Fire in Kolkata: বেআইনি নির্মাণ-অর্থের দাপটেই অনর্থ? বড়বাজারের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে উঠছে প্রশ্ন
Fire in Kolkata: বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্থের দাপটে একের পর এক বেআইনি অংশ এই হোটেলে তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভা, দমকল, পুলিশ, আবগারি বিভাগ–সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে অনৈতিক কাজ করে গিয়েছে হোটেলের মালিক।

কলকাতা: ১৪ জনের মধ্যে সিংহভাগেরই মৃত্যু হয়েছে দমবন্ধ হয়ে। দমকল মন্ত্রী বলছেন, অবস্থা এমন ছিল যে দমকল কর্মীদের ভিতরে ঢুকে আগুন নেভাতে গিয়েও রীতিমতো বেগ পেতে হয়। কাচে মোড়া গোটা হোটেল। তাতেই আগুন যেমন বাইরে বের হতে পারেনি, তেমনই মানুষই। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যে রিজার্ভার ছিল সেখানেও জল ছিল না। পাইপ দিয়ে জল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও জল মেলেনি। এখানেই উঠছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন। সূত্রের খবর, ১৯৯৩ সালে ৬ নম্বর মদনমোহন বর্মন লেনে তৈরি হয় এই হোটেল। প্রথমে চারতলা ছিল। তারপর সেই হোটেলের উপরে আরও দুই তলা করা হয়।
কী বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা?
গত কয়েক বছরে হোটেলে বেশ কিছু অংশ পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। হোটেলের দোতলায় পানশালা তৈরির কাজ শুরু হয় গত তিন মাস আগে থেকে। সেখানে ছিল রেস্তোরাঁ। সেটিকেই পানশালায় রূপান্তরিত করে যাবতীয় নির্মাণ বদলে কাজ শুরু করেন হোটেলের মালিক। অভিযোগ, এলাকার মানুষের আপত্তি থাকলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি হোটেলের মালিক। আশেপাশে রয়েছে স্কুল, ধর্মশালা, এমনকি মন্দির। কিন্তু, তারপরেও পানশালা কিভাবে তৈরি হয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্থের দাপটে একের পর এক বেআইনি অংশ এই হোটেলে তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভা, দমকল, পুলিশ, আবগারি বিভাগ–সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে অনৈতিক কাজ করে গিয়েছে হোটেলের মালিক। পানশালা তৈরি করতে গিয়ে দোতলার যাবতীয় জানালা এবং দরজা ভেঙে সেখানে ইটের গাঁথনি করা হয়েছে।
এড়ানো যেত না মৃত্যু?
এখানেই শেষ নয়, রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। আপদকালীন অবস্থার কথা মাথায় রেখে দোতলা থেকে বের হওয়ার একটি রাস্তা ছিল। সেখানেও ইটের গাঁথনি দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী স্তূপাকার করে রাখা ভিতর দিক থেকে এমার্জেন্সি বা আপদকালীন দরজার সামনে। যে দরজা খোলা থাকলে এই প্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যেতে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।

অভিযোগের শেষ নেই
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হোটেলের ছাদের উপরে প্রায় চার থেকে পাঁচটি বেআইনিভাবে ঘর তৈরি করা হয়েছে। এমনকি, হোটেলের ভিতরে এক একটি ঘরের পরিধি বাড়ানো হয়েছে তাও কোনরকম অনুমোদিত নকশা ছাড়াই। দমকল সূত্রে খবর, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র কার্যত অকেজ ছিল। একাধিক অগ্নি নির্বাপন সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে। যেগুলি আবার মেয়াদ উত্তীর্ণ। অর্থাৎ এই ধরনের হোটেলের ক্ষেত্রে, যে ফায়ার অডিট প্রয়োজন হয়, সেটাও দীর্ঘ সময় করা হয়নি। ফায়ার স্প্রিংকলার বেশ কয়েকটি অংশে ছিলই না। কিন্তু, হোটেলের প্রতিটি কোণে কোণে এই অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র থাকা প্রয়োজন ছিল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এত বড় হোটেল একাধিক বেআইনি অংশ নির্মাণ করেও নিজের ব্যবসা বাড়িয়েছিল বছরের পর বছর। প্রশাসন তাহলে কি করছিল? উঠছে প্রশ্ন। মেয়র বারবার দাবি করেন, বেআইনি নির্মাণ রুখতে ইঞ্জিনিয়ররা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। তাহলে এক্ষেত্রে নজর এড়িয়ে গেল কিভাবে? রাজনীতি নাকি অর্থ, কোন কারণে এভাবে ছাড় পেয়ে গিয়েছিলেন ওই হোটেলের মালিক? প্রশ্ন উঠছেই। চলছে চাপানউতোর।
