Saayoni Ghosh: সবুরে মেওয়া ফলে! মাটি আঁকড়ে কীভাবে প্রমাণ করলেন সায়নী?

Soumya Saha |

Jun 05, 2024 | 5:32 PM

Saayoni Ghosh: তৃণমূলে এর আগেও অনেক তারকা মুখ এসেছেন। কেউ বিধায়ক হয়েছেন। কেউ সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু সাংগঠনিক দায়িত্ব এর আগে কোনও তারকা মুখের হাতে ছাড়েনি তৃণমূল। সেদিক থেকে সায়নীই প্রথম, যাঁর উপর সেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Saayoni Ghosh: সবুরে মেওয়া ফলে! মাটি আঁকড়ে কীভাবে প্রমাণ করলেন সায়নী?
সায়নী ঘোষ
Image Credit source: Facebook

Follow Us

কলকাতা: সায়নী ঘোষ। অভিনয় জগত থেকে উঠে আসা তৃণমূলের আরও এক তারকা মুখ। বয়স কম। দৌড়-ঝাঁপ করার ক্ষমতা রাখেন। দলের যুব সংগঠনের দায়িত্বেও রয়েছেন। তৃণমূল যুবর রাজ্য সভানেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি হিসেবে এই পদে বসেছেন তিনি। তৃণমূলে এর আগেও অনেক তারকা মুখ এসেছেন। কেউ বিধায়ক হয়েছেন। কেউ সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু সাংগঠনিক দায়িত্ব এর আগে কোনও তারকা মুখের হাতে ছাড়েনি তৃণমূল। সেদিক থেকে সায়নীই প্রথম, যাঁর উপর সেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সংগঠন সামলানো এক বিষয়, আর ভোটে জেতা আরেক বিষয়। আর এবার ভোট রাজনীতিতেও নিজেকে প্রমাণ করে দেখালেন তৃণমূলের যুব নেত্রী সায়নী ঘোষ। যাদবপুরবাসীর কণ্ঠ হয়ে এবার সায়নী সওয়াল করবেন লোকসভায়।

কত ভোটে জিতলেন?

এবারের লোকসভা ভোটে সায়নীর বিরুদ্ধে বামেরা প্রার্থী করেছিল যাদবপুরের অতি পরিচিত মুখ সৃজন ভট্টাচার্যকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা দলের তরুণ নেতা। প্রচার পর্বেও সায়নীকে জোর টক্কর দিয়েছিলেন সৃজন। বিজেপির থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। প্রার্থী দিয়েছিল আইএসএফও। কিন্তু মঙ্গলবার ইভিএম খুলতেই সব সাফ। সায়নীর ধারেকাছে ঘেঁষতে পারলেন না কেউ-ই। সায়নীর ঝুলিতে যায় ৭ লাখ ১৭ হাজার ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলি পেয়েছেন ৪ লাখ ৫৯ হাজার ভোট। জয়ের মার্জিন আড়াই লাখেরও বেশি (২ লাখ ৫৮ হাজার)। পোস্টাল ব্যালটেও এগিয়ে ছিলেন সায়নীই।

ছাপ ফেলল না প্রাক্তন সাংসদের রিপোর্ট কার্ড

এবারের লোকসভা ভোটে সায়নীর জন্য লড়াইয়ের ময়দান খুব একটা মসৃণ ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অন্যতম একটি যাদবপুরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের গত পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড। উনিশের ভোটে এখান থেকে তৃণমূল যাদবপুর থেকে প্রার্থী করেছিল আরেক তারকা মুখ মিমি চক্রবর্তীকে। অভিনয় জগত থেকে আসা মিমি ভোটে জিতে সাংসদ হলেও তাঁকে নিয়ে যাদবপুরবাসীর মনে ক্ষোভ ছিল প্রচুর। এমনকী যাদবপুরের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমোকেও বলতে শোনা গিয়েছিল, আগের বার যাদবপুরবাসীর সাংসদের থেকে পরিষেবা পেতে সমস্যার কথা। সেই কারণেই এবার লড়াকু সায়নীকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মমতা। যাদবপুরবাসীর মন থেকে গত পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড মুছে, নতুন করে ভরসার জায়গা তৈরি করা সায়নীর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।

সেলুলয়েডের কেরিয়ার থেকে রাজনীতিতে

বাংলা টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম পরিচিত মুখ সায়নী। ঝুলিতে রয়েছে একের পর এক সিনেমা। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন টলিপাড়ায়। অভিনয়ে পা রাখা টেলিফিল্ম থেকে। তারপর বড় পর্দায় প্রথম আসেন ২০১০ সালে। তারপর থেকে আর পিছন ফিরতে তাকাতে হয়নি। সময় যত এগিয়েছে, তত তড়তড়িয়ে এগিয়েছে সিনে দুনিয়ায় সায়নীর কেরিয়ারগ্রাফ। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সেই ঝা চকচকে গ্লামারে ভরা সেলেব দুনিয়া থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন সায়নী।

‘শিবলিঙ্গ’ বিতর্ক ও রাজনীতির লাইমলাইটে সায়নী

সাধারণত রাজনীতির দুনিয়া থেকে দূরে থাকা সায়নীকে প্রথম সরব হতে দেখা গিয়েছিল ‘ভবিষ্যতের ভূত’ বন্ধের প্রতিবাদে। তখন এই তৃণমূল সরকারই রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে অনেক বুদ্ধিজীবীরাই সেই সময় সরব হয়েছিলেন। ওই তালিকায় ছিলেন সায়নীও। তখনও রাজনীতির লাইমলাইটে আসেননি তিনি। প্রথমবার সায়নীকে রাজনীতির লাইমলাইটে দেখা যায়, ‘শিবলিঙ্গ’ বিতর্কে। সেটা ছিল ২০২১ সাল। সায়নী হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছেন, এই অভিযোগ তুলে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছিলেন বিজেপির তথাগত রায়। এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন সায়নী।

বিধানসভায় হেরেও হাল ছাড়েননি সায়নী

একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন সায়নী। আসানসোল দক্ষিণে। মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। বিজেপির দাপুটে নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলের কাছে হারতে হয়েছিল সায়নীকে। বিধানসভার পরাজয়ে হতাশ হয়েছিলেন বটে, কিন্তু হাল ছাড়েননি। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। যখন যা দায়িত্ব দিয়েছিল দল, তা পালন করে গিয়েছেন। তার ফলও পেয়েছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সায়নীকে। সায়নীর আগে এই দায়িত্ব সামলেছেন অভিষেক স্বয়ং। সেই জায়গা থেকে প্রত্যাশা পূরণে বাড়তি চাপ তো ছিলই। তবে দলীয় অন্দরমহলের খবর, প্রায় তিন বছর ধরে দলের যুব সংগঠন যেভাবে সামলেছেন সায়নী, তাতে সন্তুষ্ট তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Next Article