Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

EXPLAINED: এবার কি ‘মমতা ইজ INDIA, INDIA ইজ মমতা’?

EXPLAINED: দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে অরবিন্দ কেজরীবালের আপ। তেমনই দিল্লিতে কংগ্রেস এবারও একটি আসনও পায়নি। ফলে ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতারা বলছেন, ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া উচিত। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে শরিকরা কী বলছে? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন।

EXPLAINED: এবার কি 'মমতা ইজ INDIA, INDIA ইজ মমতা'?
ইন্ডিয়া জোট কি এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভর করে থাকবে?
Follow Us:
| Updated on: Feb 11, 2025 | 12:33 AM

কলকাতা: ধুমধাম করে আত্মপ্রকাশ। দেশের একাধিক শহরে বৈঠক। লোকসভা নির্বাচনের আগে হাতে হাত মেলায় বিরোধীরা। গড়ে ওঠে ইন্ডিয়া জোট। লোকসভা নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সেই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তেমনই ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব কার হাতে থাকা উচিত, তা নিয়ে নানা মত উঠে আসছে। দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের পর সেই আলোচনা আরও বেড়েছে। দিল্লিতে আপকে সমর্থন করেছিল তৃণমূল। সেই আপের পরাজয়ে কি ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বাড়ছে? মমতা ছাড়া কি ইন্ডিয়া জোটের আর গতি নেই? ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বের ব্যাটন কি তৃণমূল সুপ্রিমোর হাতে থাকা উচিত? তাঁকে ঘিরেই কি আবর্তিত হবে বিরোধীদের জোট? যুক্তি তুলে ধরছে তৃণমূল। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী? শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাটাছেঁড়া।

ইন্ডিয়া জোটের আত্মপ্রকাশ-

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের জুনে বিজেপির বিরোধিতায় জোট গড়ে বিরোধীরা। নাম দেয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স(ইন্ডিয়া)। সেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম দুই শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। আছে বামেরা। আছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। আছে শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা। রয়েছে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি। এছাড়াও একাধিক আঞ্চলিক দল।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন জেতে কংগ্রেস। তারা ৯৯টি আসন পায়। সমাজবাদী পার্টি পায় ৩৭টি আসন। আর ২৯টি আসন পেয়ে বিরোধী জোটে তৃতীয় স্থানে থাকে তৃণমূল। কিন্তু, কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির চেয়ে অনেক কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল।

দিল্লিতে নির্বাচনে আপের হারের পর ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়ে ফের আলোচনা শুরু-

লোকসভা নির্বাচনের পর ইন্ডিয়া জোটে ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টার অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কিন্তু, গত কয়েকমাসে একের পর এক রাজ্যে নির্বাচনে কংগ্রেসের হতাশাজনক ফলের পর বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এই নিয়ে সরব হয়।

দিল্লিতে নির্বাচনের পর ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব কার হাতে যাওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। ২৬ বছর পর দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি মসনদ হারিয়েছে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, পঞ্জাবে জয়ের পর আম আদমি পার্টি জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছিল। ফলে দিল্লি ধরে রাখতে পারলে ইন্ডিয়া জোটে আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবালের গুরুত্ব বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু, দিল্লিতে তাঁর দল হেরেছে। শুধু তাই নয়, কেজরীবাল নিজেই হেরে গিয়েছেন।

কেজরীবাল যেমন হেরেছেন, দিল্লিতে কংগ্রেস এবারও একটি আসনও পায়নি। ফলে ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতারা বলছেন, ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া উচিত। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, একসময় ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে কংগ্রেস নেতা ডিকে বডুয়া বলেছিলেন, “ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া ইজ ইন্ডিয়া।” প্রশ্ন উঠছে, এবার কি ইন্ডিয়া জোট মমতার উপর ভর করেই থাকবে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া জোটের মুখ করা নিয়ে কী বলছেন কুণাল ঘোষ?

দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেস পর্যুদস্ত হওয়ার পর শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইন্ডিয়া জোটের মুখ করা হোক। এই নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বললেন, “কল্যাণদা অত্যন্ত বর্ষীয়ান নেতা। তিনি যা বলছেন, তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন। তাঁর কথার উপর আমি আলাদা করে কোনও মন্তব্য করব না। কিন্তু, আমি এটা নিশ্চয় বলব, বাংলায় উন্নয়নের মডেল, রাজনীতির মডেল যে বিজেপির আগ্রাসনকে রুখে দিয়েছে, এটা প্রমাণিত। নেত্রী ও প্রশাসক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ। এখন তাঁর স্কিমগুলোকে অন্য রাজ্যে নির্বাচনী ইস্তাহারে রাজনৈতিক দলগুলিকে রাখতে হচ্ছে। সেই জায়গায় বিজেপিকে হারাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে মডেল, সেটা তো দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।”

এখানেই না থেমে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ বারের সাংসদ, একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। রেলমন্ত্রক সামলেছেন। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএম-কে আক্রমণ করে কুণাল বলেন, “একুশের নির্বাচন দেখুন। কিংবা ২০১৬ সালের নির্বাচন দেখুন। চব্বিশের লোকসভা দেখুন। কংগ্রেস ও সিপিএম মিলে জোট করে ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বাংলায় সেটা কাজ করেনি শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও উন্নয়নের সুফল। এখানে মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা তৃণমূলকেই সরাসরি সমর্থন করছেন। এই মডেলটা যদি দেখেন, দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চিতভাবে একজন বিরল ব্যক্তিত্ব। যিনি একা একটা বিকল্প মডেল দেশের সামনে পেশ করেছেন।” আর বছর খানেক পর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তৃণমূল আড়াইশোর বেশি আসন নিয়ে সরকার গড়বে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করলেন কুণাল। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ছাব্বিশের নির্বাচনের ভবিষ্যদ্বাণী করে কুণাল কার্যত স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, মমতা ছাড়া ইন্ডিয়া জোটে নেতৃত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।

কী বলছে বিজেপি?

দিল্লিতে আপের পরাজয়ে কি ইন্ডিয়া জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বাড়তে চলেছে? প্রশ্ন শুনে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “ইন্ডি জোট প্রথম থেকে ঘোঁট হয়ে রয়েছে। এদের না ছিল কোনও নীতি। না ছিল কোনও নেতা। কালক্রমে তা আপ্তবাক্যে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব নেই। সেখানে দিল্লিতে আপের পরাজয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বাড়া কিংবা না বাড়ার কোনও অর্থই হয় না। উল্টে ইন্ডি জোটে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য আঞ্চলিক দলগুলির দ্বন্দ্ব বাধলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব কমবে, বাড়বে না।”

ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কী বলছেন শরদ পাওয়ার, ওমর আবদুল্লা?

বিভিন্ন রাজ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা গিয়েছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলিকে। হরিয়ানায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়েছে আপ। আবার দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। নির্বাচনী প্রচারে পরস্পরকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন দুই দলের নেতারা। তাহলে ইন্ডিয়া জোটে থেকে কী লাভ? উঠছে প্রশ্ন। ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁর দল ন্যাশনাল কনফারেন্সও ইন্ডিয়া জোটের শরিক। দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের হারের পর দুই দলকে খোঁচা দেন তিনি। দিল্লিতে ফল ঘোষণার পর এক্স হ্যান্ডলে একটি জিআইএফ শেয়ার করেন ওমর আবদুল্লা। যেখানে বলা হচ্ছে, ‘জি ভরকে লড়ো। সমাপ্ত করদো এক দুসরে কো।’ সেই জিআইএফ শেয়ার করে ওমর আবদুল্লা লেখেন, “নিজেদের মধ্যে আরও লড়াই করো।”

তবে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে অন্য কথা বলছেন বর্ষীয়ান নেতা শরদ পাওয়ার। তাঁর বক্তব্য, শুধুমাত্র জাতীয় স্তরের নির্বাচনের জন্যই ইন্ডিয়া জোট। এনসিপি(এসপি) প্রধান বলেন, “ইন্ডিয়া জোটে কখনই রাজ্য ও পুর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি। শুধুমাত্র জাতীয়স্তরের নির্বাচনের জন্য ইন্ডিয়া জোট।” প্রশ্ন উঠছে, জাতীয়স্তরের নির্বাচনের জন্য ইন্ডিয়া জোট হলে লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে কেন লড়াই করেছিল শরিকরা? বাংলাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএম।

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ইন্ডিয়া জোটে লোকসভায় আসনের দিক থেকে কংগ্রেসের পরই রয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল। ছাব্বিশ সালে যেমন বাংলায় ভোট রয়েছে, তেমনই ২০২৭ সালে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেখানে কী ফল হয়, তার উপর ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে।