বাংলায় কট্টর হিন্দুত্বের পথে বিজেপি? ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কি CAA-র ‘গ্রাউন্ড’ তৈরির ব্যবস্থা? বঙ্গে জোর জল্পনা

প্রশ্ন হচ্ছে, ২ কোটি ২৮ লক্ষের বেশি ভোট পাওয়ার পর বাংলায় বিজেপির নতুন কোনও লাইন হয় কিনা, তা দেখতে মরিয়া ছিলেন বিশ্লেষকরা।

বাংলায় কট্টর হিন্দুত্বের পথে বিজেপি? 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' কি CAA-র 'গ্রাউন্ড' তৈরির ব্যবস্থা? বঙ্গে জোর জল্পনা
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jun 21, 2021 | 1:19 PM

কলকাতা: বিজেপির (Bengal BJP) মোটা দাগে হিন্দুত্বের লাইন প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলার মানুষ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর তা কার্যত স্পষ্ট। মুখে জয় শ্রী রাম নিনাদ কমেছে, কিন্তু সেই হিন্দুত্ব তাসকেই কি ভবিষ্যৎ পন্থা হিসাবে আঁকড়ে ধরতে চাইছে গেরুয়া শিবির? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), অমিত মালব্য (Amit Malviya) -সহ বিজেপি নেতাদের একাধিক মন্তব্যে সে কথাই বারবার পরিস্কার হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

রবিবারই একটি টুইট করেন অমিত মালব্য। সেখানে তুলে ধরেন বাংলার অমুসলিম আধার-তত্ত্ব। বিতর্ক ছড়ায়। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ‘হিন্দু ভারতের’ পর এবার ‘হিন্দু বাংলা’ ভাবনা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বিজেপি? আর একই সঙ্গে বাংলায় সিএএ কার্যকর করার ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ও প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি দলীয় সূত্রে খবর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন বিজেপির মেরুদণ্ডই হিন্দুত্ব।বাংলার নির্বাচনে কার্যত ভরাডুবির পর রাজনৈতিক সচেতকরা মনে করেছিলেন, বিজেপি হয়তো নতুন কিছু রসদ দেওয়ার চেষ্টা করবে। পশ্চিমবঙ্গে একুশের নির্বাচনে বিজেপির তরফে যে চড়া হিন্দুত্বের স্লোগান ছিল, তা নিয়ে সংশয় নেই। যার নিট রেজাল্ট ২ কোটি ২৮ লক্ষের কিছু বেশি ভোট! কিন্তু প্রশ্ন ছিল, এর পর বাংলায় বিজেপির নতুন কোনও লাইন হয় কিনা! তা দেখতে মরিয়া ছিলেন বিশ্লেষকরাও।

দেখা যাচ্ছে, বাংলা লক্ষ্যে সনাতন পন্থাতেই এগোচ্ছে বিজেপি। ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দুত্বের আধারে তৈরি’, ‘পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ডতা শ্যামাপ্রসাদের দান’- এই সংক্রান্ত দাবি তুলে গত কয়েকদিনে ফের রাস্তায় নেমেছে বিজেপি। রাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিজেপি লিখিত আকারে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার চেষ্টা করছে। তবে এই প্রস্তাব এলে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়বে। সিএএ-ও হিন্দুত্ববাদী মানুষকে সন্তুষ্ট করার চাবিকাঠি। তিন-চারটি কারণ অনুধাবন করলেই বাংলার বিজেপি ‘তাস’ স্পষ্ট প্রতীয়মান মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজ্যে সিএএ কার্যকর করার পথে হাঁটছে বিজেপি। রাজ্য নেতৃত্বও এই নিয়ে সুর চড়িয়েছেন। বাংলায় দ্রুত সিএএ কার্যকর করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। তাতে বাংলার হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভাজন আরও বেশি করে প্রকট হবে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “বিজেপি চায় পশ্চিমবঙ্গে সিএএ কার্যকর করা হোক। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করলে দ্রুত আইন কার্যকর হবে। বাংলার বাঙালি হিন্দু আবার বিপন্ন। তাঁদের মান সম্মান, সম্পত্তি সুরক্ষিত নয়। প্রশাসক চুপ করে দেখছে। পশ্চিমবঙ্গ আবার বাংলাদেশ হতে চলেছে। আমরা চাই সিএএ কার্যকর হোক।”

‘হিন্দু বাংলা’- বিজেপির এই লক্ষ্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপি আসলে নিজের ভালটা বুঝতে পারছে না। হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে থাকবে, এটা বাংলার একটা দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। বিভাজন আনতে গিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বিজেপি। আজকে ওরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করছে। কারণ ওদের দাবি পশ্চিমবঙ্গ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তৈরি করেছেন। কিন্তু তাতে তো ভাগাভাগি হয়েছে। বাংলার অর্থনীতি-সামাজিক প্রেক্ষাপটের অনেক দিক আছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত। তা নিয়ে আন্দোলনের প্রয়োজন। ওটাই বিজেপির হাতিয়ার হলে শ্রেষ্ঠ হত।”

আরও পড়ুন: জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ অমিতাভ আচমকাই ফেরেন ২০১৭ তে! বাড়ির অ্যালবামের পুরনো ছবি কাটিয়েছে পরিচয়-ধোঁয়াশা

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলার মানুষ বিজেপিকে ত্যাগ করেছে। এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করছে। এটা ওদের বেঁচে থাকার চেষ্টা।” বিজেপির অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় টুইটে বলেছেন, “বিজেপির নেতারা যে ভাবে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ খুঁজছেন, তাতে হতবাক হয়ে যাচ্ছি। বাংলার জনতার রায় কিছুতেই মানতে পারছে না বিজেপি।”