কলকাতা: স্লোগান ছিল ২০০ পারের। তা হয়নি। কিন্তু, তিন থেকে বেড়ে হয়েছিল ৭৭। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রথমবার বিজেপির বিধায়ক বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর কেটেছে তিন বছর। আর এই তিন বছরেই এক ধাক্কায় ৬ বিধানসভা আসন হারাল গেরুয়া শিবির। শুধু তাই নয়, খাতায়-কলমে বিজেপির বিধায়ক থাকলেও চারজন যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। আবার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে জিতে বিধায়ক পদ ছেড়েছেন মনোজ টিগ্গা। সবমিলিয়ে বিধানসভায় শক্তি কমেছে গেরুয়া শিবিরের। আবার একুশেই ২০০ পার করেছিল তৃণমূল। এই তিন বছরে তাদের শক্তি আরও বেড়েছে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, তাদের দুই প্রার্থী জিতেও ফল ঘোষণার পর পদত্যাগ করেন। একজন জগন্নাথ সরকার। অন্যজন নিশীথ প্রামাণিক। শান্তিপুর থেকে জিতেছিলেন জগন্নাথ সরকার। আর দিনহাটা থেকে জিতেছিলেন নিশীথ। ২ জনেই তখন সাংসদ। তাই বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন তাঁরা। এই দুই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয় তৃণমূল। ফলে বিধানসভায় বিজেপির শক্তি কমে হয় ৭৫। আবার বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুতে ২০২৩ সালে উপনির্বাচন হয় ধূপগুড়িতে। সেখানে জয়ী হন তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়। বিধানসভায় বিজেপির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৪।
শনিবার যে চার আসনের ফল ঘোষণা হল, তার মধ্যে একুশের নির্বাচনে তিনটি আসন জিতেছিল বিজেপি। রাণাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও রায়গঞ্জ আসন ছিল গেরুয়া শিবিরের দখলে। কিন্তু তিন বিধায়কই তৃণমূলে যোগ দিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন। এই তিন আসন এবং তৃণমূলের দখলে থাকা মানিকতলা আসনে উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হল এদিন। আর ৪ আসনেই জয়ী হয়েছে ঘাসফুল শিবির। ফলে নিজেদের দখলে থাকা আরও তিন আসন হারাতে হল বিজেপিকে।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে এমন ৬ জন জিতেছেন, যাঁরা রাজ্যের বিধায়ক ছিলেন। কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া সিতাইয়ের বিধায়ক ছিলেন। সাংসদ হওয়ার পর বিধায়ক পদ ছাড়েন তিনি। বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী তালডাংরার বিধায়ক ছিলেন। মেদিনীপুরের তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়া মেদিনীপুরের বিধায়ক ছিলেন। আলিপুরদুয়ারে বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা মাদারিহাটের বিধায়ক ছিলেন। ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক নৈহাটির বিধায়ক ছিলেন। বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুল নুরুল ইসলাম হাড়োয়ার বিধায়ক ছিলেন। এই ৬ জন বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করায় সেই আসনগুলি ফাঁকা রয়েছে। এই ৬ জনের মধ্যে একজন বিজেপির। ফলে বিধানসভায় বিজেপির আসন সংখ্যা এখন ৭০।
আবার খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক হলেও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়, বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বিধায়ক হরকালী প্রতিহার, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল।
তৃণমূল ও বিজেপি ছাড়া বিধানসভায় আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। একুশের নির্বাচনে ভাঙড়ে জেতেন তিনি। আবার ২০২৩ সালে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে জয়ী হন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। পরে অবশ্য তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। একুশের নির্বাচনে কালিম্পংয়ে জিতেছেন রুদেন সদা লেপদা। তামাং গোষ্ঠীর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রার্থী ছিলেন তিনি। পরে তিনি ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগ দেন।
সবমিলিয়ে ২৯৪ আসনের বিধানসভায় এখন ৬টি আসন ফাঁকা রয়েছে। বাকি ২৮৮ আসনের মধ্যে এখন তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা ২১৫। এর সঙ্গে ৪ বিজেপি বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বায়রন বিশ্বাসও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। খাতায় কলমে বিজেপি ৭০ হলেও তাঁদের ৪ বিধায়ক শাসকদলের হাত ধরেছেন। ফলে বিধানসভায় আরও কোণঠাসা হলেন শুভেন্দু অধিকারীরা।