প্রথম যুদ্ধেই ‘লেটার মার্কস’ নিয়ে পাশ আকাশ মিসাইলের, দেখে কেঁদে ফেললেন এই মিসাইলের ‘জনক’
প্রকল্প শুরু হয়েছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে। শেষে মাত্র ৫০০ কোটি টাকায় নির্মিত হয় 'আকাশ'। বিশ্বের কোনও দেশে এই কটা টাকায় কোনও ডিফেন্স সিস্টেম গড়ার নজির নেই, দাবি এর জনকের। আজ গোটা বিশ্ব যখন আকাশ মিসাইলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন কী বলছেন এর জনক?

এক আধ দিন নয়, ১৫ বছর ধরে প্রায় এক হাজার বিজ্ঞানিকের যৌথ প্রচেষ্টায়, ভারতেরই একাধিক ডিফেন্স ল্যাবরেটরিতে নির্মিত সম্পূর্ণ দিশি মিসাইল ‘আকাশ’ ডিফেন্স সিস্টেম তার প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রেই ‘লেটার মার্কস’ নিয়ে পাশ করল। ভারতের ওয়েস্টার্ন বর্ডারে পাকিস্তানের লাগাতার মিসাইল হামলার মুখে ঢাল হয়ে দেশবাসীকে রক্ষা করল যে আকাশ মিসাইল, তার জনক প্রহ্লাদ রামারাও আজ গর্বের হাসি হাসছেন। তৎকালীন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও-র প্রজেক্ট ডিরেক্টর রামারাও-র আজ একজন সুসন্তানের পিতার মতোই গর্বিত, যার সন্তানের আজ সকলে প্রশংসা করছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত অস্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।
৮ ও ৯ মে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের লাগাতার মিসাইল ও ড্রোন হামলা রুখে দেয় আকাশ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। আকাশ-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বায়ুসেনার ডিজিএমও এয়ার মার্শাল একে ভারতীও বলেন, শত্রুর হামলার সামনে ‘আকাশ’ প্রাচীরের মতো দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বস্তুত, আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের এক বড় বিজ্ঞাপন। ৭৮ বছর বয়সী রামারাও কী আর এমনি এমনি কেঁদে ফেললেন স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে! পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত প্রহ্লাদ রামারাও বলছেন, ‘আমার সন্তানের সাফল্যে আজ আমি একজন গর্বিত পিতার মতো অনুভব করছি। আমার সন্তান এত ভাল কাজ করেছে, আমার জীবনের এটাই সবচেয়ে আনন্দের দিন। বিশ্বাস করুন, যেদিন পদ্ম পুরস্কার পেয়েছি, সেদিনও আমার এত আনন্দ হয়নি।’

১৯৯০-এর শুরুর দিকে ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’ বলে খ্যাত ডক্টর এপিজে আব্দুল কালাম নিজে ৩৫ বছরের প্রহ্লাদ রামারাও-কে বেছে নেন আকাশ প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসাবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা ও রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে কালাম সেই সময় ছিলেন ডিআরডিও-র ডিফেন্স ল্যাব ‘ডিফেন্স রিসার্চ ল্যাব’ বা ডিআরএল-এর প্রধান। তাঁর সম্পর্কে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে রামারাও বলছেন, ‘কালাম স্যার একজন সত্যিকারের লিডার ছিলেন। তিনি সেরাটা বার করে আনতে জানতেন।’ ভারতের এয়েরোস্পেস ও ডিফেন্স সেক্টর কালামের আমলে যেভাবে উন্নতি করেছিল, আজ ভারতকে সেই হারে উন্নতি করতে হলে অন্তত ১০ জন কালামের দরকার বলেও জানান রামারাও।
এই প্রথমবার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনার জন্য ‘আকাশ’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে বহুবার কড়া পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম একেবারে সামরিক ক্ষেত্রে দেশের পশ্চিম সীমান্তকে পাক ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন হামলা থেকে বাঁচাতে ভারতের দুই বাহিনীই আকাশ-এর উপর ভরসা রাখে। আকাশ সিস্টেমের মাল্টি সেন্সর ডেটা প্রসেসিং ক্ষমতা ও শত্রুর আক্রমণের অভিমুখ আগাম আঁচ করতে পারার সক্ষমতার জন্য চতুর্দিক থেকে আসা আক্রমণকেই প্রতিহত করে দেশের আকাশকে অটুট রেখেছে ‘আকাশ’। জনক রামারাও বলছেন, ‘আমি একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, বিশ্বের কোনও দেশ মাত্র ৫০০ কোটি টাকায় এরকম ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করতে পারবে না। ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে এই মিসাইল বিপদের আঁচ টের পায়। দুশমনের মিসাইল ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এলেই তাকে খতম করতে পারে আকাশ।’ ডিআরডিও-র তৈরি সম্পূর্ণ দিশি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ‘আকাশ’-কে কিনতে ২০২২-এ আর্মেনিয়া প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার চুক্তিতে সই করেছে ভারতের সঙ্গে।
