দিলীপের বিয়ে থেকে খগেনকে মার, এই বছর যে সব কারণে খবরের শিরোনামে বঙ্গ বিজেপি
যাঁরা তাঁকে নিজের গড় (মেদিনীপুর) থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাঁড় করিয়েছে এটা তাঁদের দায়। আবার তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন যে, তাঁরাও ভেবেছিলেন দিলীপকে যেখান থেকে দাঁড় করানো হবে তিনি সেখান থেকেই জয়ী হয়ে ফিরবেন। দলের একাংশ নেতার সঙ্গে এরপর শুরু হয় দূরত্ব।

সালটা ২০০৪, লোকসভা নির্বাচন। বাড়ির ড্রয়িং রুম থেকে চায়ের ঠেক আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ভোটে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে? তৃণমূল-বিজেপি কাঁটায়-কাঁটায় টক্কর দিলেও, বঙ্গে যে ফলাফল হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি বললেই চলে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করেছিলেন আরও একটু ভাল ফল করতে পারত বিজেপি। এরপর নদী থেকে বয়েছে জল। ছাব্বিশে আবার ভোট। এবার বিধানসভা। রাজ্য কে দখল করবে তার লড়াই হবে এবার। আর ২০২৪-এর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা বছর কত নিজেদের গোছাতে পারল পদ্ম শিবির? কী কী বড় ঘটনাই বা ঘটল? একবার ফিরে দেখা যাক….
দিলীপের দূরত্ব
বিজেপির এক সময়ের মুখ। দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ। একাধিকবার গোটা দলের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সেই দিলীপকে দল দাঁড় করায় বর্ধমান দুর্গাপুর থেকে। তবে তৃণমূলের কীর্তি আজাদের কাছে পরাজিত হন তিনি। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ে। এই বিজেপি নেতাকে প্রকাশ্যেই বলতে শোনা যায়, এই হারের দায় তাঁর নয়। যাঁরা তাঁকে নিজের গড় (মেদিনীপুর) থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাঁড় করিয়েছে এটা তাঁদের দায়। আবার তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন যে, তাঁরাও ভেবেছিলেন দিলীপকে যেখান থেকে দাঁড় করানো হবে তিনি সেখান থেকেই জয়ী হয়ে ফিরবেন। দলের একাংশ নেতার সঙ্গে এরপর শুরু হয় দূরত্ব।
দিলীপের বিয়ে
মাসটা এপ্রিল। তারিখ ১৮। সকলকে সারপ্রাইজ দিয়ে বিয়ে করেন একষট্টি বছরের দিলীপ ঘোষ। স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে। বৈদিক মতে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় তাঁদের। দিলীপের সঙ্গে তাঁর বিজেপি করার সূত্রেই আলাপ বলে জানা যাচ্ছে। কলকাতা উত্তর শহরতলি সাংগঠনিক বিজেপি জেলা মহিলা মোর্চার সঙ্গে যুক্ত রিঙ্কু। দিলীপের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি মায়ের পীড়াপিড়িতেই বিয়ে করছেন দিলীপ। রিঙ্কু বিবাহ বিচ্ছিন্না বা ডিভোর্সি। তবে, দিলীপের এই বিয়ে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি।
মমতার ‘পাশে’ দিলীপ
যে সময় দলের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব বাড়ছিল, ঠিক সেই সময় আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৈরি দিঘায় তৈরি হয়েছিল জগন্নাথ মন্দির। সেই মন্দিরে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সকলকে। তবে বিজেপি এর সোজা-সাপ্টা বিরোধিতা করেছিল। যে সময় পদ্ম-শিবির এই মন্দিরের বিরোধিতা করেছে, সেই সময় দেখা গেল দিলীপ ঘোষ নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছে গেলেন দিঘায়। শুধু তাই নয়, এরপর সোজা গিয়ে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একে অন্যের সঙ্গে খানিক কথাবার্তাও বললেন। তবে মমতার পাশে দিলীপের এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হইহই শুরু রাজনীতিতে। এবার আর কোনও রাখঢাক না করেই বিজেপির প্রথম সারির নেতা বিরোধিতায় নামে। প্রকাশ্যে দিলীপ-বিরোধী কথা বলেন।
আক্রান্ত জগন্নাথ সরকার
চলতি বছরের ৭ অক্টোবর হামলার শিকার হন দুই বিজেপি নেতা। একজন সাংসদ অন্যজন বিধায়ক। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের মধ্যেই হামলার ঘটনা। আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হল দুই নেতাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ জানান, তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ ওঠে।
