Murder Case: এ যেন ‘দৃশ্যম’ সিনেমা! বিজয়ের মতো গল্প সাজিয়েও একটা ভুল করে ফেললেন বাস্তবের মোহিত
Crime News: পরপর দুই বোনের মৃত্যুর পরই মোহিত তাঁর মাকে বলেন যে আত্মীয়রাই নিশ্চয়ই বিষ খাইয়ে খুন করেছে। বারান্দায় আলাদা পাত্রে যে জল রাখা ছিল, তা পান করেই দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশি তদন্ত শুরু হলে, বৃদ্ধা ছেলের বলা কাহিনিই শোনান। পুলিশেরও প্রাথমিক সন্দেহ আত্মীয়দের উপরই হয়।
মুম্বই: দৃশ্যম (Drishyam) সিনেমার কথা মনে আছে? কীভাবে একটা খুনকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র গল্প সাজিয়ে। বিজয় সালগাওকার (অজয় দেবগণ) ও তাঁর পরিবার সকলের কাছে গল্প করেছিল যে ২ অক্টোবর তাঁরা পানাজিতে সৎ সঙ্গে গিয়েছিলেন। কোন রেস্তোরাঁ থেকে পাও ভাজি খেয়েছিলেন, কোথায় থেকেছিলেন, তা পড়শি থেকে শুরু করে বাসের কন্ডাক্টরের ঠোটস্থ হয়ে গিয়েছিল। এবার পর্দার কাহিনিই বাস্তবেও ঘটল। নিজেই দুই বোনকে খুন করে দোষ চাপিয়ে দিল আত্মীয়ের ঘাড়ে। অভিযুক্ত যুবক এতটাই সুন্দর গল্প ফেঁদেছিল যে তাঁর মা থেকে শুরু করে পুলিশ অবধি সেই গল্পেই বিশ্বাস করে নেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি, গুগল সার্চ(Google Search)-ই ধরিয়ে দেয় অভিযুক্তকে। ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কীর্তি।
ঘটনাটি ঘটেছে বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে। গণেশ মোহিত নামক এক যুবক তাঁর দুই বোনকে খুন করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ দোষ ঠেলে দেন আত্মীয়দের উপরে। তিন দিনের ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যুর পরই অভিযোগ করেন, পারিবারিক শত্রুতার কারণে আত্মীয়রা জলে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে দুই বোনকে। এমনকী, নিজের মাকেও সেই গল্পে বিশ্বাস করিয়ে নেন।
কীভাবে খুন করল দুই বোনকে?
পালঘরের বন বিভাগে ক্লার্ক পদে কর্মরত গণেশের দুই বোন ছিল। বাবার মৃত্যুর পর চাকরি কে করবে, তা নিয়ে বিবাদ ছিল নিজেদের মধ্যে। শেষ অবধি ওই যুবকই চাকরি করতে শুরু করে, কিন্তু বেতন থেকে বোনদের ভাগ দিতে হচ্ছে বলে মনে মনেই ক্ষোভ পুষছিল। কিন্তু বাড়িতেই যদি দুই বোনকে খুন করে, তাহলে সন্দেহ তাঁর উপরে পড়বে, সেই কারণে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দুই বোনকে খুন করার পরিকল্পনা করে।
গত ১৫ অক্টোবর মোহিত সপরিবারে নবরাত্রি উপলক্ষে রেভদন্ডায় আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। ওই আত্মীয়দের সঙ্গে তাদের সম্পত্তি নিয়ে পুরনো বিবাদ ছিল। ১৭ অক্টোবর অভিযুক্ত যুবক ইন্সট্যান্ট স্যুপের মধ্যে ইঁদুর মারার ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। এরপরে সে বাড়ির বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ বাদে ফোন আসে বড় বোন সোনালির। অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু নবরাত্রির অজুহাত দেখিয়ে যুবক ইচ্ছাকৃতভাবে দেরিতে বাড়ি আসে। সেখান থেকে বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় যুবক। এদিকে ততক্ষণে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট বোন স্নেহাও। তাঁকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭ অক্টোবর মৃত্যু হয় সোনালির, ২০ তারিখে মৃত্যু হয় স্নেহার।
পরপর দুই বোনের মৃত্যুর পরই মোহিত তাঁর মাকে বলেন যে আত্মীয়রাই নিশ্চয়ই বিষ খাইয়ে খুন করেছে। বারান্দায় আলাদা পাত্রে যে জল রাখা ছিল, তা পান করেই দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশি তদন্ত শুরু হলে, বৃদ্ধা ছেলের বলা কাহিনিই শোনান। পুলিশেরও প্রাথমিক সন্দেহ আত্মীয়দের উপরই হয়। কিন্তু বাড়িতে বসানো সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিগত কয়েকদিনের মধ্যে বারান্দায় রাখা ওই জলের পাত্রে কোনও কিছুই মেশানো হয়নি।
এরপরই জেরা শুরু করা হয় সকলকে। মোহিতের ফোনের সার্চ হিস্ট্রি খুলতেই ফাঁস হয় রহস্য। দেখা যায়, বিষ নিয়ে মোট ৫৩ টি সার্চ করেছিল ওই যুবক। তাতে মিষ্টিতে কীভাবে বিষ মেশানো হয় থেকে শুরু করে কোন বিষে গন্ধ নেই, বিষ খাওয়ার কতদিনের মধ্যে মৃত্যু হয়-যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছিল। এরপরই ফের জেরা করা হয় মোহিতকে। শেষে অপরাধ স্বীকার করে নেয় যুবক।