পুদুচেরিতে কংগ্রেস সরকারের পতন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ নায়ারণস্বামী

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Feb 22, 2021 | 5:49 PM

এদিন, বেলা ১২টা নাগাদ রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজন(Tamilisai Soundararajan)-র সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী (V Narayanasamy) ও তাঁর হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন।

পুদুচেরিতে কংগ্রেস সরকারের পতন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ নায়ারণস্বামী
ফাইল চিত্র।

Follow Us

পুদুচেরি: শেষরক্ষা হল না, পুদুচেরিতে পতনই হল কংগ্রেস (Indian National Congress)-এর জোট সরকারের। সোমবার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আস্থাভোটে হেরে যায় ভি নারায়ণস্বামীর সরকার। ফলে নির্বাচনের তিন মাস আগেই পুদুচেরিতে পতন হল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি নতুন সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে নাকি রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ৩৩। এরমধ্যে তিনটি আসনে রয়েছেন কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীরা। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ৩০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মোট ১৫টিতে জয়লাভ করে। তাদের জোটসঙ্গী ডিএমকে-র ঝুলিতে যায় ২টি আসন। এক নির্দল বিধায়ককে নিয়ে মোট ১৮টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেসের জোট। তবে গতবছর দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য এক কংগ্রেস বিধায়ককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির মধ্যে এনআর কংগ্রেস মোট আটটি আসনে জিতেছিল। এআইএডিএমকে-র দখলে ছিল তিনটি আসন। বিজেপি নির্বাচনে কোনও আসন না পেলেও মনোনীত তিনটি আসনের বিধায়করা আদপে বিজেপির সদস্য। ২০১৯ সালে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় এনআর কংগ্রেসের এক বিধায়ককে বিতাড়িত করা হয়। ২০১৯ সালে সেই উপনির্বাচনে এই আসন দখল করে ডিএমকে, ফলে তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে তিন হয়।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে পদত্যাগের পালা শুরু হয়। প্রথম ধাপে দুই ভাগে মোট কংগ্রেসের চার বিধায়ক পদত্য়াগ করেন। ফলে শাসক জোটের আসন সংখ্যা কমে ১৪-এ পৌঁছয়। শাসক ও বিরোধী দল-উভয়ের আসন সংখ্যা ১৪-এ পরিণত হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে সরকার, এমনটাই দাবি তোলে বিরোধী দল। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও করে বিজেপি (BJP)। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এগুলি বিরোধী দলের চক্রান্ত।”

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

আরও পড়ুন: লকডাউনের পথেই কি হাঁটবে মহারাষ্ট্র? আগামী সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী

এরই মাঝে উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদী (Kiran Bedi)-কে রাতারাতি অপসারিত করে তেলাঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই তিনি আস্থাভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেন। সোমবার সেই আস্থাভোট হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই গতকাল বিকেলে নতুন করে আরও দুই বিধায়ক পদত্যাগ করেন, এর মধ্যে একজন কংগ্রেস ও আরেকজন ডিএমকে-র বিধায়ক। ফলে বিধানসভায় শাসক দলের আসন সংখ্যা ১৪ থেকে কমে ১২-এ দাঁড়ায়।

সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ বিধানসভায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। ঢোকার মুখেই তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের আমাদের উপর আস্থা রয়েছে। পুদুচেরির সাধারণ মানুষই কংগ্রেসকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের এনেছিল। বিরোধীরা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি, তাই এভাবে সরকার ভাঙার প্রচেষ্টা করছে। আমরা ডিএমকে ও নির্দল বিধায়কদের সমর্থনে সরকার গঠন করেছি। এরপর আমরা বিভিন্ন নির্বাচনের মুখে পড়েছি। প্রতিটি উপ-নির্বাচনেই আমরা জয়লাভ করেছি। এতেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে পুদুচেরির মানুষের আমাদের উপর আস্থা রয়েছে।”

একাধিক বিধায়কের পদত্যাগের জন্য তিনি সদ্য অপসারিত কিরণ বেদীকেই দোষ দেন। তিনি বলেন, “প্রাক্তন উপ রাজ্যপাল কিরণ বেদী ও কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। আমাদের বিধায়করা একজোট থাকাতে বিগত পাঁচবছর সরকার চালানো সম্ভব হয়েছে। প্রাপ্য বকেয়া তহবিলের অর্থ না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পুদুচেরির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”

দলত্যাগী বিধায়কদের স্বার্থান্বেষী বলেও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই ভোট দেওয়ার অধিকার নিয়ে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসক দলের বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণস্বামী রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছেন বলে জানালেও স্পিকার ভিপি শিবাকোঝুন্ডু ঘোষণা করেন, নারায়ণস্বামীর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে কংগ্রেসের জোট সরকারের পতন হয়েছে বলেই ধরা হবে।

এদিন, বেলা ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজনের সঙ্গে দেখা করেন ও তাঁর হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্পিকারের বিধান সম্পূর্ণ ভুল। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকায় এনআর কংগ্রেস ও এআইএডিএমকে  মনোনীত তিনটি আসনের ভোট ব্য়বহার করে আমাদের সরকার ভাঙার প্রচেষ্টা করেছে। এটা গণতন্ত্রের হত্যা। পুদুচেরি ও দেশের মানুষ তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবে।”

কংগ্রেসের অভিযোগ, আস্থা ভোটে মনোনীত আসনের প্রার্থীদের ভোটকে গণ্য করা যায় না। স্পিকার সেই নিয়মভঙ্গ করেই শাসকদলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তবে সুপ্রিমকোর্টের অতীতের রায় অনুযায়ী, মনোনীত বিধায়করাও আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সেই যুক্তি তুলে ধরেই যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করছে কংগ্রেস জোটের বিরোধী শক্তি।
Next Article