CPIM: দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বোর্ড গঠনকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সিপিএমের, কতটা কার্যকর হচ্ছে জেলাস্তরে?

CPIM: কোথাও উঠেছে বিজেপির সমর্থনে তৃণমূলের বোর্ড গঠনের অভিযোগ। আবার কোথাও উঠেছে বামেদের সমর্থনে বিজেপির বোর্ড গঠনের অভিযোগ। বামেদের মতো একটি দল, যারা সর্বক্ষণ নিজেদের সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ে গর্ব করে, তাদের কাছে এমন অভিযোগ বেশ বিড়ম্বনারই বটে।

CPIM: দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বোর্ড গঠনকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সিপিএমের, কতটা কার্যকর হচ্ছে জেলাস্তরে?
সিপিএমImage Credit source: টিভি নাইন বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2023 | 9:38 PM

কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর বোর্ড গঠন ঘিরে একেবারে জগাখিচুড়ি কাণ্ড দেখা গিয়েছে জেলায় জেলায়। কে কোথায় কাকে সমর্থন দিচ্ছে, হিসেব কষতে গেলে নাজেহাল অবস্থা হওয়ার জোগাড়। কোথাও উঠেছে বিজেপির সমর্থনে তৃণমূলের বোর্ড গঠনের অভিযোগ। আবার কোথাও উঠেছে বামেদের সমর্থনে বিজেপির বোর্ড গঠনের অভিযোগ। বামেদের মতো একটি দল, যারা সর্বক্ষণ নিজেদের সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ে গর্ব করে, তাদের কাছে এমন অভিযোগ বেশ বিড়ম্বনারই বটে। আর শুধু তো নীচুতলার অভিযোগ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী সবাই এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন। মমতা যেমন বলেই দিয়েছেন, ইন্ডিয়ার দুই শরিক দল সিপিএম ও কংগ্রেস বাংলায় বিজেপির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বলছেন, সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের কোনও বন্ধুত্ব নেই। তবে কোথাও কোথাও কিছু সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।

এমন বিড়ম্বনার মধ্যে কড়া অবস্থানের পথে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। সুজন চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সিপিএমের দলগত অবস্থানের কথা। বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে সম দূরত্ব। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে সব সদস্যরা বিজেপি বা তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু পঞ্চায়তে স্তরের রাজনীতি, যেখানে স্থানীয় ইস্য়ু, স্থানীয় দাবি-দাওয়া বরাবর বেশি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে, সেখানে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের এই অবস্থান কতটা কার্যকর হচ্ছে জেলাস্তরে? যেসব জেলাগুলি থেকে এই ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে, সেখানে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করল টিভি নাইন বাংলা।

প্রথমেই আসা যাক নদিয়ার কথায়। সেখানে রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি আর সিপিএম মিলেমিশে বোর্ড গঠনের অভিযোগ উঠেছে। ২২ আসনের পঞ্চায়েতে ১৩টি আসন জিতে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পরবর্তীতে বিজেপি ও সিপিএম মিলেমিশে সেখানে বোর্ড তৈরি করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল নদিয়া জেলার সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানালেন, রুইপুকুরে দুইজনকে ইতিমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু রুইপুকুর নয়, আরও কিছু জায়গায় বোর্ড গঠনে দলীয় নির্দেশ অমান্য হওয়ার কথা মেনে নিচ্ছেন তিনি। যেখানে যেখানে এমন কাজ হয়েছে, সেই সব জায়গায় অভিযুক্তদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বলছেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ তো গেল নদিয়ার কথা, বোর্ড গঠন ঘিরে দলীয় নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ একাধিক জেলায়। যেমন বাঁকুড়ার বৃন্দাবনপুর, পুরুলিয়ার ধানারা, পূর্ব মেদিনীপুরের অমৃতবেড়িয়া… উদাহরণ এমন অনেক রয়েছে। সেই সব জায়গায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সিপিএম নেতৃত্ব? যোগাযোগ করা হয়েছিল বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এরিয়া কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘বৃন্দাবনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে বিজেপিকে সমর্থন করা সিপিএম-র জয়ী প্রার্থী পরেশ লোহার দলের সদস্য নয়। তারপরও এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই প্রার্থী এবং তাঁকে একাজে মদত দেওয়া দলীয় কর্মীদের চিহ্নিত করে দলীয় সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘পুরুলিয়াতেও এই নীতিই মেনে চলা হবে। তবে সবার আগে দেখা হবে কোথায় কী পরিস্থিতিতে স্থানীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব কিছু খতিয়ে দেখতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেবে দল।’ এ প্রসঙ্গে দলীয় সংবিধানের কথাও বলেন তিনি। সেই মোতাবেক শাস্তি দেওয়া হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে যাঁরা পঞ্চায়েতে সদস্য রয়েছেন, তাঁদের কাছে বিস্তৃতভাবে সব তথ্য নেওয়া হবে।’

সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলছেন, ‘আগামিকাল সম্পাদকমণ্ডলীর সভা রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। রাজ্য কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে, সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরও মানতে হবে।’ তবে এক্ষেত্রে কার দোষ গুরু আর কার দোষ লঘু, তাও বিচার করা হবে বলে জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, যিনি প্রত্যক্ষভাবে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে একরকম পদক্ষেপ, আবার যিনি পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে অন্যরকম পদক্ষেপ করা হবে। কার ত্রুটি কতটা, তার উপর নির্ভর করে পদক্ষেপ করা হবে, এমনই বলছেন নিরঞ্জন সিহি।

রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, কোথায় কে কাকে সমর্থন দিয়েছে বোর্ড গঠনের ভোটাভুটিতে, তা সবক্ষেত্রে প্রকাশ্যে আসার কথা নয়। আবার অনেক জায়গাতেই যদি কেউ ভোটদানে বিরত থাকাতেও অন্য কোনও দলের সুবিধা হয়ে থাকতে পারে। তাই বিষয়টি জেলাস্তরে সব জায়গায় কার্যকর করা বামেদের ক্ষেত্রে কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনীতিকদের একাংশ।