৯০০ কোটির স্ক্যাম! অভিষেকের বাড়িতে মাসে ৩৫-৪০ কোটি টাকা পাঠাত লালা, বিস্ফোরক দাবি বিজেপির
একেবারে নাম করে অভিযোগের একের পর এক তিরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতা: এখনও ৬ দফার ভোট বাকি। তৃণমূল সুপ্রিমো ভাঙা পা নিয়েই উত্তর থেকে দক্ষিণ ছুটে বেড়াচ্ছেন। তার মধ্য়েই শাসক দলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে কয়লাকাণ্ড। সেই কয়লাকাণ্ডে একযোগে তৃণমূলকে নিশানা করলেন শুভেন্দু-দীনেশ। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ করে কয়লাকাণ্ডকে গত ১০ বছরের ‘সবচেয়ে বড় স্ক্যাম’ বললেন নন্দীগ্রামের মমতার বিরোধী প্রার্থী। স্ক্যামে মোট ‘৯০০ কোটি টাকা’র দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু।
একেবারে নাম করে অভিযোগের একের পর এক তিরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, প্রথমের দিকে প্রতি মাসে ১২-১৫ কোটি টাকা, পরবর্তীকালে প্রতি মাসে ৩৫-৪০ কোটি টাকা দিতেন অনুপ মাজি ওরফে লালা। এরপর সেই টাকা পুলিশি পাহারায় পৌঁছে যেত শান্তিনিকেতনে। এ ভাবে মোট ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি শুভেন্দু অধিকারীর।
এই ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের নেতৃত্বে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। তিনি বলেন, “তৃণমূল যুবর ৮ জন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যার মধ্যে সাত নম্বরে নাম ছিল বিনয় মিশ্রর। যার ভাই গ্রেফতার হয়েছে এবং যে নিজে এখন ফেরার। এই বিনয় মিশ্রর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারে না তৃণমূল।” আরও নির্দিষ্ট করে শুভেন্দুর অভিযোগ, যাঁকে ইডি গ্রেফতার করেছে সেই অশোক মিশ্র পুলিশ এস্কর্টের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিতেন শান্তিনিকেতনে।
তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দলের লিখিত সেকেন্ড কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের পোস্টিং থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।” ২০১৪ সালের পর অভিষেক সাংসদ হওয়ায় সব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যায় বলেও অভিযোগ তাঁর। সরাসরি তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শুভেন্দুর দাবি, এই ‘১০ বছরের সবচেয়ে বড় স্ক্যামে’ কম করে ৯০০ কোটি টাকা ‘ভাইপোর’ কাছে গিয়েছে। সম্পূর্ণ দুর্নীতিতে ৯০ থেকে ৯৫ জন পুলিশ ও একাধিক আইপিএস আধিকারিকরাও জড়িত বলে অভিযোগ তাঁর। বিজেপির অভিযোগ, ভোট কৌশলীর কাছেও এই কয়লা পাচারের টাকা গিয়েছে।
বিজেপির সাংবাদিক বৈঠকের এই অভিযোগের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ নেই সিপিএমের কাছেও। যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল যে রাজ্যকে পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে তা আমি বারবার বলেছি। পিভি ট্যাক্স অর্থাৎ পিসি ভাইপো ট্যাক্সের কথা বিধানসভায় বলেছি। বহুবার সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায় বলেছি। নতুন কোনও কথা নয়, সবাই জানে।” বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ৩৫টি প্লট, পিকের ৬০০ কোটি থেকে শুরু করে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খরচ করা ২৭ হাজার কোটি টাকা পাচারের টাকা বলে দাবি করেছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “যাঁরা যাঁরা পাচারে যুক্ত ছিলেন তাঁরা অনেকে এখন বিজেপি অনেকে তৃণমূল, এখন বিজেপি তৃণমূলকে বলছে তার কী মানে! পুলিশ, সংবাদ মাধ্যম সব জানে, এসব পাচারের টাকা, কালো টাকা। অভিযোগটা যথার্থ।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী কড়া আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভাইপো করেছে। এখন বলছে ৭০টা চুহা মেরে বৃন্দাবন যাব। এই হচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। যদি এই দুর্নীতির সম্পর্কে জানেন না তাহলে আপনার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত।” তৃণমূল অবশ্য নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অতি সক্রিয়তায় প্রশ্ন তুলছে। তৃণমূল নেতা তাপয় রায় বলেন, “বিজেপির এরকম ক্ষেপে ক্ষেপে এই আক্ষেপ নির্বাচনের সময় কেন? ১০টা বছর শুভেন্দু আমাদের দলে ছিল। নির্বাচনের আগে এই ধরনের অভিযোগ, সক্রিয়তা, অতি সক্রিয়তা, এসব নির্বাচনের পরে খাকবে তো? এটাই জিজ্ঞাস্য।”
আরও পড়ুন: কয়লা পাচারের টাকা পুলিশের গাড়িতেই আসত কলকাতার প্রভাবশালীদের কাছে! কয়লাকাণ্ডে গ্রেফতার পুলিশ কর্তা