কলকাতা: ৩৪ বছর রাজ্যের মসনদে ছিল তারা। মসনদ-চ্যুত হওয়ার পর কেটেছে মাত্র ১৩ বছর। আর এই ১৩ বছরেই বাংলায় ‘শূন্য’ সিপিএম। বিধানসভায় এখন তাদের কোনও প্রতিনিধি নেই। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও এ রাজ্যে লাল আবির ওড়েনি। তবে অনেক আশা ছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটও হয়েছিল। প্রার্থী তালিকায় প্রবীণ-নবীনের মেলবন্ধন ছিল। তার পরও ‘শূন্য’ হাত। তাই, এবার ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনায় সাধারণ মানুষের মন বুঝতে উদ্যোগী হল সিপিএম। ইমেলে নিজেদের মতামত জানানোর জন্য সাধারণ মানুষকে আবেদন জানাল।
চব্বিশের নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। প্রার্থী তালিকায় সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমের মতো যেমন বর্ষীয়ান নেতারা ছিলেন, তেমনই সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নবীন মুখ ছিল। কিন্তু, ভোটের বাক্সে বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি সিপিএম। ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২ জনের জামানত রক্ষা হয়েছে। সেই ২ জন হলেন সুজন চক্রবর্তী এবং মহম্মদ সেলিম। বাকি ২১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কোনও লোকসভা আসনে প্রদত্ত ভোটের এক-ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ ছয় ভাগের এক ভাগ ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামানত রক্ষা হবে। সেলিম, সুজন ছাড়া বাকিরা কেউ সেই সংখ্যক ভোট পাননি।
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল বারবার বামেদের কটাক্ষ করে বলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বামেদের যতটা দেখা যায়, ভোট বাক্সে ততটা দেখা যায় না। চলতি বছরের শুরুতে ব্রিগেডে বামেদের সভায় উপচে পড়েছিল ভিড়। কিন্তু, ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এর কারণ কী? তারই অনুসন্ধানে নেমে মানুষের মন বুঝতে চাইছে সিপিএম। নির্বাচনী পর্যালোচনায় তাঁদের মতামত জানাতে ইমেল করার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ইমেল আইডি হল writetocpimwb@gmail.com। সবার মতামত গোপন রাখা হবে জানিয়ে সিপিএমের বার্তা, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনার মতামত জানান। বামমনস্ক নন, এমন মানুষও নিজের মতামত জানাতে পারেন বলে সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছে।
হঠাৎ দলের ভোট পর্যালোচনায় সাধারণ মানুষের মতামত কেন প্রয়োজন হচ্ছে সিপিএমের?
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের যুক্তি, “সিপিএমের নির্বাচনী পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ বিভিন্নভাবে করা হবে। একটি দল ও সংগঠন করবে। যা জেলা, রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত হবে। তা ছাড়াও যাঁরা দল করেন না, কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকেন, সহযোগিতা করেন, তাঁদের মতামত, আলোচনা-সমালোচনা , পরামর্শ শুনব। আবার যাঁরা কাছাকাছি থেকে ভোটটা দেখছেন, নিজেরা রাজনীতি না করলেও মত দিয়ে থাকেন কিংবা অন্য রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁদের মতও নেওয়া হবে। কথা শুনব। এই সব ভাবে যে তথ্যগুলো উঠে আসবে তার উপরে ভিত্তি করে আগামী দিনের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ করা হবে।”
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা হারায় বামেরা। তারপর ২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামেদের শক্তি কমেছে। কিন্তু, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে কোনও আসন পায়নি সিপিএম। সেই ধারাই দেখতে পাওয়া যায় ২০২১ সালের বিধানসভা এবং সদ্য সমাপ্ত চব্বিশের লোকসভা ভোটে। এবার মানুষের মতামত শুনতে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা বলছেন সেলিমরা। তাতে কি বাংলায় লালের হাল ফিরবে? উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতের গর্ভে।