কলকাতা: ঢাকে সদ্য কাঠি পড়েছে। ষষ্ঠীর গভীর রাতে আচমকা কাঁকুড়গাছির অভিজিত্ সরকারের পুজোতে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনায়, কাঁকুড়গাছি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন নিহত বিজেপি (BJP) কর্মীর পরিবার।
অভিজিতের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে মোটরবাইকে কয়েকজন দুষ্কৃতী লাঠি-রড নিয়ে এসে হামলা চালায়। মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকী, মণ্ডপে রাখা চেয়ারটেবিল উল্টে দেওয়া হয়। অভিজিতের পরিবারের আরও অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অভিজিতের পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের খোঁজ করা হচ্ছে। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গোটা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ঘটনায় শাসক ও বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসায় নিহত কাঁকুড়গাছির অভিজিত্ সরকার গত বছর থেকেই নিজের পাড়ায়, নিজের উদ্যোগে দশভূজার আরাধনা শুরু করেছিলেন। যেহেতু একবার দুর্গাপুজো করলে পরপর তিনবার পুজো করার রীতি রয়েছে, তাই এই বছরের পুজোর প্রস্তুতি এবং আয়োজনও আগের বছর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ‘গণতন্ত্রের উত্সব’ এসে তছনছ করে দিল সরকার পরিবারকে। সেই ‘উত্সব’ মেটার পর দিয়েই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হতে হয় অভিজিত্কে।
মৃত্যুর পরও অবশ্য ন্যায় বা শান্তি, এখনও কোনওটাই পায়নি অভিজিতের পরিবার। কারণ প্রথমদিকে পুলিশি সহযোগিতা মেলেনি। উল্টে জোর করে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার অভিযোগ ওঠে পুলিশেরই বিরুদ্ধে। শেষমেশ হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন অভিজিতের পরিবার।
তবে কাঁকুড়গাছির এই বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে খুন করার পর থেকেই একটা প্রশ্ন বারবার উঠেছিল, এ বার কি আদৌ সে পাড়ায় পুজো হবে? যিনি পুজোর সূচনা করেছিলেন, তিনিই আর নেই। তাঁর অনুপস্থিতিতে কি আবার মা দুর্গাকে বরণ করার মতো মনে জোর থাকবে সরকার পরিবারের? অবেশেষে সেই প্রশ্নের জবাব মিলেছে।
না, অভিজিতের দাদা বিশ্বজিত্ সরকার নিজের ভাইয়ের হাতে শুরু হওয়া পুজো বন্ধ হতে দিচ্ছেন না। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে ১৩০ দিন পর তাঁর দেহাবশেষ হাতে পেয়েছে পরিবার। শ্রাদ্ধের কাজ হয়েছে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে অভিজিতের পুজোর দ্বিতীয় বছরের কাজ।
গত বছর অভিজিতের বাড়ির পাশের স্টুডিয়োতেই তৈরি হয়েছিল প্রতিমা। তবে এ বছর আর তেমনটা হচ্ছে না। অভিজিতের পুজোর প্রতিমা তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলিতে। গত বছরের ন্যায়ে এ বছরও অভিজিতের পছন্দের এক চালার ঠাকুর তৈরি হচ্ছে। বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গাতেই পুজো হবে। পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ ও মা। পরিবারের বক্তব্য, অভিজিৎ এই পুজো শুরু করেছিল। এ বার ওঁর স্মৃতিতেই পুজো হবে।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ‘পুজোটা রাজনীতির আখড়া নয়’, দমদম পার্কের ‘বিতর্কিত’ থিমে তোপ দিলীপের