জিজ্ঞাসা: ট্রায়াল আগেই অনুমোদন কোভ্যাকসিনকে! জেনে নিন সব ভ্যাকসিনের সর্বশেষ পরিস্থিতি
যেহেতু কোভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলছে তাই নির্দিষ্ট কোনও কার্যকরিতার হার জানা যায়নি।
নয়া দিল্লি: দেশে আপদকালীন অনুমোদন পেয়েছে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন। ভারতে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা প্রতিষেধক (COVID vaccine) কোভিশিল্ড তৈরি করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। আইসিএমআর ও ভারত বায়োটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে কোভ্যাকসিন। কিন্তু কোভিশিল্ডের চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল হলেও এখনও চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়নি কোভ্যাকসিনের। স্বাস্থ্যমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে কোভিশিল্ড সামগ্রিকভাবে ৭০.৪২ শতাংশ কার্যকরী। কিন্তু যেহেতু কোভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলছে তাই নির্দিষ্ট কোনও কার্যকরিতার হার জানা যায়নি।
দেশে করোনা প্রতিষেধকের আপদকালীন অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল ফাইজ়ার, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন। কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন অনুমোদন পেলেও বিশেষজ্ঞ দল অনুমোদন দেয়নি ফাইজ়ারকে। কিন্তু সারা বিশ্বে সবচেয়ে আগে তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে অনুমোদন পেয়েছিল ফাইজ়ারই।
ফাইজ়ার:
এপর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দেশে অনুমোদন পেয়েছে ফাইজ়ার ও বায়োএনটেকের করোনা প্রতিষেধক। নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ সবার আগে তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে তথ্য প্রকাশ করে ফাইজ়ার। ব্রিটেন ফাইজ়ারকে অনুমোদন দেয় ৩ ডিসেম্বর। তারপর ৯ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় কানাডা। ১১ ডিসেম্বর মার্কিন এফডিএর অনুমোদন পায় ফাইজ়ার। এরপরও সৌদি আরব, মেক্সিকো-সহ একাধিক দেশ অনুমোদন দিয়েছে ফাইজ়ারকে। ২১ ডিসেম্বর ফাইজ়ারকে অনুমোদন দেয় ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আপদকালীন অনুমোদন দেয় ফাইজ়ারকে। ফাইজ়ার দাবি করেছিল তাদের করোনা প্রতিষেধক ৯৪ শতাংশেরও বেশি কার্যকরী। নতুন ‘স্ট্রেনের’ বিরুদ্ধেও ফাইজ়ার কার্যকরী হবে বলে আশাবাদী বায়োএনটেক প্রধান। তবে ফাইজ়ারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় অত্যাধিক ঋণাত্মক তাপমাত্রায়, প্রায় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে।
মডার্না:
ফাইজ়ারের পর চূড়ান্ত পর্বের করোনা ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করেছিল মডার্না। নভেম্বরের ৩০ তারিখ তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিল মডার্না। যেখানে ৯৪.১ শতাংশ কারযকরিতার দাবি তুলেছিল ওই সংস্থা। মডার্নাকে আমেরিকা প্রথম আপদকালীন অনুমোদন দেয় ১৯ ডিসেম্বর। কানাডা অনুমোদন দেয় ২৩ ডিসেম্বর। জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখ মডার্নাকে অনুমোদন দেবে ইউরোপীয়া এজেন্সি। ফাইজ়ারের থেকে কম ঋণাত্মক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় মডার্নার টিকাকে।
কোভিশিল্ড:
ভারতে অনুমোদন পেয়েছে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা প্রতিষেধক কোভিশিল্ড। ডোজ় সংক্রান্ত বিতর্ক তৈরি হলেও পরবর্তী কালে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছিল, দুটি ডোজ়েই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয় কোভিশিল্ড। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে অক্সফোর্ডের টিকা ৭০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। মডার্না টিকার সবচেয়ে ভাল দিক হল সংরক্ষণের সুবিধা। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষিত হয় কোভিশিল্ড। ভারত ছাড়াও কোভিশিল্ডকে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র দিয়েছে ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদোর। ইউরোপীয়ান এজেন্সিও কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয় খতিয়ে দেখছে।
কোভ্যাকসিন:
আইসিএমআর ও ভারত বায়োটেকের যৌথ উদ্যোগে সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে কোভ্যাকসিন। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়ালে দারুণ ফল করেছিল এই প্রতিষেধক। এরপর তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের তথ্যও বিশেষজ্ঞ দলের কাছে জমা দিয়েছিল ভারত বায়োটেক। তবে চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল সম্পূর্ণ না হওয়ায় কার্যকরিতা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও তথ্য প্রকাশিত হয়নি। কোভিশিল্ডের মতো এটিও ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় সংরক্ষিত হয়।
রাশিয়া ও চিনের প্রতিষেধক:
তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল সম্পূর্ণ হওয়ার আগে থেকেই দেশবাসীকে করোনা প্রতিষেধক দিতে শুরু করেছিল রাশিয়া ও চিন। ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ সিনোফার্মের করোনা প্রতিষেধক সিনোভ্যাক্সকে অনুমোদন দিয়েছে চিন। বেজিং জানিয়েছে, সিনোফার্মের করোনা প্রতিষেধক ৭৯ শতাংশ কার্যকরী। ২৪ নভেম্বর রাশিয়া জানিয়েছিল তাদের করোনা প্রতিষেধক ৯১.৪ শতাংশ কার্যকরী। অগস্ট মাস থেকেই সে দেশে করোনা টিকাকরণ শুরু করেছেন পুতিন। ডঃ রেড্ডিজ ল্যাবের উদ্যোগে ভারতেও তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে স্পুটনিক ভি-র।
টিকা | কার্যকরিতা | সংরক্ষণের তাপমাত্রা | ট্রায়াল | প্রথম অনুমোদন |
কোভিশিল্ড | ৭০.৪২ শতাংশ | ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস | তৃতীয় পর্যায় সম্পূর্ণ | ব্রিটেনে, ভারতে ২ জানুয়ারি |
কোভ্যাকসিন | অসম্পূর্ণ | ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস | তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে | ভারতে ২ জানুয়ারি |
ফাইজ়ার | ৯৪ শতাংশের বেশি | মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস | তৃতীয় পর্যায় সম্পূর্ণ | ব্রিটেনে ৩ ডিসেম্বর |
মডার্না | ৯৪.১০ শতাংশ | মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস | তৃতীয় পর্যায় সম্পূর্ণ | আমেরিকায় ১৯ ডিসেম্বর |
স্পুটনিক ভি | ৯১.৪০ শতাংশ | ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস | তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে | রাশিয়ায় ১১ অগস্ট |
সিনোভ্যাক | ৭৯ শতাংশ | ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস | ট্রায়াল চলছে | চিনে ৩১ ডিসেম্বর |
বাকি প্রতিষেধকগুলি:
মার্কিন সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসন জানুয়ারি মাসে তাদের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করবে। আরেক মার্কিন সংস্থা নভোভ্যাক্স ব্রিটেনে তাদের চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল চালাচ্ছে। ফ্রান্সের সানোফি, ব্রিটেনের গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লিনও করোনা প্রতিষেধক তৈরি করছে। ভারতের জাইডাস ক্যাডিলার ট্রায়াল চলছে। এছাড়া পাকিস্তান-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে করোনা প্রতিষেধকের ট্রায়াল চলছে।
কোন দেশে কত প্রতিষেধক:
চিনে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে ৪৫ লক্ষ প্রতিষেধকের ডোজ় দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ায় ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৫২ হাজার ডোজ় দেওয়া হয়েছে। আর্জেন্টিনায় ৩২ হাজার ১৩ ডোজ় দেওয়া হয়েছে মানুষকে। আমেরিকার মানুষ ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার ডোজ় পেয়েছেন। কানাডায় ১ লক্ষ ১২ হাজার ২৪৬ ডোজ়ের টিকাকরণ হয়েছে।