‘নাড্ডার কিছু হয়নি’, টুইট করে হামলার কথা স্বীকার রাজ্য পুলিসের
আহত হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ভাঙচুরের মুখে পড়েছে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র গাড়িও।
ডায়মন্ডহারবার: বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার (J P Nadda) সভার আগে তুমুল অশান্তি ডায়মন্ডহারবারে। আহত হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ভাঙচুরের মুখে পড়েছে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র গাড়িও। বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা এলাকার এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। শেষ পর্যন্ত সভায় যোগ দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এদিন গণ্ডগোল তীব্র আকার নেওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরলেও নাড্ডা আসলে ভয় পেয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বিজয়বর্গীয় বলেন, “এটা জঘন্য অপরাধ। মুকুলদার লেগেছে, আমাদের বহু সমর্থকের লেগেছে। পুলিশের সামনে তৃণমূলের গুণ্ডারা অরাজকতা চালিয়েছে। নাড্ডাজির গাড়ি বুলেটপ্রুফ ছিল তাই, আমার গাড়ি তো পুরোই ভেঙে দিয়েছে। আমাদের কর্মীরা গতকালই সতর্ক করেছিল, এখানে আজ গন্ডগোল হতে পারে। কেন্দ্রকে আমরা চিঠিও লিখেছিলাম। আজ বাড়তি সেন্ট্রাল ফোর্সও ছিল আমাদের সঙ্গে। কিন্তু গুণ্ডাদের তুলনায় সেই সংখ্যাটা অনেক কম। মিডিয়ার উপরেও হামলা হয়েছে। গাড়িকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে ইটবৃষ্টি চলছিল। ভাইপোর গুণ্ডারা পুলিশকে ভয় পায় না। পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে”।
এই ঘটনায় রাজ্য পুলিস হামলার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে। তবে পুলিসের বক্তব্য, জেপি নাড্ডার কোনও চোট লাগেনি। তিনি সুরক্ষিত ছিলেন। তবে ঘুরপথে হামলার কথা স্বীকার করে পুলিস কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ একপ্রকার মেনেই নিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Everyone is safe and situation is peaceful. Matter is being investigated to find out actual happenings. 2/2
— West Bengal Police (@WBPolice) December 10, 2020
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে টুইটে তিনি বলেন, “রাজ্যের শাসকদলের হার্মাদরা যা করল, তা অত্যন্ত নিন্দাজনক, অনভিপ্রেত।”
Concerned at alarming reports of anarchy and lawlessness @MamataOfficial indicating ruling party harmads on rampage at BJP President Convoy and political police @WBPolice in support.
This happening inspite of my alerts to CS & DGP early morning indicated collapse of law & order
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) December 10, 2020
এদিন সকাল থেকেই উত্তেজনার পরিবেশ ছিল ডায়মন্ডহারবারে। জে.পি. নাড্ডার কনভয় উস্থির শিরাকোল এলাকায় ঢুকতেই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশো যুবক হাতে ঝাণ্ডা, কালো পতাকা, লাঠি নিয়ে জেপি নাড্ডার কনভয়ের সামনে চলে আসে। প্রথমে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা, পরে কনভয় লক্ষ্য করে চলতে থাকে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি। প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বিজেপিকর্মী-সমর্থকরাও। মুহূর্তের মধ্যে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ইটের আঘাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে। যুযুধান দু’পক্ষকে সামাল দিতে তখন হিমশিম খাচ্ছেন পুলিসকর্তারা।
ঘটনায় পুলিস ও বিজেপি কার্যকর্তাদের বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচও ভেঙে যায়। গোটা ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তবে তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিন বিক্ষোভ চলে ডায়মন্ডহারবারের সরিষা ও স্টেশন মোড়েও। দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের গাড়ি আটকে কাচের ওপর ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন একদল ‘উন্মত্ত’ যুবক। এমনকি হামলা চলে কনভয়ের সঙ্গে থাকা সংবাদমাধ্যমের গাড়িতেও।
‘আর নয় অন্যায়’এর প্রচারে এদিন ডায়মন্ডহারবারে পূর্বনির্ধারিত সভা ছিল নাড্ডার। সেই উপলক্ষে সকাল থেকেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। আর পাল্লা দিয়ে গরম হচ্ছিল এলাকার আবহও। কলকাতা থেকে ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার রাস্তাগুলির প্রায় প্রতিটিতেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। কালো পতাকা হাতে বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর শিরাকোলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা ও জেলার তৃণমূল যুব সভাপতি সওকাত মোল্লার নেতৃত্বে চলে বিক্ষোভ।
সকালেই দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, ডায়মন্ডহারবারেই দলীয় পতাকা লাগানোর সময় বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেছে তৃণমূল। আহতরা ডায়মন্ডহারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি।
সকাল থেকেই ঝাণ্ডা হাতে প্রধান রাস্তাগুলিতে জড়ো হয়েছিলেন শয়ে শয়ে তৃণমূল কর্মী সমর্থক। সরিষার কাছে ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েন ও সামিম আহমেদের নেতৃত্বে চলে পথ অবরোধ। ডায়মন্ডহারবার শহরের জেটি ঘাটে ও রত্নেশ্বরপুরে তৃণমূল কর্মীরা পথ অবরোধ করেন। একই ভাবে বিক্ষোভ চলে রায়দিঘি রোডের মন্দিরবাজার ও হটুগঞ্জ বাস মোড়ে। প্রত্যেক জায়গাতেই আটকে পড়েন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। নাড্ডাকে আটকাতেই পরিকল্পনা মাফিক তৃণমূল রাস্তা অবরোধ করছে বলে বিজেপির অভিযোগ।
আরও পড়ুন: বিক্ষুব্ধ বৈশালী, তৃণমূল ছাড়ার ইঙ্গিত বালির বিধায়কের
উল্লেখ্য, নাড্ডার নিরাপত্তার গাফিলতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সূত্রের খবর, রাজ্যের কাছে ইতিমধ্যে তা নিয়ে রিপোর্টও তলব করেছেন শাহ। বলা বাহুল্য, ভোটের আগে নাড্ডার ডায়মন্ডহারবার সফর যে রাজনৈতিক দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিলই। কিন্তু, এদিনের অশান্তি ঘোটা ঘটনাক্রমে নয়া মাত্রা যোগ করল। এদিনের ঘটনার জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।