কলকাতা: কখনও একশোদিনের কাজ কখনও আবাস, বঞ্চনার অভিযোগ বনাম লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ। প্রাপ্য বনাম বরাদ্দ, কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত চলছেই। ভোটের মরসুম হোক বা এমনি সময়, কখনও সুর চড়াচ্ছেন পদ্ম নেতারা, কখনও পাল্টা দিচ্ছে ঘাসফুল ব্রিগেড। এমতাবস্থায় এবার শিক্ষাতেও কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ। বঞ্চনার রেশ রাজ্যের স্কুলেও। ভাঁড়ারের অবস্থা এমনই যে চক-ডাস্টার কিনতে গিয়েও চাপে পড়তে হচ্ছে স্কুলগুলিকে। আর এই অভিযোগকে হাতিয়ার করেই মমতার সরকারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো রাস্তা আরও প্রশস্ত হল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের। কিন্তু, আসলে ঘটেছে ঠিক কী? সোজা কথায়, স্কুলের দৈনন্দিন খরচের টাকা দিতে অপারগ সরকার!
সূত্রের খবর, নতুন শিক্ষাবর্ষের ১০ মাস কেটে গেলেও স্কুলে এল না কম্পোজিট গ্রান্টের এক টাকাও। তাতেই বাড়ছে উদ্বেগ। চক ডাস্টার কেনা হবে কী দিয়ে? প্রশ্ন প্রধান শিক্ষকদের। কেন টাকা পাঠাচ্ছে সরকার? প্রশ্ন ঘুরছে শিক্ষা মহলের অন্দরে। বছরের শুরুতে যে টাকা আসার কথা বছর শেষেও দেখা নেই। এদিকে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি থেকে শুরু করে হাইস্কুল, সকলেই রাজ্যের কাছ থেকে একটা ফান্ড পায়। প্রাইমারির ক্ষেত্রে অঙ্কটা ২৫ হাজার, আপার প্রাইমারির ক্ষেত্রে অঙ্কটা ৫০ হাজার, হাইস্কুলকে রাজ্য দেয় ৭৫ হাজার টাকা। কম্পোজিট গ্রান্টে এই টাকা দেয় রাজ্য। এই টাকাতেই স্কুলগুলিতে চক-ডাস্টার কেনা থেকে বিদ্যুতের বিল মেটানোর মতো কাজ করা হয়। সোজা কথায় এই টাকাতেই মেটে স্কুলগুলির প্রাথমিক চাহিদা। কিন্তু এবার ১০ মাস কেটে গেলেও স্কুলগুলি সেই ফান্ড পায়নি বলে অভিযোগ উঠছে।
বাড়ছে ক্ষোভ
শিক্ষক সংগঠনের নেতা চন্দন মাইতি বলেন, “ট্যাব গ্রান্টের টাকা পেল ১৬ লক্ষ পড়ুয়া। দুর্গাপুজোর জন্য কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ হল। কিন্তু, স্কুল পরিচালনের জন্য আমাদের প্রাপ্য টাকা আসছে না।” না আসায় যে বিপাকে পড়েছেন তা মানছেন প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজাও। তিনিও বলছেন একই কথা। খানিক হতাশার সুরেই বলছেন, “কেন আসছে না জানি না। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে খুবই।”
কী বলছে বিকাশ ভবন?
এদিকে বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১২০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। একইসঙ্গে সর্ব শিক্ষা অভিযানের টাকাও না আসা নিয়েও তৈরি হয়েছে সমস্যা। যা দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারে তরফে, তা আসছে না বলে বিকাশ ভবন সূত্রে খবর। রাজ্যের ভাগে যা পড়ে তা কেন পাচ্ছে না স্কুলগুলি? এই প্রশ্নও ঘুরছে শিক্ষামহলে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলছেন, “এই টাকা অবিলম্বে কেন্দ্রের দিয়ে দেওয়া উচিত। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, এটা নিন্দনীয়।” অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার আবার বলছেন, “আমি স্পষ্ট বলেছি সর্বশিক্ষা মিশনের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি যাঁরা মানবে না তাঁরা সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা পাবে না। রাজ্য সরকার এনইপি-তে ঢুকবে না বলেছে। আগে ওরা শর্ত মানুক, তখন ঠিক টাকা পাবে।”