“সংসদ তৈরির টাকা কৃষকদের দিতে পারত”, কেন্দ্রকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর
রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। তিনি বলেন,"আপনাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথের ছবি গলায় ঝুলিয়ে বলুন 'আমরা লজ্জিত'।
কলকাতা: দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত সভায় যান তিনি। সভায় গিয়ে বিজেপি (BJP)-র দিকে একের পর এক আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর অবধি আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করলেন তিনি। নতুন কৃষি আইন (Farm Laws) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি স্লোগান তোলেন, “কালা কৃষি বিল বাতিল করুক। দাঙ্গাবাজের সরকার, আর নেই দরকার। কৃষি বিরোধী সরকার, আর নেই দরকার।” বিজেপি আজকের সভা করতে দিতে চায় না, এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”আজকের কৃষি আন্দোলন যাতে না জমে, তারজন্য নৌটঙ্কি নৌটঙ্কি খেলছে বিজেপি।”
কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “কৃষকদের নিয়ে কালোবাজারি করছে কেন্দ্র। আগামী দিনে দেখবেন আলু পেঁয়াজ খেতে পাবেন না। মুলোও খেতে পাবেন না। একদিন সকালে উঠে দেখবেন আপনার জমি থেকে অন্য কেউ এসে ফসল তুলছে।”
বাংলার কৃষকদেরও কেন্দ্রের বঞ্চনার মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন “বাংলার কৃষকদের সঙ্গে বঞ্চনা করছে কেন্দ্র। বাংলার কৃষক যাতে কম পয়সায় ফসল বিক্রি করে তার জন্য বাংলার কৃষকদের থেকে মাত্র ৭০ লক্ষ টন ধান কেনে কেন্দ্র।” রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”আমরা কৃষকদের থেকে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। বিনামূল্যে কৃষকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা করাই আমরা। প্রতিবছর ৭০০ কোটি টাকা খরচ করা হয় বিমার জন্য।”
রাজ্যের কৃষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,” রাজ্যের কৃষকবন্ধু কষ্ট পাক, তা আমি চাই না। আপনাদের বলছি রাজ্যের সব জায়গায় দুয়ারে সরকার হচ্ছে। সেখানে যান, নিজের পরিবারের সকলের নাম, ফোন নম্বর নথিভুক্ত করে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম লেখান।”
আরও পড়ুন: বিপক্ষকে পিষে মারার ভাবনাকেই পিষে ফেলতে হবে: নাড্ডা
নতুন সংসদ (New Parliament) ভবন তৈরি নিয়েও কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন,”নতুন সংসদভবনের দরকার নেই। ওই টাকা কৃষকদের দিতে পারত। কেন্দ্র কোনও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানছে না। মোদী সরকার গণতন্ত্র মানছে না।” সরকারের একাধিক পরিচয়পত্র তৈরি করা নিয়ে বলেন, “একের পর এক কার্ড আনছে। এখন আবার বলছে, ওয়ান নেশন, ওয়ান কার্ড। ওরা চায় কেবল বিজেপি থাকবে, আর কেউ না।”
বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, এই অভিযোগ তুলে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী হিটলারের সঙ্গে তুলনা টানেন। তিনি বলেন,”ওরা একটা অন্য হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা করছে। হিটলারও তাই করেছিল। বাংলায় বসে বাংলারই নিন্দা করছে, নতুন হিন্দু ধর্মের আমদানি করছে।” কেন্দ্র রাজ্যের জন্য কিছুই করেনি, এই অভিযোগ তুলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার জন্য কিছুই করেননি আপনারা। কেবল মিথ্যা কথাই বলেছেন।”
একইসঙ্গে বিজেপি প্রেসিডেন্ট জে পি নাড্ডা (J P Nadda)-র রাজ্য সফরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “জনসংযোগ করছে, জনগণ থাকলে তো করবে!” বিজেপি প্রেসিডেন্টের কনভয়ে হামলা নিয়ে রাজ্য পুলিসকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন,”ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে গাড্ডায় পড়েছে নাড্ডা। সাজানো লোকজন দাঁড় করিয়ে রাখে, যাতে জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে দেখাতে পায় যে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। তোমরা আস, অথচ একবারও রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রয়োজন মনে কর না। ৫০টা গাড়ির কনভয় নিয়ে গেলে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। এত গাড়ি, তার উপর আবার বাইকের কনভয়। আমার তো এত কনভয়ের দরকার পড়ে না। সত্যিই হামলা হয়েছে নাকি পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে, জানি না। সিকিউরিটিগুলো কালো জামা পড়ে, বড় বড় বন্দুক নিয়ে ঘোরে, তারা কী করছিল?”
দিল্লি সফরে গেলে তাঁকেও প্রতিবার বিপাকে পড়তে হয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা দিল্লি গেলে কী কর, তা ভুলে গেছ? যতবার দিল্লি যাই, প্রত্যেকবার ঝামেলা করা হয়।” নাড্ডার নাম না করে কটাক্ষ করে বলেন, “তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”
রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। তিনি বলেন,”আপনাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথের ছবি গলায় ঝুলিয়ে বলুন ‘আমরা লজ্জিত’।”
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর জায়গায় দলীয় কোনও নেতা নন, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের মাথায় জেলাশাসক