
কলকাতা: কয়েকদিন আগেও পেশাগত ক্ষেত্রটা ছিল এক। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর যুগান্তকারী রায় দিয়ে গোটা রাজ্য তথা দেশের নজরে পড়েছিলেন। তাঁর অনেক রায়েই কালঘাম ছুটেছিল শাসক তৃণমূলের। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাট চালাতে দেখা গিয়েছিল বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো বরিষ্ঠ আইনজীবীদের। কথা হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যয়াকে নিয়ে। এবার তাঁর বিরুদ্ধেই লড়তে চলছেন আইনজীবী তথা সিপিআইএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly) বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই চর্চায় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভা কেন্দ্র। শোনা যাচ্ছে সেখান থেকেই লড়বেন প্রাক্তন বিচারপতি। যদিও খাতায় কলমে এখনও তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়নি দলের তরফে। তাঁর নামে ইতিমধ্যেই দেওয়াল লিখনও শুরু হয়ে গিয়েছে তমলুকের নানা প্রান্তে। তমলুক থেকে ঘুরেও এসেছেন তিনি। এদিকে এই আসন থেকেই অবার লড়ছেন তরুণ তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। এবার সেই তমলুকের লড়াইয়ের ময়দানে সায়নের উপস্থিতি যে রাজনৈতিক মহলের নজর কাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই তমলুক থেকে সিপিআইএমের টিকিটে লড়ছেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়েই এখন জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাতেই দেখা গেল সায়নের নাম। কিন্তু, একেবারে প্রাক্তন বিচারপতির মতো বড় নামের বিরুদ্ধে লড়াইটা কী কঠিন হতে চলেছে? চাপ কী লাগছে? টিভি-৯ বাংলার প্রশ্নের উত্তরে হাসিমুখেই সায়ন বললেন, “বিচারপতির বিরুদ্ধে তো এজলাসের মধ্যে লড়াই হয়। বিচারপতিরা রাজনীতির ময়দানে নামেন নাকি। যাঁর কথা হচ্ছে তিনি প্রাক্তন বিচারপতি। উনি বিচারপতি হিসাবে যা সম্মান পাওয়ার পেয়েছেন। কিন্তু, আমি যা শুনেছি তা হচ্ছে উনি বিজেপির প্রার্থী হিসাবে উনি লড়াই করবেন। আমরা ওটা রাজনীতির ময়দানে বুঝে নেব। আমরা অনেকদিন থেকে রাজনীতি করছি, যাঁরা নবাগত তাঁদের চিন্তা হলেও হতে পারে।”
একইসঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সায়ন। বলছেন, “একজন মানুষ যদি হঠাৎ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে বলেন নারাদার গোটাটাই হচ্ছে চক্রান্ত, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে। মানুষ নিজের ইমেজ নিজেই বানায়, নিজেই নষ্ট করে। তাতে আমাদের খুব একটা কিছু এসে যায় না। লড়াইটা রাজনৈতিকভাবে হবে।”
অন্যদিকে লড়াইটা যে শুধু তৃণমূল, বা শুধু সিপিআইএমের বিরুদ্ধে নয়, বরং একযোগে দুই দলের বিরুদ্ধে, তাও এদিন বারবার মনে করিয়ে দেন সায়ন। বলেন, “গোটা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। দেবাংশুর বিরুদ্ধেও লড়াই হবে। শেষ দেখে তবেই ছাড়ব। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই।” এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন তমলুকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইটা কঠিন। সে কারণেই সায়নকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। সায়নও কী তাই ভাবছেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন সায়ন। বললেন, কমিউনিস্ট পার্টি একটা ন্যাশনাল পার্টি। সেই দলের পঞ্চায়েতের প্রার্থী হতে পারে একটা বিশাল ব্যাপার। বলির পাঁঠা কে হল সেটা নির্বাচনের পরে বোঝা যাবে। তবে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সায়ন। খানিক আত্মবিশ্বাসের সুরেই বললেন, “পার্টির আমাকে তমলুক থেকে লড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমরা জেতার জন্য মাঠে নেমেছি। লড়ে জিতে, তবেই মাঠ ছাড়ব।”