‘এত লুকোচুরি কেন?’ ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা বিচারপতির
খারিজ হয়ে গিয়েছে রাজ্যের আবেদন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে (National Human Rights Commission) অভিযোগ জমা পড়লেও রাজ্যে কেন নয়? সেই প্রশ্নই তুলেছেন বিচারপতি।
কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্টে ফের অস্বস্তি বাড়ল রাজ্যের। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশ পুনর্বিবেচনার যে আর্জি জানানো হয়েছিল, তা খারিজ হয়ে গেল আজ। সোমবার এই মামলার শুনানিতে রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল (Justice Rajesh Bindal)। কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর হয়নি? কেন রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনে কোনও অভিযোগ জমা পড়ল না? তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। সঠিক পথে তদন্ত হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে এই মামলায় এখনও কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়নি।বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশই আপাতত বহাল থাকবে।
সোমবার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে চল্ছে এই মামলার শুনানি। আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা তিব্রেওয়ালের করা এই মামলায় আগেও অস্বস্তির মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। ঘরছাড়াদের দ্রুত ফেরানোর বার্তা দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। এ বার রাজ্যের আর্জিও খারিজ হয়ে গেল হাইকোর্টে। গত ১৮ জুন হাইকোর্টে এই মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, যাতে এই সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা রাজ্যে এসে পরিস্থিতি দেখবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল। আজ, শুনানিতে সেই আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে।
বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এ দিন বলেন, ‘যে ভাবে তদন্ত হয়েছে সেটা সঠিক নয়।’ তদন্ত সম্পর্কে বিচারপতি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলায় এই রাজ্য স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে কিছু করেন নি। এইরকম সিরিয়াস কেসে কিছুই করেন নি। এত লুকোচুরি কেন? এর মানে আপনারা অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনছেন না।’
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ ও ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর আর্জি জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে। অথচ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। জার এই তথ্য সামনে আসতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে কেন একটিও অভিযোগ জমা পড়ল না? তবে কি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের ওপর আস্থা নেই এ রাজ্যের বাসিন্দাদের? পাশাপাশি ঘরছাড়া করার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে, পুলিশের এফআইআরে তাঁদের কোনও নাম নেই কেন? সেই প্রশ্নও তুলেছে হাইকোর্ট।
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছে আদালত। পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হচ্ছে। বিচারপতিদের দাবি, এই ধরনের অভিযোগ উঠলে রাজ্য চুপ করে বসে থাকতে পারে না। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যকে সহযোগিতা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতেই হাইকোর্টে পাল্টা হলফনামা দিয়েছিল রাজ্য সরকার।