
কলকাতা: দেড় কোটি হিন্দুকে পথে নামার ডাক দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সকাল সকাল রাম নবমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। গোটা রাজ্যজুড়ে রাস্তায় নামছে প্রায় আড়াই হাজার মিছিল। কলকাতাতেই বের হতে চলেছে ৮০টি শোভাযাত্রা।
কুণাল ঘোষ, তৃণমূল নেতা
রামনবমীর পুন্যতিথিতে নন্দীগ্রামের সোনাূড়াতে রাম মন্দিরের ভূমি পুজোতে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তারপরই একেবারে হুঙ্কারের সুরে বললেন, “শ্রী রাম আমাদের আধ্যাতিক চেতনা জাগ্রত করেছেন। বাংলায় হিন্দু মানুষদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। আমি ভুলে যাইনি কিছু। বাংলায় সরকার পরিবর্তন হলে অত্যাচারীদের সোজা করে উল্টো ঝোলাব।” একইসঙ্গে যে সোনাচূড়ায় যে রাম মন্দির হচ্ছে তা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, “এই মন্দিরে সরকারি অর্থ থাকবে না। হিন্দুদের থেকে সাহায্য নিয়ে অযোধ্যার আদলে হবে এই মন্দির।”
সুকান্ত মজুমদার: বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা চলে না। তাই জ্যোতি বসু হোক, মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হোক বা সৌগত রায় হোক, তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে হলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে এই ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠা করা বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা চলে না।
সুকান্ত মজুমদার: নচিকেতা এখানে গান গাইতে পারেন তোমার জন্য গুজরাট হয়ে যায়নি। আর ওইখানে বাংলাদেশের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে পারেন না।
সুকান্ত মজুমদার: সিপিএম বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্ত করতে হাসিম আবদুল হালিমকে পাঠিয়েছিল। বহুদিন সেখানে তিনি পারেনি কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করতে।
সুকান্ত মজুমদার: আমাদের যোগেনচন্দ্র মণ্ডল জিন্নার মন্ত্রীসভায় আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই সময় বলাও হয়েছিল মুসলিম আর দলিতরা কাঁধে কাধ মিলিয়ে বন্ধুত্ব করে থাকব। কী হল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে এখানে চলে এল। একদিন ভোলাদ্বীপে তফশিলি নারীরা ধর্ষিত হলেন। যোগেনবাবু পালিয়ে আসেন মন্ত্রীত্ব ছেড়ে। বাঙালিকে শিখতে দেওয়া হয়নি। যোগেনবাবুর রেজিগনেশন লেটার স্কুলে স্কুলে পড়ানো দরকার। পুরো ইতিহাস থেকে হাওয়া। অদ্ভুত ইতিহাস আমাদের। আমি তো ক্লাস টেন অবধি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইতিহাস পড়েছি। যোগেন মণ্ডলের নামই জানতাম না আমি। পরে বড় হলাম বই পড়তে শুরু করলাম জানলাম ওঁর নাম। বাঙালিকে ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি।
সুকান্ত মজুমদার: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় না থাকলে আমি বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হোক তাঁরা হয় পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে থাকতাম।
সুকান্ত মজুমদার: আজ সেই রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। গত কয়েকদিনে পুলিশের ছুটি বাতিল করা হল। কারণ হিন্দুরা রাম নবমী পালন করবে। এখন আমরা ৭০ শতাংশ প্রায়। তারপরও হিন্দু বাঙালিকে রাম নবমী পালন করতে হয় পুলিশ ফোর্স দিয়ে। ভবিষ্যত নিয়ে ভাববেন।
সুকান্ত মজুমদার: বাঙালিকে সেকুলারিজমের আফিম খাওয়ানো হয়েছিল দিনের পর দিন। সেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। কোথায় প্যালেস্তাইনে কী হচ্ছে, কোথায় ভেনিজুয়েলায় কী হচ্ছে মিছিল হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য একবিন্দু চোখের জল ফেলা যাবে না কারণ সাম্প্রদায়িকতা হবে। বুদ্ধবাবু জীবনে প্যালেস্তাইনে গিয়েছেন কি না আমার জানা নেই। তার জন্য একটা পার্টি ওদের পোশাক পরে শোক পালন করছে। অথচ বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য শোক পালনের সময় নেই। একটিও মিছিল নেই কমিউনিস্টদের। এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছি যে এটা সেকুলারিজম নয়। এটা ভোটব্যাঙ্কের পলিটিক্স। এরা তখনই হিন্দুদের কথা বলবে যখন ভোট ব্যাঙ্ক হবে।
রাম পুজো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
শনিবারই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাম-নবমী পালন করতে চেয়েছিল এবিভিপি (ABVP)। তবে তাতে অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই রাম-নবমী পালন ডানপন্থী পড়ুয়াদের। উড়ল ‘জয় শ্রীরামের’ পতাকা। বাম-অতিবামদের ‘ঘাঁটি’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেরুয়া পতাকা! নিতান্তই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বিস্তারিত পড়ুন: গেরুয়া ধ্বজা উড়ছে ‘লাল’ যদবপুরে, কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই ক্যাম্পাসে চলছে রামের পুজো
বাগবাজারে হনুমান মন্দিরে পুজো দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। রামনবমীর সকালে পৌঁছে গেলেন হনুমান মন্দিরে। হনুমানজির সামনে দিলেন লাড্ডুর ডালা। প্রসাদও বিতরণ করলেন মানুষের মধ্যে।
আগেই এক কোটি হিন্দুকে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আরও ৫০ লাখ মোট দেড় কোটি হিন্দুকে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বিস্তারিত পড়ুন- রাত দশটার মধ্যে বাংলা দখল হয়ে যাবে: শুভেন্দু
রাম নবমীর মিছিলে শুভেন্দু অধিকারী
কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে হাওড়া। হাওড়া সিটি পুলিশের নগরপাল প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠির নেতৃত্বে শিবপুরের কাজীপাড়া অঞ্চলে টহল দিচ্ছে। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে চলছে নজরদারি। আশপাশে বাড়ির ছাদ থেকেও চলছে নজরদারি। হাওড়া শহর ও ও হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। মাঠে নেমেছে র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স।
রামনবমীর পুন্য তিথিতে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়াতে রাম মন্দিরের ভূমি পূজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোনাচুড়াতে চার বিঘার জায়গার উপর তৈরি হবে রাম মন্দির আগেই ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু। সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়।
বীরভূমের সিউড়ি চৈতালি মার্কেটে হনুমান মন্দিরের সকাল থেকেই ভক্তের ভিড়। সিউড়ি শহরে দুটি বড় রামনবমীর মিছিল বের হবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের সেই মিছিল এই হনুমান মন্দিরে আসবে শোভাযাত্রা করে। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে রাম এবং হনুমানের পুজো। রামনবমীকে কেন্দ্র করে সিউড়ি শহরকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায়।
ইতিমধ্যেই রামনবমীর দিন সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ছুটি বাতিল থাকছে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। রাম নবমীর আগে থেকেই রাজ্যের নানা স্পর্শকাতর জায়গা ঘুরে দেখছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। ইতিমধ্যেই নির্দেশ পালনে রাস্তায় স্পর্শকাতর এলাকার পুলিশ সুপার এবং কমিশনাররা।
দিনভর রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা নবান্ন থেকে নজরদারি চালাচ্ছেন। রাজ্যজুড়ে যত বড় মিছিল বের হবে তার প্রত্যেকটাই পুলিশি পাহারারত ঘেরা থাকবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবারে এমনই সিদ্ধান্ত রাজ্য পুলিশের।
একাধিক জায়গায় রাম নবমীর মিছিলের অনুমতি নিয়ে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানাপোড়েন চলেছে বিস্তর। জল গড়িয়েছিল কলাকাতা হাইকোর্ট। এদিকে আবার রাম নবমীতে কোনওরকম অশান্তি ঠেকাতে পাহারা দিতে চলেছে বামেরা। দিনভর পথে থাকার কথা বলছে তাঁরাও। এদিকে কাকতালীয়ভাবে এদিন আবার বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস।