Job Seekers Protest: বিকাশের উপর গোঁসা চাকরিপ্রার্থীদের, কোথায় দ্বন্দ্ব? কী বলছেন ফিরদৌস?

Bikash Ranjan Bhattacharya: বিকাশবাবু বলছেন, "আমরা এখনও পাশে আছি। আমরা একটি কারণের জন্য পাশে ছিলাম, সেই কারণটির জন্য আমরা এখনও পাশে আছি। ওরা নিজেরা ভুল বুঝছে, আমাদের কিছু করার নেই।"

Job Seekers Protest: বিকাশের উপর গোঁসা চাকরিপ্রার্থীদের, কোথায় দ্বন্দ্ব? কী বলছেন ফিরদৌস?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 21, 2022 | 10:22 PM

কলকাতা: চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা লড়ে যাচ্ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharya)। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের শেষে কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা বিষয়ক চাকরিপ্রার্থী কাউন্সেলিং-এর দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছিল। কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ১৬০০ সুপার নিউমারারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ফের একটি নতুন মামলার কারণে তাতে স্থগিতাদেশ পড়ে যায়। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে দাবি করেন, আইন ভেঙে এই সুপার নিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হয়েছে। আর তাতেই বেশ বিরক্ত শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, “যখন নিজের মানুষই পিঠে ছোড়া মারেন, তখন খুব কষ্ট লাগে। আজ যে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আইনি লড়াই করে আমাদের প্যানেলভুক্ত করেছিলেন, তিনিই আমাদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছেন। এটা খুব কষ্টের ব্যাপার।”

যদিও বিকাশবাবু বলছেন, “আমরা এখনও পাশে আছি। আমরা একটি কারণের জন্য পাশে ছিলাম, সেই কারণটির জন্য আমরা এখনও পাশে আছি। ওরা নিজেরা ভুল বুঝছে, আমাদের কিছু করার নেই।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলছেন, “পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা তো দশ বছর ধরে সরকারের সবাই মিলে করে যাচ্ছে। তাঁরা যেন বিভ্রান্ত না হন। বিভ্রান্তি হলে নিজেদেরই অসুবিধা হবে। অন্য কাউকে অযথা দায়ী করার মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভুল জায়গা নিয়ে যাবেন না।”

চাকরিপ্রার্থী শম্পা মিস্ত্রি এদিন টিভি নাইন বাংলার হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে অনুষ্ঠানে এসে বলেন, “নিয়োগের স্বার্থে তদন্ত হচ্ছে, খুব ভাল কথা। আমরা দীর্ঘ ছয় বছর ধরে লড়াই করার পর, যাঁদের সঙ্গে পেয়ে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি, আজ যেন কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য রিকমেন্ডেশন পাওয়ার পরও নিয়োগ পেতে দেরি হচ্ছে। যাঁরা আমাদের বলেছেন, আমাদের দাবি ন্যায্য। আমাদের বঞ্চনা করা হচ্ছে। তাহলে আজ যখন আমাদের সঠিক পথ খুলে গিয়েছে, যখন আমরা চাকরি পাচ্ছি, তখন কেন এই স্থগিতাদেশ পড়ল? ছ’টি বছর আমাদের জীবন থেকে চলে গিয়েছে, বয়স চলে যাচ্ছে।” তাঁর দাবি, তদন্ত নিজের পথে চলুক, নিয়োগও নিজের পথে চলুক।

বিকাশবাবুর প্রসঙ্গে শম্পা বলেন, “২০১৯ সাল থেকে উনি আমাদের সঙ্গে আছেন। ওনার হাত ধরেই আমরা এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। স্যরকে একটাই অনুরোধ, আজ যখন আমাদের সঠিক পথ খুলে গিয়েছে, তখন কেন একটি স্থগিতাদেশ দিয়ে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে?”

আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভের বিষয়ে বলেছিলেন, “এটা আরও একটা দুর্নীতি। খুব বড় দুর্নীতি। সরকার এখানে এই ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের আবার ভাঁওতার মধ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” উল্লেখ্য, এসএসসির আইনে অতিরিক্ত শূন্যপদ বা সুপার নিউমেরারি বিষয়টির কোনও উল্লেখ নেই। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলও সেই কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। যদিও চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ২০১০ সালে এইভাবে কনস্টেবল পদে কিছুজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তামিলনাড়ু, জম্মু ও কাশ্মীর ও কেরলের উদাহরণও টেনে আনছেন তাঁরা। যদিও সেই সব ক্ষেত্রে, স্কুল থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক ছিল না। সেই কারণে সেখানে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল।

যদিও আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও বলছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন অতিরিক্ত পদ তৈরির উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে হলফনামা দিয়েছে। সেখানে তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যোগ্যদের জায়গা দেওয়া এবং যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ বাঁচানো। এখন প্রশ্ন হল, অবৈধভাবে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ বাঁচানোর জন্য কেন অতিরিক্ত পদ তৈরি হবে? যে ছেলেটি সাদা খাতা জমা দিল, তার নম্বর বাড়িয়ে ৫৫ করা হল। সেটি করল স্কুল সার্ভিস কমিশন। নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখার দায়িত্ব যার উপর ছিল, সে নিজেই বলছে, অতিরিক্ত পদ চাওয়ার কারণ এই ধরনের যে অবৈধ কাজকর্ম করা হয়েছে, তাতে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। তাহলে বিচার ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা রেখে কী লাভ?”

তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, রাজ্য সরকারই পারত এই সমস্যার সমাধান করতে। তিনি বলেন, “সরকার এখনও বলে যাচ্ছে নিয়ম বহির্ভূত চাকরি যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি যাবে না। এখানেই মূল প্রশ্ন। অযোগ্য, অবৈধভাবে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেক চাকরি যাবে এবং সেই জায়গায় যোগ্যরা চাকরি পাবে। এই কথা যদি বলত রাজ্য সরকার? এখনও পর্যন্ত একটিও বেআইনি নিয়োগ রাজ্য সরকার খুঁজে বের করেছে? আইনে উল্লেখ আছে, বেআইনি নিয়োগ বাতিল করা যায়। সেই বেআইনি নিয়োগ বাতিল করে যোগ্য প্রার্থীদের দিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটাও টু শব্দ করছেন না।”

তৃণমূল মুখপাত্র সুপ্রিয় চন্দ অবশ্য বলছেন, “এদের চাকরি নিয়ে একটি জটিলতা, গোলমাল দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। কাদের কারণে রয়েছে, কী কারণে রয়েছে, তা এখন বিচারাধীন। কিন্তু তবুও যে জায়গাগুলিতে সরকারের জায়গা থেকে ভুল, অপরাধ, দোষ দেখা গিয়েছে, সরকার সেগুলি সংশোধনের জন্য এক পা নয়, ৯৯ পা এগিয়ে রয়েছে। আমাদের দল সমস্যার সমাধান চায়।”