বিপক্ষকে পিষে মারার ভাবনাকেই পিষে ফেলতে হবে: নাড্ডা

শুরুতেই জেপি নাড্ডা বলেন, "ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি দেরি হওয়ার জন্য। আসলে সভায় আসার আগে আমাকে ওঁরা যেভাবে অপ্য়ায়ন করল, তাতেই দেরি হয়ে গেল।"

বিপক্ষকে পিষে মারার ভাবনাকেই পিষে ফেলতে হবে: নাড্ডা
সভামঞ্চে নাড্ডা
Follow Us:
| Updated on: Dec 10, 2020 | 5:38 PM

ডায়মন্ড হারবার: সভাস্থল তখনও বেশ কিছুটা দূরে। আচমকাই তাঁর কনভয় ঘিরে কয়েকশো উন্মত্ত যুবকের তাণ্ডব। শুরু হয় ইটবৃষ্টি । কালো পতাকা উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ-স্লোগান। এ সবের মাঝে শেষমেশ তৃণমূল সাংসদ অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের সভাস্থলে পৌঁছন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সভার তাত্ক্ষণিক বক্তৃতার পরই মঞ্চে ওঠেন জেপি নাড্ডা (J P Nadda) । তখন স্লোগানে মুখরিত এলাকা।

শুরুতেই জেপি নাড্ডা বলেন, “ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি দেরি হওয়ার জন্য। আসলে সভায় আসার আগে আমাকে ওঁরা যেভাবে অপ্য়ায়ন করল, তাতেই দেরি হয়ে গেল।” বলেন, “মা দুর্গার কৃপায় আমি আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি।” কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রসিকতায় উত্তেজনার আবহ কাটিয়ে সভাস্থলে তখন কিছুটা হালকা মেজাজ। শুরু থেকেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান নাড্ডা।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, “আসার সময় যে দৃশ্য দেখলাম তাতে পরিষ্কার মমতাজীর শাসনে বাংলা অরাজকতা ও অসহিষ্ণুতায় ভুগছে। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের সব চেষ্টা করেছে তৃণমূলের গুন্ডারা। মমতাজীর সরকার যাবে, পদ্মফুটবে।” না থেমেই বলতে থাকেন, “জঙ্গলরাজ আমরা এমনি এমনি বলি না। আমাদের নেতাদের গাড়িগুলির কী অবস্থা দেখুন! একটিও গাড়ি হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে।”

ঘটনাপ্রসঙ্গে বলতে হয়, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, কালো পতাকা বুধবারও দেখানো হয়েছিল তাঁকে। হেস্টিংসে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন নাড্ডা। বৃহস্পতিবার অভিষেক-গড়ে এমনই পরিস্থিত তৈরি হতে পারে, এমন অনুমান করেই আগেভাগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নাড্ডার নিরাপত্তার বিষয়ে চিঠি লিখেছিলেন দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রিপোর্টও তলব করেছে।

এদিনের নাড্ডার কনভয়ের সঙ্গে ছিল পুলিস বাহিনী। ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্তারাও। তাঁদেরই সামনে নিমেশের মধ্যে কোথা থেকে জড়ো হয়ে যান কয়েকশো উন্মত্ত যুবক। অভিযোগ, লাঠিসোঁটা উঁচিতেই দাপাদাপি করতে থাকে তারা। নাড্ডা ছিলেন গাড়ির ভিতর। তাঁর গাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

এই নিয়ে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় ইতিমধ্যেই বলেছেন, “কী দরকার ছিল বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতিকে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে সভা করানোর? এটা তো এক ধরনের প্ররোচনা। এমন প্ররোচনা থাকলে অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।” তবে সৌগত রায়ের এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার আগেই কাকতালীয়ভাবে এই বিষয়ে সভাস্থল থেকে নাড্ডা বলেছেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করছে, এটা অসহিষ্ণুতার রাজ্য। আইনশৃঙ্খলাহীনতার রাজ্য। বিপক্ষকে পিষে মারার এই ভাবনাকেই পিষে ফেলতে হবে। গুণ্ডারাজ দমন করতে হবে।” সভাস্থলে যখন নাড্ডা এসব বলছেন, হাততালি আর স্লোগানের সুর চড়ছে তত।

প্রত্যাশিতভাবেই অভিষেক গড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিঁধতে ছাড়লেন না নাড্ডা। তাঁর কটাক্ষ, “বিখ্যাত সাংসদ জ্যোতির্ময় বসুর কেন্দ্র এই ডায়মন্ডহারবার। এখনকার সাংসদকে সংসদে দেখাই যায় না। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কোথাও আইনশৃঙ্খলা নেই। ডায়মন্ড হারবার থেকেও আমরা পদ্ম ফোটাব ”

বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নাড্ডা। যে বাংলা সংস্কৃতি, বাঙালিয়ানা প্রসঙ্গে সবসময় বিজেপিকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই প্রসঙ্গ টেনেই নাড্ডা বলেন, “মমতাজী বাংলাকে নিচে নিয়ে আসার কাজ করে যাচ্ছেন। তুইতোকারির ভাষা কি রবীন্দ্রনাথ-অরবিন্দ শিখিয়েছেন? সভ্যতার জননী বাংলা, মমতাজীর রাজত্বে নিচে নেমেছে।”

পুরনো ‘বাণ’ দুর্নীতি ইস্যুতেই খোঁচা দিলেন মমতা-সরকারকে। আমফান দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে ‘চাল চোর, ত্রিপল চোর’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। আমফানে ১ হাজার কোটি টাকা আগাম দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই টাকা রাজ্য সরকার খরচ করতে পারেনি, দুর্নীতি হয়েছে। হাইকোর্ট CAG অডিট করতে বললে মমতা সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। দুর্নীতি করেছেন বলেই তো ভয় পাচ্ছেন।”

আরও পড়ুন: ‘নাড্ডার কিছু হয়নি’, টুইট করে হামলার কথা স্বীকার রাজ্য পুলিসের

খুব বেশি হলে মিনিট কুড়ি। দ্রুত বক্তৃতা শেষ করেন নাড্ডা। সভাও শেষ হয়ে যায়। এদিন সভা শেষে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনে মধ্যাহ্নভোজ করতে যান তিনি। তবে এদিনের নাড্ডার সভার প্রাক ও পরবর্তী মুহূর্ত বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে যায় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।