
কলকাতা: তিনি ঠোঁটকাঁটা। স্পষ্ট কথা বলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিতর্ক সর্বদাই যেন পিছু পিছু ঘোরে। কিন্তু, সে সবে থোড়াই কেয়ার। সমালোচকদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে পাল্টা তোপ দাগতে তিনি সিদ্ধহস্ত। সকালের ইকোপার্ক আর দিলীপ ঘোষ, বিগত কয়েক বছরে সাংবাদমাধ্যম থেকে নিউটাউনের লোকজনের ছবিটা যেন একেবারে সমার্থক হয়ে গিয়েছে। রাজ্য রাজনীতি হোক বা সামাজিক কোনও ইস্যু, দিলীপের বাইট চাইলে সকাল সকাল ইকো পার্কে চলে এলেই হবে। মর্নিং ওয়াকের মাঝেই দেখা মিলবে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। রোদ উঠুক বা মেঘলা, দিলীপ আসবেনই। বিয়ে নিয়ে শত বিতর্কের মাঝেও বিয়ের ঠিক পরদিনই সোজা ইকোপার্কে চলে গিয়েছিলেন প্রাতঃভ্রমণ করতে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক মতামতও রেখেছিলেন। বিয়ের ২৫ দিনের মধ্যে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের প্রথমপক্ষের সন্তান সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত (২৭)। তা নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। রাজ্যজোড়া চাপানউতোরের মধ্যে মর্নিং ওয়াকে অবিচল দিলীপ। কী করে পারেন এতটা মন শক্ত রাখতে? কী তাঁর ফিটনেসের রহস্য? কী বলছেন মনোবিদরা?
মনোবিদরা বলছেন, শোকের আবহে একা থাকা কখনও ঠিক নয়। তাতে মন ভাল হওয়ার জায়গায় আরও খারাপ হয়ে যায়। তাই সব চেনা রুটিনে ফেরা অত্যন্ত জরুরি। মনোবিদ অংশুমান দাস বলছেন, “শোকের মধ্যে, হতাশার সময়ে একা একা থাকার থেকে মানুষের মধ্যে থাকলে, চেনা দৈনন্দিন ছকে ফেরার চেষ্টা করলে মন ভাল থাকবে। সকালে যদি শরীরচর্চা করা যায় ভাল। কেউ অন্যান্য দিন বাজার করতে য়ান তাহলে এইদিনগুলিতেও যদি যেতে পারেন তাহলে ভাল হয়।”
যুব বয়স থেকেই আরএসএস করছেন দিলীপ। লাঠিখেলা থেকে যোগাভ্যাস, সবই তাঁর হাতের তালুতে। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ ২০১৫ সাল থেকে। কিন্তু, পুরনো অভ্যাস কখনও ছাড়েননি। শরীরচর্চা যে মন ভাল রাখার মূল মন্ত্র, তাই বারবার বলছেন মনোবিদরা। একই মত মনোবিদ জয়রঞ্জন রামেরও। তিনি বলছেন, “আমাদের যখন মন ভাল থাকে না তখন আমরা শরীর চর্চাগুলো একেবারেই ছেড়ে দিই। তার থেকে মনের অবসাদ আরও বাড়ে। কিন্তু, যখন মন ভাল থাকে না, তখন বেশি করে শরীর চর্চার চেষ্টা করলে মন ভাল থাকে।”
সোজা কথায়, এই কঠিন সময়গুলিতে একা একা থাকলে আরও মন খারাপ করবে। তার থেকে নিজের চেনা কাজ করলে, মানুষের মধ্যে থাকলে মন আরও ভাল থাকে। অংশুমানবাবু বলছেন, “কেউ চলে গিয়ে থাকলে সে তো আর ফিরে আসবে না। তাই আমি যদি এই সময় জীবনের মূল স্রোতে ফেরার চেষ্টা করি তাহলে অনেকটাই ভাল থাকা যায়। কিন্তু, আমি যদি সেটা না করে হতাশা-দুঃখ-শোকের মধ্যে থাকলে আমারও কষ্টে সময় কাটবে। তাই নিজেকে কিছুর মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পারলে কঠিন সময়ের মোকাবিলা আরও ভালভাবে করা যায়।”
শরীর চর্চা মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে কেন গুরুত্বপূর্ণ তার বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাও দেন জয়রঞ্জন রাম। বলছেন এন্ডোরফিনের কথা। তাঁর কথায়, “শরীরের সঙ্গে মনের যোগ তো রয়েছে। এর ফলে এন্ডোরফিন নামের এক ধরনের কেমিক্যাল বের হয়।” মনোবিদদের মতে এই কেমিক্যাল মনসংযোগ বাড়াতে, মন উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। রক্ত চলাচল ভাল থাকে। ফলে অক্সিজেন শরীরে ভালভাবে প্রবাহিত হয়। যে কোনও কাজে মানুষ আলাদা উৎসাহ বোধ করে। আলসেমি কেটে যায়।