AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

লকডাউন নয়, দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে প্রেসক্রিপশনে কী দাওয়াই ‘দ্য ল্যানসেট’-এর?

করোনার (COVID) দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত দেশ। তবু কুম্ভমেলার ভিড় বা ভোটপ্রচারের জমায়েত, কিছুই থেমে নেই।

লকডাউন নয়, দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে প্রেসক্রিপশনে কী দাওয়াই 'দ্য ল্যানসেট'-এর?
প্রতীকী চিত্র
| Updated on: Apr 16, 2021 | 4:17 PM
Share

কমলেশ চৌধুরী: ১০ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণেই কোভিড (COVID 19) পজিটিভ হয়েছেন ১,৭০১ জন। বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬১৩ জন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোট ঘোষণার দিন পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১৬। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয়েছে ৬,৭৬৯। মাত্র ৭ সপ্তাহে ৩,১৫০% বৃদ্ধি!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত দেশ। তবু কুম্ভমেলার ভিড় বা ভোটপ্রচারের জমায়েত, কিছুই থেমে নেই। এই ধরনের যাবতীয় গণ-জমায়েত অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করল প্রথম সারির মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের কোভিড-১৯ কমিশনের ইন্ডিয়া টাস্ক ফোর্স। টিকাকরণের উপর আরও জোর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

ঠিক কী করলে করোনা মহামারী সামলানো সম্ভব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশ করতেই কোভিড-১৯ কমিশন গড়েছিল ল্যানসেট। স্থানীয়ভাবে টাস্ক ফোর্সও তৈরি করা হয়। বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি সেই দল দু’টি বিবৃতি দিয়েছে। একটিতে দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকানো নিয়ে একাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যটিতে বিশেষ ভাবে স্কুল খোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কী ভাবে তা সম্ভব হতে পারে, বাতলে দেওয়া হয়েছে সেই পথও।

কারা রয়েছেন এই টাস্ক ফোর্সে?

রয়েছেন আইসিএমআরের প্রাক্তন বিজ্ঞানী রমন গঙ্গাখেদকর, কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক সুনীলা গর্গ, আইসিএমআরের এপিডেমিওলজির বিজ্ঞানী শীলা গোডবোলে, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের পার্থ মুখোপাধ্যায়, এপিডেমিওলজি বিশেষজ্ঞ গিরিধর আর বাবু-সহ ২১ জন। তাঁদের সুপারিশ, এখনই বড় জমায়েত বন্ধ করা হোক। আরও বেশি সচেতনতা প্রচার হোক মাস্ক নিয়ে।

বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে টিকাকরণের ওপর। পর্যাপ্ত জোগান থাকলে তরুণদেরও মধ্যে টিকা দেওয়া শুরু করার পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁরা। বিশেষ করে যাঁদের বয়স ৪৫-এর কম, কিন্তু শরীরে কো-মর্বিডিটি রয়েছে। আরও বেশি টিকায় সিলমোহর দেওয়া থেকে শুরু করে উত্‍পাদন বাড়ানোর উপর জোর দেওয়ার সুপারিশও করেছে টাস্ক ফোর্স। দু’দিন আগেই বিদেশি টিকায় তড়িঘড়ি অনুমতি দেওয়ার রাস্তা খুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বলা হয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ সঙ্কেত পাওয়া টিকাকে স্থানীয় ট্রায়াল ছাড়াই অনুমতি দিয়ে দেওয়া হবে। এই শর্তে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দ্রুত দেশের হাতে চলে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন, স্পুটনিক মিলিয়ে হাফ ডজন টিকা থাকবে দেশের তূণে।

তবে এর পাশাপাশি টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ, ভ্যাকসিন হেজিটেন্সি অর্থাত্‍, টিকা নিয়ে অনীহা কাটানোর জন্য প্রচার বাড়াতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনাগুলির উপর নজর রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই নিয়ে আরও বেশি স্বচ্ছতা দেখাতে হবে। না-হলে একশ্রেণির অনীহা কাটানো সহজ হবে না।

করোনা-পর্বের শুরুতে তিনটে ‘টি’-র উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। টেস্টিং, ট্রেসিং, ট্রিটমেন্ট। এখনও টেস্ট বাড়লেও, ট্রেসিং যথাযথ হচ্ছে না বলে দেশ জুড়েই অভিযোগ। এই বিষয়েও বিশেষ ভাবে আলোকপাত করেছে টাস্ক ফোর্স। বিশেষজ্ঞ-দলের অভিমত, পজিটিভ পাওয়া গেলে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে, আইসোলেশনের যে ফর্মুলা, সে দিকে নজর দিতে হবে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষা বাড়াতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও পজিটিভ হচ্ছেন কত জন, তার হিসেবের দিকেও নজর রাখতে হবে।

স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা তো বটেই, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যও বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই ঢেউ সামলে স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষেই সওয়াল করেছে টাস্ক ফোর্স। কী ভাবে সম্ভব তা? বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ, শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মীদের টিকা দিতে হবে। কড়া ভাবে কোভিড-বিধি মেনে চলতে হবে। স্কুল-কলেজের ক্লাসে যাতে পর্যাপ্ত হাওয়া-বাতাস চলাচল করতে পারে, সে দিকও গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবস্থা রাখতে হবে অন-সাইট টেস্টিংয়েরও।

প্রথম ঢেউয়ে দেশের এপিসেন্টার ছিল মহারাষ্ট্র। দ্বিতীয় ঢেউতেও তাই। বাংলায় আগের মতোই এপিসেন্টার কলকাতা-উত্তর ২৪ পরগনা। কেন কোনও এলাকায় সংক্রমণ-লাফ, তার গোড়ার কারণ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দায়ী কি নতুন কোনও স্ট্রেন, তা জানতে জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। মহামারী মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়ানো যে জরুরি, সেই চিরসত্যও তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে।

ভারতে প্রথম করোনাভাইরাস আসে চিন থেকে। বাংলায় ঢোকে ব্রিটেন থেকে। প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন দেশ থেকেই করোনা আমদানি হয়েছিল দেশে। পরে স্থানীয় ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এখন করোনা বিশ্বের সব দেশেই। তবুও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের উপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। নতুন স্ট্রেন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, কারণ সেটাই। তাদের পরামর্শ, আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের সাত দিন কোয়ারান্টিনে রাখা হোক। অন্তর্দেশীয় বিমানযাত্রীদের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়নি।

তবে নানাবিধ নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও, দেশ বা রাজ্য জুড়ে লকডাউনের পক্ষে নন টাস্ক ফোর্সের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের যুক্তি, আগের লকডাউনে গরিব শ্রেণির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। তাই স্থানীয় ভাবে নিয়ন্ত্রণ-বিধি চালু করার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যগুলি অবশ্য সেই দিকেই হাঁটছে। মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোনের উপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দৈনিক আক্রান্ত ৬০ হাজারের উপরে উঠে গেলও লকডাউনের পথে হাঁটেনি মহারাষ্ট্র। ভরসা, জনতা কার্ফু। দিল্লি হাঁটছে সপ্তাহান্তের কার্ফুর পথে।

তবে দ্বিতীয় ঢেউ অপ্রতিরোধ্য। সুনামি হয়ে আছড়ে পড়ছে প্রতিদিন। হাসপাতাল পরিকাঠামো ভেঙে পড়লেও কি লকডাউন এড়িয়ে যেতে পারবে রাজ্যগুলি? লাখ টাকার প্রশ্ন, সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: একই বেডে গাদাগাদি করে চিকিৎসা দুই রোগীর, ওয়ার্ডে ছড়িয়ে মৃতদেহ, করোনায় নাকাল দিল্লি