কলকাতা: একে অনলাইন ক্লাস। তারপর ওপর প্রাইভেট টিউশন, সেটাও অনলাইনে। কিন্তু তারপরও মোবাইল হাতছাড়া করত না ক্লাস এলেভেনের ছাত্রী। সারাক্ষণই মোবাইল ঘাটত সে। নেশা হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত মোবাইলের নেশায় পড়াশোনাতেও ঘাটতি হতে শুরু করে। সামনেই বড় পরীক্ষা ছিল। তাই বাবা-মা বকাবকি করেছিলেন। অবসাদে আত্মঘাতী একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দীপ্তি পাইক। পর্ণশ্রীর ঘটনা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে. বছর সতেরোর দীপ্তির হাতে বছর দুয়েক আগে মোবাইল আসে। অনলাইন ক্লাস করার জন্যই তাকে মোবাইল নিয়ে দেওয়া হয়। দিনের বেশিরভাগ সময়ই অনলাইন ক্লাস, প্রাইভেট টিউশনের ক্লাস করত। কিন্তু তারপরই মোবাইলেই মত্ত থাকত সে।
গেম, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি ছিল মারাত্মক। রাত জেগেও মোবাইল ঘাটত দীপ্তি। এর আগে বাবা-মা একাধিকবার তাকে বকাবকি করেছেন, বুঝিয়েছেন। কিন্তু দিন দুয়েক ঠিক থাকলেও ফের মোবাইলেও আসক্ত হয়ে পড়ত দীপ্তি। কোনওভাবেই মোবাইল থেকে তাকে দূরে সরানো যাচ্ছিল না।
এদিকে, বছর খানেক বাদেই তার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। পড়াশোনাতেও অমনোযোগী হয়ে পড়ছিল দীপ্তি। তা নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ছিল পরিবার। দীপ্তির বাড়ির অশান্তির কথা জানতেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরাও দীপ্তিকে একাধিকবার বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু সেভাবে কোনও প্রভাবই পড়ত না দীপ্তির মধ্যে।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার সন্ধ্যাতেও দীপ্তির বাড়িতে চিত্কার চেঁচামেচি শুনতে পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তাদের বাড়িতে অশান্তি হত ভেবে বিশেষ আমল দেননি কেউই। সন্ধ্যায় দীপ্তির বাবা-মা বাইরে বেরিয়ে যান। বাড়িতে একাই ছিল সে।
দীপ্তির পরিবারের বয়ান অনুযায়ী, বাড়ি ফিরে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া মিলছিল না দীপ্তির। পরে তাকে একটি ঘরে গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। তত্ক্ষণাত্ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এক প্রতিবেশীর কথায়, “সন্ধ্যায় দেখলাম ও বাবা-মা বেরিয়ে গেল। তারপর কখন ফিরেছেন, সেটা আর দেখিনি। তবে আচমকাই বাড়ি থেকে ভীষণ কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে আসি। তারপর শুনি এই ঘটনা। মেয়েটার খুব মোবাইলের নেশা হয়েছিল। তা নিয়ে ওর বাবা-মা দুশ্চিন্তা করতেন। আমাদেরও মাঝেমধ্যে সেকথা বলতে ওঁরা। কিন্তু মেয়েকে বুঝিয়ে কাজ হয়নি। বকাবকি করেছিলেন হয়তো। অভিমানে এমনটা করবে বাচ্চা মেয়েটা কী বলব!”
ঘটনার পর শোকস্তব্ধ দীপ্তির বাবা-মা। কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই তাঁরা। দীপ্তির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। যদিও কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। তবে প্রতিবেশীদের কানাঘুষো, ‘এখন তো বাচ্চাদের আর বলাই যায় না কিছু। বললেই কী এমনটা করতে হয়?’
আরও পড়ুন: বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মিলল মহিলার রক্তাক্ত দেহ! চাঞ্চল্য বেলেঘাটায়
আরও পড়ুন: তিন তলার জানলা দিয়ে গলগল করে বেরোচ্ছে ধোঁয়া, সল্টলেকে আগুন গ্রাস করতে শুরু করেছে গোটা বাড়িকে