SSC: নিয়োগ পেয়েও স্বস্তি নেই ববিতার, পরেশ-কন্যার চাকরির এবার নতুন ‘দাবিদার’
Recruitment Scam: শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনামিকার দাবি, চাকরিটা পাওনা ছিল তাঁর। অ্যাকাডেমিক স্কোরে ভুল তথ্যের জোরে নাকি চাকরি পেয়েছে ববিতা। আর অনামিকার এই দাবি ঘিরেই জোর বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
কলকাতা ও শিলিগুড়ি: আদালতের নির্দেশে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি পেয়েছেন ববিতা সরকার (Babita Sarkar)। সঙ্গে পেয়েছেন ১৬ লক্ষ টাকাও। কিন্তু এখন হাজির ওই চাকরির নতুন দাবিদার অনামিকা রায়। শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনামিকার দাবি, চাকরিটা পাওনা ছিল তাঁর। অ্যাকাডেমিক স্কোরে ভুল তথ্যের জোরে নাকি চাকরি পেয়েছে ববিতা। আর অনামিকার এই দাবি ঘিরেই জোর বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
কোথায় সমস্যা?
ববিতার যে আবেদনপত্র তাতে লেখা ববিতা স্নাতক স্তরে ৮০০ এর মধ্যে পেয়েছেন ৪৪০। অর্থাৎ হিসেব মতো প্রাপ্ত নম্বর হওয়া উচিত ৬০ শতাংশের কম। কিন্তু পাশেই লেখা প্রাপ্ত নম্বর ৬০ শতাংশের বেশি। ফলে ৬০ শতাংশের বেশি ধরে তাঁকে অ্যাকাডেমিক স্কোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি ৬০ শতাংশের কম নম্বর ধরা হয়, তাহলে অ্যাকাডেমিক স্কোর ২ কমে যাবে ববিতার। তেমন হলে স্বাভাবিকভাবেই, ববিতা মেধাতালিকায় অনেকটা পিছিয়ে যাবে। সেই যুক্তি দেখিয়েই চাকরির দাবি করছেন অনামিকা। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার কথাও বলছেন তিনি।
কমিশনের কী ব্যাখ্যা?
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নর্দার্ন রিজিয়ন ববিতা সরকারের নথি যাচাই করেছিল। দু’বার নথি যাচাই হয়েছিল। যখন ববিতার চাকরির নির্দেশ এসেছিল, তখন ডেটা রুম বন্ধ। নতুন করে তথ্য যাচাইয়ের জায়গা ছিল না। পুরনো তথ্যের ওপরেই ভরসা রাখতে হয়েছিল। কমিশন বলছে, আদালত যা নির্দেশ দেবে সেই মতো চলা হবে।
কী বলছেন ববিতা?
টিভি নাইন বাংলার তরফে ববিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাফ বক্তব্য, ফর্ম ফিলাপ করার সময় তিনি তাঁর প্রাপ্ত নম্বরই দিয়েছিলেন। ৮০০ তে ৪৪০ দিয়েছিলেন। মার্কশিট অনুযায়ী যা যা তথ্য তিনি দিয়েছেন, সবই সঠিক। বললেন, “মার্কশিট অনুযায়ী যা যা তথ্য দিয়েছি, সব সঠিক। সেই প্রেক্ষিতে তাঁরা আমাকে কত নম্বর দিয়েছিলেন জানি না। আমাদের নম্বরের তালিকা তারা প্রকাশ করেনি। তারা দিয়েছিল, নামের তালিকা। সেই কারণে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আমার অভিযোগ ছিল, র্যাঙ্ক পিছিয়ে গিয়েছে। আমার নম্বর কত ছিল, আমি কিছুই জানতাম না। আদালতকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কর্তৃপক্ষ নম্বর জানিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে লিখিত তথ্য ছিল না। আদালতে দেওয়া সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে লিখিত চাকরি দেওয়া হয় এবং আমি কাজে যোগ দিই। এত ভেরিফিকেশন হওয়ার পরেও আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না।”
অনামিকা যে দাবি করছেন, সেই প্রসঙ্গে অবশ্য বলটি কমিশনের কোর্টের ঠেলে দিয়েছেন ববিতা। বলেছেন, “এসএসসি তাদের ওয়েবসাইটে তাঁদের নম্বর বিভাজনের তালিকা প্রকাশ করেনি। এই নম্বর আমাকে এসএসসি দিয়েছে। এটা তাদের ভুল। তারা কীভাবে সংশোধন করবে, তা তারা জানে। আদালত যা রায় দেবে, তা আমি মেনে নেব। আদালত আমাকে চাকরি দিয়েছে, আদালত যদি নির্দেশ দেয়, আমি অবশ্যই সেটি পালন করব।” বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন ববিতা এবং এই নিয়ে আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কী বলছেন অভিযোগকারী?
উল্লেখ্য, যে মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগ হয়েছে, সেখানে ববিতার র্যাঙ্ক ছিল ২০। অনামিকার র্যাঙ্ক ছিল ২১। এখন অনামিকার বক্তব্য, “এখন প্রকাশ্যে এসেছে, ববিতা সরকারের অ্যাকাডেমিক স্কোরে দুই নম্বর কমে যায়। সেক্ষেত্রে দুই নম্বর কমে গেলে তাঁর নাম অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে চাকরির দাবিদার আমিই। যে ভুলটি হয়েছে সেটি ববিতা সরকারের দিক থেকে হয়েছে নাকি কমিশনের দিক থেকে হয়েছে সেটি ওরা বলতে পারবে। কিন্তু ২০ নম্বরে আসলে আমার নাম থাকা উচিত ছিল। আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাতে চাকরিটা পাই। যদি আমাকে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যেতে হয়, তাহলে যাব।”
কী ব্যাখ্যা আইনজীবী মহলের?
যে অভিযোগ উঠে আসছে, এ ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কী কী ব্যবস্থা হতে পারে? কী মনে করছে আইনজীবী মহল? আইনজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, কোর্টে কেউ কোনও ভুল তথ্য পরিবেশন করে থাকলে তিনি সাজার মুখে পড়তে পারেন। রেক্টিফিকেশনেরও সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি বোনাফায়েড মিস্টেক ধরে এমনও হতে পারে ববিতা, অনামিকা দুজনেই চাকরি করল। কিংবা ববিতার চাকরি বাতিলও হতে পারে।
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন সব কাণ্ডই ঘটাচ্ছে। তারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়াতে কখন কী করেছেন, যাঁরা নম্বর দিয়েছেন, তাঁরা প্রকৃতস্থ ছিলেন কি না, সেটাও দেখার। অনেক সমস্যা রয়েছে। এখানে ববিতার কিছু করার নেই। যদি ববিতার নম্বর ভুল দিয়ে থাকে, আদালত তার বিচার করবে। স্ক্রুটিনি যে ঠিকভাবে হয়নি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। ববিতা তো কোনওকিছু গোপন করেনি।”