কলকাতা: অনুব্রত মণ্ডলের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সামান্য কম রয়েছে। তাঁর সুগারও রয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের প্রাথমিক চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছেন এসএসকেএমের সুপার পীযূষ রায়। তাঁর চিকিৎসায় ইতিমধ্যেই সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার আবার বোর্ড অনুব্রত মণ্ডলের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসক কর্তা জানিয়েছেন, অনুব্রত মণ্ডলের সুগারের মাপকাঠির ওপরেও নজর রাখা হয়েছে। তবে সিবিআই এখনও পর্যন্ত যে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তা এদিন জানিয়ে দেন তিনি। চিকিৎসক কর্তা বলেন, “দেশের সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমরা আইন মেনে তদন্তে যেভাবে সাহায্য দরকার করব।” ইতিমধ্যেই অনুব্রত মণ্ডলের গরহাজিরা নিয়ে দিল্লির সদর দফতরে রিপোর্ট পাঠাল সিবিআই। সূত্রে মারফত তেমনটাই জানা গিয়েছে। বুধবারই অনুব্রতর গরহাজিরা নিয়ে তাঁর আইনজীবীরা সিবিআই দফতরে চিঠি দিয়ে আসেন। রাতে বৈঠকে বসেন তদন্তকারীরা। এখনও উচ্চতর কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষা করছেন সিবিআই তদন্তকারীরা।
বুধবার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অনুব্রত মণ্ডলের। তিনি তাঁর নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে সকাল ১০-১৫ মিনিট নাগাদ গাড়ি নিয়ে বের হন। এরপর নিজাম প্যালেসের নাকের ডগা দিয়েই ঘুরে চলে যান এসএসকেএমে। হেঁটেই হাসপাতালে ঢোকেন তিনি। তারপর পাঁজরকোলা করে তাঁকে ঢোকানো হয় উডবার্ন ব্লকে। সেখানেও সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে থাকার বায়না করেন তিনি। তখন অবশ্য চিকিৎসকরা দেখেন, তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিকই ছিল। তবুও অক্সিজেন দেওয়ার জন্য বায়না জুড়ে বসেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের মধ্যেই দুধরনের মত উঠে আসছিল। এক পক্ষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন, অপরপক্ষ বিপরীতে ছিলেন। শেষমেশ ভর্তি করা হয় অনুব্রতকে।
বুধবারই নিজাম প্যালেসে গিয়ে চিঠি দিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে আসেন অনুব্রতর দুই আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা ও সঞ্জীব কুমার দাঁ। তাঁদের বক্তব্য, হাজিরা দিতেই কলকাতায় এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। ভোর রাত থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসএসকেএম হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। এই মর্মে মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে সিবিআই দফতরে চিঠি দিয়েছেন অনুব্রতর আইনজীবীরা।
সিবিআইকে লেখা চিঠিতে অনুব্রত বলেছেন, “সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতার কারণে হাজিরা দিতে পারছি না। তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সিবিআই চাইলে হাসপাতালে আসতে পারে। আমি সব রকম সহযোগিতা করব।”
অনুব্রত মণ্ডলের চিঠি সিবিআইকে দিয়ে বেরিয়ে আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা বলেন, “অনুব্রতর শারীরিক অবস্থা এই মুহূর্তে একদমই ভালো নয়। তদন্তের নামে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাতেই অসুস্থ। এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত। এটা রাজনৈতিক পরিভাষা নিয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সিবিআই দফতরে যেতে পারেননি অনুব্রত। আসার প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন। বোলপুর থেকে এসেছিলেন কেবল নোটিসেই সাড়া দেওয়ার জন্য। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।” সিবিআই কি তবে হাসপাতালে গিয়ে অনুব্রতকে জেরা করবেন, সেটা দিল্লির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।