কলকাতা: তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। ২২ গজে যতটা সফল, ততটাই সফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন ক্রিকেট প্রশাসনেও। আগামিদিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের সেবা করবেন মহারাজ। সোমবার উডল্যান্ডস হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এমনটাই শুনিয়ে গেলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর (Anurag Thakur)। অনুরাগের সঙ্গে সৌরভের ‘সখ্য’ ক্রীড়ামহলে সর্বজনবিদিত। ফলে তাঁর এদিনের মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। এই জল্পনায় ঘৃতাহুতির দিয়েছে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য। সোমবার দিলীপ বলেন, “সৌরভ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। ভাল প্রশাসক হয়ে উঠুন।” সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন বারাবার বিজেপি নেতা-মন্ত্রীর মুখে ‘প্রশাসক’ শব্দটি উঠে আসছে তা নিয়েই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।
এদিন নিজমুখেই অনুরাগ জানিয়েছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কুড়ি বছরের বেশি সময়ের পরিচিতি। শুধু ‘খেলার ময়দানেই নয় আমি ওকে ব্যক্তিগতভাবেও চিনি’, দাবি প্রাক্তন বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের। এরপরই কেন্দ্রের এই শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, “জীবনে বহু চড়াই উতরাই দেখলেও সৌরভ কোনওদিন হারেননি। এবারও ও রোগকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন। দেশের সেবা করবেন।” কিন্তু ঠিক কী রকম দেশসেবা সৌরভের কাছ থেকে আশা করছেন মোদী মন্ত্রিসভার এই সদস্য? অনুরাগের জবাব, “ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিসিসিআই ও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলে ওঁর ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। সৌরভকে প্রথমে খেলার মাঠে, এখন বিসিসিআইয়ে এবং আগামী দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের সেবা করার আছে। উনি তা করবেন।”
আরও পড়ুন: জেইই অ্যাডভান্সডের দিন ঘোষণা ৭ জানুয়ারি, টুইট কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর
কিছুদিন আগেই সৌরভের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে তুঙ্গে উঠেছিল জল্পনা। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের রাজভবনে সৌরভের ঝটিকা সফর, পরদিন দিল্লি উড়ে যাওয়া, ফিরোজ শাহ কোটলায় অমিত শাহর সঙ্গে ‘বিশেষ সাক্ষাৎ’ সবকিছু কেমন যেন একই পংক্তিতে পর পর বসে যাচ্ছিল ঘটনাগুলি। এরইমধ্যে আবার গত ২৮ ডিসেম্বর TV9-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপি সাংসদ জন বার্লাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “কিছু একটা হতে চলেছে। আগামী ২-৩ দিনে পরিষ্কার হয়ে যাবে সৌরভজী কোন পদ পেতে চলেছেন। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। যেভাবে উনি খেলার মাঠে ছক্কা মেরে সবার মন জয় করে নিয়েছেন, সেই একই ছক্কা বিজেপি একুশে লাগাতে চলেছে সৌরভের নেতৃত্বে।”
সব মিলিয়ে সৌরভকে ঘিরে কেমন যেন একটা পদ্ম-গন্ধ আসছিল। এরইমধ্যে সৌরভ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হার্ট অ্যাটাকের পর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হয় মহারাজের। রবিবার হাসপাতালে তাঁকে দেখতে এসে অশোক ভট্টাচার্য নতুন করে উস্কে দেন জল্পনা। বারবার সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ওকে যেন কোনওরকম মানসিক চাপ না দেওয়া হয়। ও ক্রিকেটের মানুষ। সেখানেই ওর সাফল্য।” কী সেই চাপ? কেই বা সৌরভকে চাপ দিচ্ছেন? সেসব জবাব একদিকে যখন হাতড়ে চলেছেন ‘দাদা’র ভক্তরা, তখন একে একে উডল্যান্ডসে ভিড় জমাচ্ছেন উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, অনুরাগ ঠাকুর, জয় শাহরা। আলিপুরের হাসপাতাল এবং বেহালার বাড়িতে একাধিকবার ফোন এসেছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরও।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে মেরে তাড়ানোর নিদান তৃণমূলের মেয়র পারিষদের
বিসিসিআই-এর কর্তা সৌরভ। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। আসমুদ্র হিমাচলে ছড়িয়ে তাঁর অনুরাগী, শুভানুধ্যয়ীরা। দেশের সীমা পার করে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একইরকম জনপ্রিয় ‘বেহালার বাঁহাতি’। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা রাজ্যপাল খোঁজ নেবেন সেটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবে সৌরভ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ইস্তক রাজনৈতিক নেতাদের ভিড় নজরে পড়ছে তাতে নানা প্রশ্ন চারপাশে ঘুরছে। ‘সৌরভ যে শুধু বাংলার নন, গোটা ভারতের’ তা অনুরাগ ঠাকুরের না বললেও চলত। কিন্তু এদিন একাধিকবার সে কথাই বলেছেন তিনি। ‘চড়াই উতরাই’ পেরিয়ে সৌরভ আগামিদিনে কীভাবে ‘প্রশাসক’ হিসাবে ধরা দেন, এখন সেটাই দেখার। খেলার বাইরে গিয়ে আর কোন ‘ক্ষেত্রে’ তিনি দেশের সেবা করেন, আপাতত রাজনৈতিক মহলের চোখ সেদিকেই।