
কলকাতা: কয়েক ঘণ্টা পরই শো ছিল বাংলাদেশের (Bangladesh) ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটে। সেই অনুষ্ঠান তো দূর, প্রাণ বাঁচিয়ে যে ফিরতে পারবেন, এটাই ভাবতে পারেননি কলকাতার সরোদ বাদক সিরাজ আলি খান। গত ১৯ ডিসেম্বর তাঁর ছায়ানটে অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে কী কী ঘটে এবং কীভাবে তারপর বাংলাদেশ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এলেন, তারই ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিলেন।
ওসমান হাদির মৃত্যুর পরই বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আগুনে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে শুরু করে খুলনা, রাজশাহী-একাধিক জায়গায় হিংসার আগুন ছড়ায়। উন্মত্ত জনতা প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টারের মতো সংবাদমাধ্যমের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে ৩২ ধানমন্ডির বাড়ি, ছায়ানটও।
সরোদ বাদক সিরাজ আলি খান। কলকাতায় থাকেন তিনি, তবে শিকড় রয়েছে বাংলাদেশে। তিনি উস্তাদ ধ্যানেশ খানের ছেলে, উস্তাদ আলি আকবর খানের পৌত্র এবং বাবা আলাউদ্দিন খানের প্রপৌত্র। ১৯ ডিসেম্বর শো ছিল ছায়ানটে। তার আগেই ভাঙচুর হয় ছায়ানটে। বাদ্যযন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে, আগুন ধরিয়ে দেয় মৌলবাদীরা।
গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছন সিরাজ। বনানীতে ১৭ ডিসেম্বর একটি জ্যাজ় কনসার্টে পারফর্ম করেন। ১৯ তারিখ সকালেই খবর পান যে ছায়ানটে হামলা হয়েছে। সিরাজ বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বিল্ডিংয়ে আমার পারফর্ম করার কথা, তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ছবিগুলো ভীষণ উদ্বেগজনক।”
ঢাকা ছেড়ে যখন তিনি বেরিয়ে আসছিলেন, তখন একটি চেকপয়েন্টে তাঁকে আটকানো হয়। প্রশ্ন করা হয় যে কেন তাঁর কাছে বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। ভয়ে সিরাজ নিজের ভারতীয় পরিচয় বলেননি। তিনি ব্রাহ্মণবেড়িয়ার টানেই কথা বলেন। গাড়ির চালকের কাছে তিনি নিজের ভারতীয় পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন লুকিয়ে রাখেন। সিরাজ বলেন, “আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি কে, সেই পরিচয় লুকাতে হবে।”
প্রাণ বাঁচিয়ে কোনওমতে শনিবার কলকাতায় ফেরেন সিরাজ। তাঁর মা এখনও বাংলাদেশে। সঙ্গে থাকা তবলা বাদকরা এখনও ঢাকায় আটকে রয়েছেন। চেষ্টা করছেন এই সপ্তাহে দেশে ফেরার। তবে বাংলাদেশের ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আতঙ্ক হয়ে মনে গেঁথে গিয়েছে।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া-কে সিরাজ বলেন, “কিছু বছর আগে ব্রাহ্মণবেড়িয়া আমার ঠাকুর্দার বাবার নামে তৈরি কলেজে হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ছায়ানটে যে হামলা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। সংস্কৃতি ও দুই দেশের ভাগ করা মূল্যবোধের উপরে আঘাত এটা।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর বাংলাদেশে ফিরবেন না বলেই জানিয়েছেন সিরাজ।