Pakistani Woman Received Exit Notice: ৬ ছেলেপুলে নিয়ে ৩৫ বছর ভারতে আছেন পাকিস্তানি মহিলা, নোটিস পেলেন দেশ ছাড়ার
Pakistani Woman Received Exit Notice: রাজ্য পুলিশের একটা চিঠিই বদলে দিল সবটা। শনিবারই পুলিশের তরফ থেকে একটি অফিশিয়াল চিঠি পেয়েছেন তিনি। যেখানে তাঁকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কখন যে মানুষের জীবনে বিপদের খাঁড়া নেমে আসবে তা বলা মুশকিল! ৫৫ বছর বয়স সারদা বাঈয়ের। গত ৩৫ বছর ধরে বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশাতে বাস তাঁর। অবশ্য জন্মসূত্রে তিনি পাকিস্তানি। ভারত-পাক অশান্তির আবহে এবার ভিটে ছাড়া হওয়ার জো হয়েছে সারদা বাঈয়ের। ২৭ তারিখের মধ্যে সব পাকিস্তানিকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। খুঁজে খুঁজে রাজ্যে থাকা পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র দফতরও। তাই সারদা বাঈ পেয়েছেন একটি নোটিস। তাঁকেও দেশ ছাড়ার নিদান দিয়েছে ভারত সরকার। তার পরেই মাথায় হাত ৫৫ বছরের প্রৌঢ়ার।
ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সারদা। ১৯৮৭ সালে বাবার হাত ধরে ছয় ভাইবোন ৬০ দিনের ভিসাতে চলে আসেন এই দেশে। ভারতে এসে ওড়িশার কোরাপুটে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। গত ৩৫ বছর ধরে ওড়িশার বোলাঙ্গিরে সপরিবারে বাস তাঁর। মানুষ করেছেন দুই সন্তানকে। বর্তমানে তাঁর দুই নাতি-নাতনিকেও মানুষ করছেন। কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ৩৫ বছর ভারতে কাটানোর পরেও তাঁর ঠাঁই হবে না এই দেশে।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমার পরিবার এখানে, ভারত আমার ঘর।”
রাজ্য পুলিশের একটা চিঠিই বদলে দিল সবটা। শনিবারই পুলিশের তরফ থেকে একটি অফিশিয়াল চিঠি পেয়েছেন তিনি। যেখানে তাঁকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিনটেন্ডেট অব পুলিশের সই করার চিঠির বয়ান অনুসারে সারদাদেবীর কোনও দীর্ঘ দিনের জন্য বৈধ ভিসা নেই। অনান্য কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে ভারতে থাকার অনুমতি নেই। তাই ‘যত শীঘ্র সম্ভব দেশ ছাড়তে হবে’ তাঁকে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সারদা বলেন, “আমার পাকিস্তানে কেউ নেই। বহু বছর হয়ে গেছে ফোনেও কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার গোটা জীবন এখানে, সন্তানরা এখানে, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। তাহলে আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কেন?”
প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভাল সারদা একা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওড়িশায় বসবাসকারী ১২ জন পাকিস্তানি নাগরিকের মধ্যে তিনিও একজন। এঁদের সকলকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা সমস্ত বৈধ ভিসা বাতিল করার পর হঠাৎ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই কূটনৈতিক পদক্ষেপের জেরে বিপদে পড়েছেন সারদার মতো মানুষরা। সারদা জানান, বহু বছর আগে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনও কোনও সাড়া পাননি। এখন, যদি তাঁকে দেশ ছাড়া হতে হয়, কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, “আমি কেবল আমার সন্তানদের সঙ্গে থাকতে চাই। এটা আমার বাড়ি। আমি কোথায় যাব?”
প্রসঙ্গত, একই ভাবে কয়েক বছর আগে প্রেমের টানে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে এসেছিলেন সীমা হায়দর। কিছুদিন আগেই জন্ম দিয়েছেন এক কন্যা সন্তানের। এখন যদি তাঁকেও দেশ ছাড়তে হয় তাহলে কী করবেন সীমা? তাই ভারতে থাকার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই আবেদনে সাড়া পাবেন কিনা তা বলবে সময়।
