RIO: রেটিনার চিকিৎসার ওষুধের দরপত্র বিতর্কে কি দায় এড়াতে পারে স্বাস্থ্যভবন? TV9 বাংলায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য
RIO: টিভি নাইন বাংলার হাতে আসা এক্সক্লুসিভ নথি বলছে, অনিয়মের দায় এড়াতে পারে না স্বাস্থ্য ভবনও! গত ১৫ মার্চ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্প থেকে আরআইও’র ডিরেক্টরের নামে স্বাস্থ্য ভবনের প্রশাসনিক মঞ্জুরিনামাই সেই প্রশ্ন তুলে দিল।
কলকাতা: দরপত্রে অনিয়মের বরাতে অভিযোগের কাঠগড়ায় ছিল আরআইও (Regional Institute of Opthalmology)। টিভি নাইন বাংলার হাতে আসা এক্সক্লুসিভ নথি বলছে, অনিয়মের দায় এড়াতে পারে না স্বাস্থ্য ভবনও! গত ১৫ মার্চ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্প থেকে আরআইও’র ডিরেক্টরের নামে স্বাস্থ্য ভবনের প্রশাসনিক মঞ্জুরিনামাই সেই প্রশ্ন তুলে দিল। স্বাস্থ্য ভবনের (Swastha Bhavan) দরপত্র প্রক্রিয়ায় রেটিনার অসুখের চিকিৎসায় বরাত পায় দেশীয় সংস্থার ওষুধ। সেই সংস্থাকে এড়িয়ে বহুজাতিক সংস্থাকে কোটি টাকার বরাত রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি কেন বরাত দিল তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। টিভি নাইনের হাতে আসা নথি বলছে যে প্রশ্নে আরআইও অভিযোগের কাঠগড়ায়, সেই একই প্রশ্ন স্বাস্থ্য ভবনের মঞ্জুরনামাতেও! গত ১৫ মার্চ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তহবিল থেকে এক কোটি টাকা মঞ্জুর করে স্বাস্থ্য ভবনের প্রশাসনিক অনুমতিপত্রে বলা হয়েছে, ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথি, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুদের রেটিনার অসুখ নিয়ন্ত্রণে ৫০০ RANIBIZUMAB প্রি-ফিলড সিরিঞ্জ কেনার জন্য আরআইও ডিরেক্টরকে এক কোটি টাকা দেওয়া হল।
বরাতপ্রাপ্ত দেশীয় সংস্থার ওষুধের দাম ভায়াল পিছু ৮৭৯৯ টাকা (জিএসটি বাদে)। আর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তহবিল থেকে যে ওষুধ কেনার জন্য অগ্রিম এক কোটি টাকা দেওয়া হল, বহুজাতিক সেই সংস্থার ওষুধের দাম সিরিঞ্জ পিছু ২০০০০-৪৫০০০ টাকা। প্রশ্ন উঠছে, দেশীয় সংস্থার তৈরি RANIBIZUMAB ভায়াল দিয়েই রাজ্যের অন্যান্য সরকারি চক্ষু হাসপাতালে ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথি, এআরএমডি’র (এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজিজ) চিকিৎসা হচ্ছে। তাহলে আরআইও’র ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা কার স্বার্থে?
দেশীয় সংস্থার অভিযোগ, অপরিণত সদ্যোজাতদের চিকিৎসায় বরাতপ্রাপ্ত বহুজাতিক সংস্থার ডিসিজিআই অনুমোদন নেই! বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনের নজর এড়াল কী ভাবে! বহুজাতিক সংস্থার ওষুধের উপরেই যদি আস্থা রাখতে হয় তবে দেশীয় সংস্থাকে বরাত কেন? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
আরআইও ডিরেক্টর অসীম ঘোষ অবশ্য এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেছেন, বহুজাতিক সংস্থার RANIBIZUMAB প্রিফিলড সিরিঞ্জ সংক্রমণ রোধে অনেক বেশি কার্যকর। তিনি বলেন, ওই ওষুধটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রি-ফিলড দিতে হয়। কারণ, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। যদি ওষুধটি প্রি-ফিলড না থাকে, তাহলে ভায়াল খুলে ইঞ্জেকশন টানতে হয়। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। গত ১০-১৫ বছর ধরে আমরা প্রি-ফিলড ইঞ্জেকশন দিচ্ছি, তাদের ক্ষেত্রে কোনও সংক্রমণ হচ্ছে না।”
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে ওই দেশীয় সংস্থাকে বরাত দেওয়া হল কেন? আরআইও ডিরেক্টর যা বলছেন তাতে তো দেশীয় সংস্থার বরাত দেওয়ার মধ্যেই গলদ রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ সংক্রান্ত সব দিক সবিস্তারে খতিয়ে দেখছি। বিশেষজ্ঞরা কেন ভায়ালের পরিবর্তে সিরিঞ্জ কেনার অনুমতি দিলেন তা দেখতে হবে।’
এদিকে আরআইও-র এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্য়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধীদের অভিযোগ, মুনাফা লুঠে অনিয়মই এখন রাজ্যে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির চিকিৎসক নেত্রী অর্চনা মজুমদার বলেন, ‘যে দেশীয় সংস্থা ওষুধ দিচ্ছিল তাকে বরাত দেওয়া হয়নি। উল্টে একটি বহুজাতিক সংস্থাকে বেশি টাকার বিনিময়ে কোটেশন দেওয়া হচ্ছে। এগুলো পুরোটাই বেনিয়ম। যে টাকা মানুষের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর জন্য পাঠানো হয়, সেখান থেকেও কাটমানি এবং শাসক দলের নেতাদের পকেট ভারী করার চেষ্টা চলছে। এটির একটি ব্যাপক অনুসন্ধান হওয়া দরকার।’
অন্যদিকে চিকিৎসক তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বাংলাই একমাত্র রাজ্য যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গোটাটাই বিনামূল্যে পরিষেবা পাওয়া যায়। এমন কোনও ঘটনা ঘটলে, তা স্বাস্থ্য দফতরের নজরে এলে, দফতর নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’