Kolkata : পকেটে টান পড়তে চলেছে কলকাতাবাসীর, সম্পত্তি কর সংশোধনের সিদ্ধান্ত পুরনিগমের

Kolkata : ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টের সম্পত্তি কর নির্ধারণের কাঠামোর সংশোধনের সিদ্ধান্ত। শহরের নাগরিকদের সম্পত্তিকর বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

Kolkata  : পকেটে টান পড়তে চলেছে কলকাতাবাসীর, সম্পত্তি কর সংশোধনের সিদ্ধান্ত পুরনিগমের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 06, 2023 | 9:33 PM

কলকাতা : কলকাতা পুরনিগমের (Kolkata Municipality) অর্থনৈতিক অবস্থা তথৈবচ। বকেয়া সম্পত্তিকর আদায় করতে গিয়ে রীতিমত কাল ঘাম ছুটছে রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সম্পত্তিকর আদায় যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব বিভাগ। ওয়েভার স্কিম চালু করে কিছুটা মুখ রক্ষা হলেও, বাকি ক্ষেত্রে সম্পত্তিকরদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার জেরে বেকায়দায় পড়েছেন কলকাতা পুরনিগমের কর মূল্যায়ন বিভাগ এবং রাজস্ব বিভাগের কর্তা ও আধিকারিকরা। আর এই অবস্থায় ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট বা এলাকাভিত্তিক কর নির্ধারণ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত সম্পত্তিকর যাচাই করার কাঠামো পুনরায় সংশোধিত করে আরও নিখুঁত করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। সম্পত্তি কর নির্ধারণের কাঠামো পুনরায় সংশোধনের জেরে শহরের মানুষের সম্পত্তি কর আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। 

সূত্রের খবর, রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা বুধবার মেয়র পরিষদের বৈঠকে সম্পত্তিকর কাঠামোর পুনরায় সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দেন। বর্তমানে যে কাঠামো রয়েছে, তার জেরে সঠিকভাবে সম্পত্তি কর আদায় হচ্ছে না বলে মনে করছেন রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা। যে কারণেই নয়া এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার পর প্রস্তাবের ওপর সিলমোহর দেওয়া হয়। আর তাতেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে নতুন করে সম্পত্তি কর বৃদ্ধির। রাজস্ব বিভাগের নয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টের বিভিন্ন জোনে যে বেস প্রাইস রয়েছে, তা অনেকটাই বেড়ে যাবে। কলকাতা পুরনিগমের  ১৪৪ টি ওয়ার্ডকে “এ” থেকে “জি” মোট সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টে। মোট ৯ লক্ষ সম্পত্তি করদাতা রয়েছেন শহরে। এই সাতটি জোনের পৃথক পৃথক বেস প্রাইস রয়েছে। তার ওপরই নির্ধারিত হয় সম্পত্তিকর। 

কেমন হচ্ছে নতুন কর কাঠামো ? 

জোন এ – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ৭৪ টাকা। বেড়ে হবে ৮২ টাকা। 

জোন বি – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ৫৬ টাকা। বেড়ে হবে ৬২ টাকা। 

জোন সি – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ৪২ টাকা। বেড়ে হবে ৪৭ টাকা। 

জোন ডি – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ৩২ টাকা। বেড়ে হবে ৩৬ টাকা। 

জোন ই – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ২৪ টাকা। বেড়ে হবে ২৭ টাকা। 

জোন এফ – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ১৮ টাকা। বেড়ে হবে ২০ টাকা। 

জোন জি – রয়েছে প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী ১৩ টাকা। বেড়ে হবে ১৫ টাকা। 

কী বলছেন কলকাতা পুরনিগমের  অর্থ বিভাগের আধিকারিকরা? 

কলকাতা পুরনিগমের  অর্থ বিভাগের আধিকারিকদের কথায়, বেস প্রাইস যখনই বাড়বে, তখনই সম্পত্তিকর নিজে থেকেই বেড়ে যাবে। যদিও কর রাজস্ব মূল্যায়ন বিভাগের আধিকারিকদের কথায়, নয়া প্রস্তাবে কোনভাবেই সম্পত্তিকর বৃদ্ধি হবে না। সেই বিষয়টি খুঁটিনাটি দেখেই নয়া প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টের যে সম্পত্তিকর কাঠামো রয়েছে, তা সংশোধিত করা হয়। সেটাই করা হচ্ছে। অতীতেও হয়েছে। কলকাতা পুরনিগমের শীর্ষকর্তাদের একাংশের কথায়, ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। যখন থেকে এই কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভায় বারবার করে এই কর সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন নতুন সংশোধন আনা হয়েছে। কিন্তু কাঠামোর সংশোধন করা সম্পূর্ণ কলকাতা পুরনিগমের  কর্তাদের উপরই ন্যস্ত থাকে। সেই কাঠামোর সংশোধন করতে গিয়েই বেস প্রাইসকে স্বাভাবিক নিয়মে বৃদ্ধি করতে হচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। কল রাজস্ব মূল্যায়ন বিভাগ সূত্রে খবর, প্রতিটি জোনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেস প্রাইস সম্পত্তির প্রতি বর্গফুট অনুযায়ী বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। এই বেস প্রাইসের ওপরই চূড়ান্ত কর নির্ধারণ হয়ে থাকে। ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট এর যে সাতটি জোন ভাগ করা হয়েছে, তা মূলত বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করেই তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে –  এলাকার চরিত্র, সম্পত্তি কি ধরনের, আশপাশে বস্তি রয়েছে কিনা, ফাঁকা জমি কত রয়েছে। এই ধরনের একাধিক বিষয় নির্ধারণ করে জোন স্থির করা হয়েছে। তবে শুধু কাঠামো সংশোধন করাই নয়, নয়া প্রস্তাবে আরও বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে কোন রাজস্ব মূল্যায়ন বিভাগের তরফে। শহরে বিলাসবহুল এবং প্রিমিয়াম আবাসনগুলির জন্য নয়া ক্যাটেগরি ধরা হচ্ছে। তবে নতুন যে সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে তা পুরসভার অধিবেশনে পাশ হওয়ার পর সোজা চলে যাবে বিধানসভায়। সেখানে সবুজ সংকেত মিললেই বেড়ে যাবে সম্পত্তি কর। 

 আবাসন প্রকল্পগুলির জন্য বিশেষ কর কাঠামো

এছাড়াও বিশেষ যে আবাসন প্রকল্পগুলি শহরের বুকে হচ্ছে, সেগুলির জন্য বিশেষ বিশেষ কর কাঠামো তৈরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের কথায়, সম্পত্তিকর আদায়ের ক্ষেত্রে যে গতি আসার কথা ছিল, তা রাজনৈতিক প্রভাব এবং অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর জেরে সম্ভবপর হয়নি। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষরা কর ফাঁকি দেননি। কর ফাঁকির তালিকায় রয়েছে উচ্চবিত্তরা। যাঁরা সর্বদাই ওয়েভার স্কিম কবে দেবে, তার উপরে পাখির চোখ করে বসে থাকেন। যাতে জরিমানা ছাড় দিয়ে কর জমা করতে পারেন। রাজস্ব মূল্যায়ন বিভাগের আধিকারিকরা মনে করছেন, যদি বেস প্রাইস বৃদ্ধি হয়, তাহলে সম্পত্তিকর কিছুটা হলেও বাড়বে। সেক্ষেত্রে পুরনিগমের  কোষাগারের পক্ষেও সুবিধা হবে। কিন্তু আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অন্য কারণে। গত দু’বছরে করোনার জেরে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সেখানে সম্পত্তিকর বাড়ানো হলে সমস্যা তৈরি হবে না তো? ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে বহু মানুষ তা নিজেদের সম্পত্তি কর নির্ধারণে ব্যবহার করতে চাননি। বহু সম্পত্তি করদাতা এখনও পুরনো নিয়মেই সম্পত্তিকর নির্ধারণ করে থাকেন। যদিও কলকাতা পুরনিগমের  তরফে নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, বাধ্যতামূলকভাবে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমেই সম্পত্তিকর নির্ধারণ করতে হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণ দেওয়ার অন্যতম শর্তই হচ্ছে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা। প্রথমের দিকে বিষয়টিকে গা না করলেও পরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের গুঁতোয় নিজেদের অবস্থান বদল করেন কলকাতা পুরনিগমের  কর্তারা। ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই কর কাঠামো শুরু হয়েছিল। পাঁচ বছর একই কাঠামোয় কর নির্ধারণ হয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের মাথায় সেই কর কাঠামো সংশোধন করতে হচ্ছে প্রশাসনের কর্তাদের। যে কারণেই সম্পত্তিকর বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন কলকাতা পুরনিগমের রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা।