠেন করাচির এক নামকরা ডনের ঘনিষ্ঠ।

কলকাতা: এদেশে–ওদেশে ছড়িয়ে তাঁরা। ‘ধুরন্ধররা’। পাকিস্তানের মাটিতে বসে একের পর এক অপারেশন চালিয়ে পাক সেনা ও আইএসআইয়ের ছক ভেস্তে দেওয়াই ছিল তাঁদের কাজ। কখনও সাফল্য এসেছে, কখনও ব্যর্থতা। ভারত ও পাকিস্তানে সরকার বদলেছে, প্রধানমন্ত্রী বদলেছেন, কিন্তু ধুরন্ধরদের কাজ আজও থামেনি। এই ধুরন্ধর কারা? তার উত্তর পেতে ফিরে যেতে হবে আশির দশকে। সেসময় পাকিস্তানের ভিতর ঢুকে এক দুঃসাহসী অপারেশনের পরিকল্পনা করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা র(RAW)। পরিকল্পনা ছিল, এমন কয়েকজন যুবককে পাকিস্তানে পাঠানো হবে যাঁদের চট করে ভারতীয় বলে চেনা যাবে না, যাঁদের পারিবারিক পিছুটান নেই, এবং যাঁরা পাকিস্তানে গিয়ে ভারতের চোখ ও কান হয়ে উঠতে পারবেন।
এই প্রথম ধাপে তিনজনকে বেছে নেওয়া হয়। তিনজনই ভারত–পাক সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা, পাঞ্জাবিতে চোস্ত এবং পাক-পাঞ্জাবি সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। তখন পাঞ্জাব–রাজস্থানের সীমান্তবর্তী এলাকায় একাঙ্ক নাটকের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হতো, উদ্দেশ্য ছিল একেবারে নিখুঁত চেহারা ও মুখের মানুষ খুঁজে বের করা।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭, তিন বছরের ব্যবধানে আবু ধাবি ও দুবাই হয়ে পাকিস্তানে পৌঁছন এই তিনজন। সবারই নতুন নাম, নতুন পরিচয়। এমনকি পাক পাঞ্জাব ও বালুচিস্তানে জন্মের প্রমাণপত্রও তৈরি করা হয়। RAW-এর তরফে একটাই অ্যাসাইনমেন্ট— যে কোনওভাবে পাক সেনায় চাকরি নেওয়া। তা সম্ভব না হলে স্থানীয় অপরাধী গ্যাংয়ে ঢুকে পড়া। কারণ, সেনায় ঢুকলে আইএসআই ও পাক সেনার গোপন পরিকল্পনার খবর মিলবে। আর অপরাধ জগতে ঢুকলে অস্ত্র, মাদক ও নকল নোটের নেটওয়ার্কের হাল-হদিশ পাওয়া যাবে, ভারতে সন্ত্রাস চালাতে আইএসআইয়ের এই তিনটিই মূল ভরসা।
ধুরন্ধর ছবির পরিচালক আদিত্য ধরের টিমের এক সদস্য সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানান, প্রথম তিন এজেন্টের মধ্যে দু’জন প্রথম চেষ্টাতেই টার্গেট হিট করেছিলেন। একজন পাক সেনায় চাকরি পেয়ে উচ্চপদে ওঠেন এবং সেখান থেকে পাক সেনার বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠান। দ্বিতীয় এজেন্ট হয়ে ওঠেন করাচির এক নামকরা ডনের ঘনিষ্ঠ। তবে তৃতীয় এজেন্টের কোনও খোঁজ আর পাওয়া যায়নি।
সাধারণ স্পাইদের সঙ্গে ধুরন্ধরদের বড় পার্থক্য ছিল একটাই, প্রশাসন বা অপরাধী গ্যাংয়ে ঢোকা পর্যন্ত তাঁরা কাজ শুরুই করতেন না। আর একবার কাজ শুরু করলে সেখান থেকে বেরোনোর প্রায় কোনও উপায় থাকত না। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ধুরন্ধর পাকিস্তানে গিয়েছেন। কারা ফিরেছেন, কারা ফেরেননি, তা অজানাই। তাই সাধারণ গুপ্তচরের তুলনায় ধুরন্ধরদের কাজ ছিল অনেক বেশি কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।
এই বাস্তবের ছায়াতেই তৈরি হয়েছে আদিত্য ধরের ছবি ‘ধুরন্ধর’, যা এখন লেটেস্ট সেনসেশন। ছবিটি আরব লীগের একাধিক দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। তাতেই ছবির আকর্ষণ আরও বেড়েছে। সিনেমায় রণবীর সিং ধুরন্ধরের ভূমিকায়। ভারতের স্পাই হিসেবে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানো হয়। সেখানে বালুচ সম্প্রদায়ের ভাষা, আচার-আচরণ রপ্ত করে কাজে নামে ধুরন্ধর। ছবির প্রেক্ষাপটে রয়েছে পাকিস্তানের অপরাধ জগতের বড় কেন্দ্র লিয়ারি এবং তার বেতাজ বাদশা রহমান ডাকাত।
