INDIA Seat Sharing: আসন ভাগাভাগিই ‘গলার কাঁটা’ ইন্ডিয়া জোটের, সমস্যা বেশি কোন রাজ্য়ে?
INDIA Alliance: সদ্য ইন্ডিয়া জোটের ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকতে পারেননি, কারণ সেইদিনই তাঁকে দুর্নীতি মামলায় তলব করেছিল ইডি। অভিষেকের আসন ফাঁকা রেখে ঐক্যের বার্তাই দিয়েছিল বিরোধী জোট।

নয়া দিল্লি: জোট কি হবে? উঠেছিল প্রশ্ন। কারণ, বিরোধীদের নিজেদের মধ্যেই বিরোধিতা। জোটকে অনেকে ‘সোনার পাথরবাটি’ বলেছিলেন। কিন্তু সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে তৈরি হয়েছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া (INDIA Alliance)। সদ্য ইন্ডিয়া জোটের ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) উপস্থিত থাকতে পারেননি। কারণ সেইদিনই তাঁকে দুর্নীতি মামলায় তলব করেছিল ইডি। অভিষেকের আসন ফাঁকা রেখে ঐক্যের বার্তাই দিয়েছিল বিরোধী জোট (Opposition Alliance)। তবে মুখে ঐক্য়ের বার্তা দিলেও বিরোধী জোটের গলায় কাঁটা হয়ে রয়েছে আসন ভাগাভাগিই। ইন্ডিয়া জোটের তরফে জানানো হয়েছে, চলতি মাসের শেষভাগের মধ্য়েই আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েক রাজ্য নিয়েই বিপাকে পড়েছে বিরোধ। কারণ, সেই রাজ্যগুলিতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে আকচা-আকচি চরমে।
সূত্রের খবর, যে রাজ্য়গুলিতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিরোধ সবথেকে বেশি, সেই রাজ্য়গুলিতেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করা হবে। এই তালিকায় রয়েছে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ু। এরমধ্যে বাংলা ও বিহার নিয়েই সমস্যা সবথেকে বেশি। মহারাষ্ট্রে তুলনামূলকভাবে আসন ভাগাভাগির আলোচনা সহজ হতে পারে। তবে কংগ্রেস, শিবসেনা ইউবিটি ও এনসিপির মধ্যে কে কত আসন পাবে, তা নিয়ে বিরোধ বাধতে পারে।
কোন রাজ্য়ে ফাটল কতটা চওড়া?
পশ্চিমবঙ্গ– লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সবথেকে বেশি সমস্যা হতে পারে বাংলাতেই। ইন্ডিয়া জোট গঠনের আগে থেকেই কংগ্রেস ও সিপিআইএম সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, তারা রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে চান না। কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধিতা চলবে। সূত্রের খবর, রাজ্যে লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্য়ে মাত্র ২টি আসন ছাড়তে রাজি শাসক দল তৃণমূল। এই দুই আসনের মধ্যে একটি যদি সিপিআইএমকে দেওয়া হয়, তাতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূলের এই প্রস্তাব যে জোটের আসন সমঝোতায় আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনা শুরু হলে, এই নিয়েই বিরোধ চরমে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া জাতি ভিত্তিক জনসুমারি নিয়েও তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধ বাধতে পারে ইন্ডিয়া জোটের। বাকি দলগুলি এই জনসুমারির পক্ষে থাকলেও, তৃণমূল শেষ বৈঠকেই এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল।
বিহার– লোকসভা নির্বাচনে বিহারে ৪০টি আসন রয়েছে। এই আসনগুলি ভাগাভাগি হবে কংগ্রেস, জনতা দল ইউনাইটেড ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ বিজেপির সঙ্গে জোট বেধেছিল। এনডিএ জোট জেডিইউ-কে ১৭টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। তার মধ্যে ১৬টি আসনেই জয়ী হয় জেডিইউ। এবারের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির হিসাব একটু কঠিন হতে পারে, কারণ নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব-দুইজনই চান সমান সমান আসনে লড়ুক আরজেডি-জেডিইউ। বাকি আসন কংগ্রেস ও অন্যান্য জোটসঙ্গী দলগুলির মধ্যে ভাগ হবে। তবে কংগ্রেস এই আসন ভাগাভাগির হিসাবে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
মহারাষ্ট্র– মারাঠা রাজ্য থেকে লোকসভায় ৪৮ জন সাংসদ পাঠানো হয়। ইন্ডিয়া জোটের সদস্য কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ও শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) আগে থেকেই মহা বিকাশ আগাড়ি জোট বেধে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়েছিল। কিন্তু শিবসেনার অন্দরে ভাঙনের জেরে সরকারের পতন হয়। তারপর থেকেই কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষোভ জমতে শুরু করে। সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রে আগাড়ি জোটের তিন দল নিজেদের মধ্যে ১৬টি করে আসন ভাগাভাগি করবে। এরপরে যদি কোনও জোটসঙ্গীকে আসন ছাড়তে হয়, তবে এই তিন দল নিজেদের ভাগের আসন থেকেই তা দেবে।
তামিলনাড়ু– দক্ষিণী রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শাসক দল ডিএমকে ও কংগ্রেস ইতিমধ্য়েই জোটে রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও দুই দল একসঙ্গে লড়েছিল। ডিএমকে ২০টি আসনে জয়ী হয়েছিল, কংগ্রেস জিতেছিল ৯টি আসনে। বাকি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল অন্য়ান্য় জোটসঙ্গী দলের মধ্যে। তবে ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, তাতে কংগ্রেস বেশি আসন দাবি করতেই পারে। এমনিতেও কাবেরীর জল নিয়ে কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে তামিলনাড়ুর।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে দিল্লি ও পঞ্জাবে কংগ্রেস-আম আদমি পার্টির মধ্যে বিরোধ বাধতে পারে। গুজরাটের ২৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও আপ অর্ধেক ভাগাভাগি করবে।
জম্মু-কাশ্মীরে আসন ভাগাভাগি রফা প্রায় চূড়ান্ত। পাঁচটি আসন কংগ্রেস, ন্য়াশনাল কনফারেন্স পার্টি ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ভাগাভাগি হবে।
