সপ্তম পে কমিশনের ‘শাহি প্রতিশ্রুতি’, কী বলছেন সরকারি কর্মচারীরা
কেন্দ্র ও রাজ্যের বেতন পরিকাঠামোয় পার্থক্য এবং তা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের নিরন্তর ক্ষোভ। এরইমধ্যে বাংলায় দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণায় নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা।
কলকাতা: বিজেপি ক্ষমতায় এলে সপ্তম পে কমিশন চালু হবে বাংলায়। বৃহস্পতিবারই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাগরের সভা থেকে ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বকেয়া, ডিএ, বেতন বৃদ্ধি-সহ একাধিক ইস্য়ুতে রাজ্য সরকারের প্রতি সরকারি কর্মচারিদের অভিযোগের ঝুলি যখন উপচে পড়ছে, সেই সময় ভোটের মুখে এই শাহি-ঘোষণায় হইচই পড়ে গিয়েছে সরকারি কর্মচারি মহলে। একাংশ এই ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন। তবে সরকারি কর্মচারি সংগঠনের কারও কারও কাছে, এটা ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাজ্যে কবে থেকে বেতন কমিশন চালু হয়?
রাজ্যে প্রথম পে কমিটি গঠন হয় ১৯৬০ সালে। এরপর আসে প্রথম পে কমিশন। যা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। দ্বিতীয় পে-কমিশন বসে ১৯৮১ সালে। তৃতীয় পে কমিশন ১৯৯০ সালে, চতুর্থ পে কমিশন ১৯৯৪ সালে এবং পঞ্চম পে কমিশন বসে ২০০৯ সালে। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ পে কমিশন বহাল হওয়ার কথা থাকলেও রাজ্যে রোপো আইন চালু হয়। তবু ডিএ নিয়ে রোজই আদালতে ছুটতে হয় সরকারি কর্মীদের।
কেন্দ্র-রাজ্যের বেতন পরিকাঠামোয় তারতম্য
ডিএ থেকে শুরু করে অন্যান্য ভাতা, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের তুলনায় রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা অনেক কম পান। ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের ডিএ-র পার্থক্য ১৯ শতাংশ। কেন্দ্র যেখানে ২১ শতাংশ ডিএ দেয়, এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেখানে ঘোষিত ডিএ ৩ শতাংশ। কেন্দ্র সরকারের কর্মচারীরা দুই সন্তানের জন্য পড়াশোনার ভাতা পান ২২৫০ টাকা। বাড়ি ভাড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা পান ২৪ শতাংশ। রাজ্যে কর্মচারীরা হাউজ রেন্ট অ্যালাওয়েন্স পান ১২ শতাংশ।
তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার অবস্থা খুবই খারাপ করে দিয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছে যে বাংলার কোনো সরকারি কর্মচারীরাই সপ্তম পে কমিশনের সুবিধা পান না।বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন হলেই আমরা সপ্তম পে কমিশন বাস্তবায়ন করব। pic.twitter.com/JqdNUbIZUp
— Amit Shah (@AmitShah) February 18, 2021
কেন্দ্র-রাজ্যের এই ‘বৈষম্য’ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে। লাগাতার সপ্তম বেতন কমিশনের পক্ষে সওয়ালও করছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সাগরে শাহর ঘোষণা নিঃসন্দেহে মাস্টারস্ট্রোক মানছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে সরকারি কর্মচারি সংগঠনের বিজয়শঙ্কর সিনহা এই ঘোষণাকে ভোটের রাজনীতির বাইরে আর কিছুই মনে করছেন না। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাই এসব বক্তব্যে লাভ হবে না। ত্রিপুরাতে আমরা দেখেছি প্রতিশ্রুতি দিয়েও কিছুই দেয়নি। উল্টে নতুন পেনশন স্কিম চালু করে দিয়েছে। এসব ভোটের রাজনীতি ছাড়া কিছুই না। মধ্যবিত্ত কর্মচারি সমাজ ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন দেখাবে।”