তিন শিশুর মৃত্যুর পরও জানা গেল না কোন জ্বর! আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক

Jalpaiguri Fever: আক্রান্ত শিশুদের রক্তপরীক্ষা করে জাপানি এনকেফালাইটিসের জীবাণু পাওয়া যায়নি, তেমনই চিকেনগুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস বা এনএস-ওয়ানের (NS-1) সংক্রমণও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ আধিকারিক।

তিন শিশুর মৃত্যুর পরও জানা গেল না কোন জ্বর! আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক
গত কয়েকদিনে অজানা জ্বরের প্রকোপে উদ্বেগ বেড়েছে জলপাইগুড়িতে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 15, 2021 | 6:31 AM

জলপাইগুড়ি: অজানা জ্বরের (Mystery Fever) প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে উত্তরবঙ্গে (North Bengal)। ৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যুর খবর এসেছিল আগেই। এখনও পর্যন্ত এই অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তিন শিশুর। গুরুতর অসুস্থ শিশুর সংখ্যা সব মিলিয়ে ৫০-এর পঞ্চাশের কাছাকাছি। সরকারি নথি অনুযায়ী ৫০০-র বেশি শিশু অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। আর এই ঘটনা কার্যত বেআব্রু করে দিয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে। বিশেষত শিশু চিকিৎসার পরিকাঠামোর হতশ্রী চেহারাটা ক্রমশ সামনে আসছে।

করোনার তৃতীয় ঢেউ সামলাতে এবং শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ভবন ঘোষণা করেছিল যে গোটা রাজ্যে প্রস্তুতি চলছে। বাড়ানো হচ্ছে বেড। আইসিইউ, পিকু, নিকু সহ পেডিয়াট্রিক এক্সপার্টদের নিয়ে তৈরি হয়েছে টিম। তৃতীয় ঢেউ কবে আসবে জানা নেই। তবে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এবং কোচবিহার সংলগ্ন এলাকায় শিশুদের এই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাতেই বেআব্রু হয়ে পড়েছে সরকারি সেই ব্যবস্থা। হাসপাতালে গাদাগাদি করে রয়েছে শিশু এবং তাদের অভিভাবকেরা। ভর্তির জায়গা নেই। এমনই অবস্থা একাধিক জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল কিংবা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর গত ১২ থেকে ১৪ দিন ধরে এই অজানা জ্বরের প্রকোপ বেড়ে চলেছে জেলা জুড়ে। উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, সঠিকভাবে সেই তথ্য জানানো হয়নি স্বাস্থ্য ভবনকে। তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। জ্বর, পেটে যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু শিশু। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে এই অজানা জ্বর। অথচ ১০-১২ দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করে সঠিক কারণ জানা গেল না। কেন জ্বরের কারণ জানতে এত বেশি সময় লাগছে? সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।

মূলত শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে এই জ্বরের প্রকোপে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা ভিড় করছে। কোথাও প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও বা ভর্তি করে নেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, বানারহাট, ধুপগুড়ি , মালবাজার, মেখলিগঞ্জ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ছোট-বড় হাসপাতালে এই মুহূর্তে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের ভিড়।

এই জ্বর যে জাপানি এনসেফালাইটিস নয়, তা নিশ্চিত করেছেন উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওএসডি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সুশান্ত রায়। প্রশ্ন উঠছে তাহলে জ্বরের কারণ কি? প্রশ্ন উঠছে করোনা নিয়ে সরকার জানিয়েছিল, শিশুদের রক্ষার্থে সবরকম ব্যবস্থা প্রস্তুত। তাহলে এই কয়ে’শ শিশু আক্রান্ত হওয়া মাত্রই কী ভাবে সেই পরিকাঠামো বেআব্রু হয়ে পড়ল? টিভি নাইন বাংলার খবরের জেরে মঙ্গলবার নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবন। আট জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ কমিটি যারা উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির অজানা জ্বরসহ গোটা রাজ্যের কোন জেলায় কি হচ্ছে শিশুদের সেই বিষয়ে তারা দেখবেন। অন্যদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, এই ইস্যুতে বুধবার মুখ্য সচিব বৈঠক ডেকেছেন জরুরি ভিত্তিতে। সব জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হবে সেই বৈঠকে।

আরও পড়ুন: Jalpaiguri: জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ নয়, অজানা জ্বর নিয়ে মুখ খুললেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক