
সৌরভ গুহ ও অনন্ত চট্টোপাধ্যায়ের রিপোর্ট
কলকাতা: আক্রমণ-পাল্টা আক্রামণ! একজন মানহানির নোটিস পাঠাচ্ছেন, কখনও অন্যজন পরিষ্কার বলছেন, “লড়ে নেব…।” কথা হচ্ছে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও তিলোত্তমার মা-বাবাকে নিয়ে। বুধবার তৃণমূল নেতা তিলোত্তমার মা-বাবাকে মানহানির নোটিস পাঠিয়েছেন। পাল্টা তার জবাবে, ফোন খুলে তিলোত্তমার মা দাবি করলেন, কুণাল ঘোষ নাকি তাঁদের টাকা দিয়ে রফা করতে বলেছেন। এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল নেতাও পরিষ্কার বলেছেন, তিলোত্তমার মা-বাবা যেন সব তথ্য প্রমাণ নিয়ে বিচারককে দেখান।
বুধবার মানহানির নোটিস সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে তিলোত্তমার মা-বাবাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তখন তিলোত্তমার মা বলেন, “ওঁর মন আছে বলে মনে করি না। নামটাও মুখে নেব না।” সাংবাদিকরা তিলোত্তমার মা-বাবাকে প্রশ্ন করেন, আপনারা তো বলছেন কুণাল ঘোষ সেটিং করতে গিয়েছিলেন সিবিআই-এর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতিতার মা-বাবা বলেন, “হ্যাঁ, আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে এই বিষয়টা নিয়েই তদন্ত হোক।”
এরপর তিলোত্তমার মা বলেন, “আমাদের সঙ্গে উনি টাকা দিয়ে ব্যাপারটা রফা করার চেষ্টা করেছিলেন। আমাদের বাড়িতে আসেননি, তবে বলেছিলেন আপনাদের এত টাকা দিচ্ছি ব্যাপারটা মিটিয়ে নেবেন।”
এরপরই নিজের ফোন বের করেন তিলোত্তমার বাবা। তিনি একটি হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট বের করেন। সংশ্লিষ্ট চ্যাটে দেখা যায়, নাম লেখা ‘TMC Kunal Ghosh’। সেই চ্যাটটি সাংবাদিকদের দেখান তিনি।
তিলোত্তমার বাবা বলেন, “কুণাল ঘোষ প্রচুর রকম মেসেজ করেন আমাদের। বিভিন্ন ধরনের মেসেজ করেন। আমরা ভুল পথে যাচ্ছি নাকি সঠিক পথে যাচ্ছি তার পরামর্শ দেন।” এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্ন, “আর টাকার বিষয়টি?” তখন তিলোত্তমার বাবা বলেন,”তার রেকর্ডিং আমার কাছে নেই, যেহেতু হোয়াটস অ্যাপ কল ছিল। তাই এই নিয়ে বলব না।”
এরপর তিলোত্তমার মা আবার বলেন, “উনি আমাদের যে সব কথা বলেছেন… আমাদের একমাত্র মেয়ে চলে গেছে। আমাদের চোখে জল দেখে না… যেই সব কথা বলেছেন তার আইডিয়া নেই। ওঁর মান নেই, ওঁর হানি হয়েছে কি না জানি না।”
তারপর ফের ফোনে সেই চ্যাটটি খোলেন তিলোত্তমার বাবা। এরপর একটি ভিডিয়ো দেখান। তারপর বলেন, “এই ভিডিয়োটা দেখিয়ে ওঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা ব্যবস্থা নিতে পারি। উনিই পাঠিয়েছিলেন আমায় ৯ অগস্টের ভিডিয়ো। তারপর আমি ব্লক করি। আসলে ওঁর জ্ঞান আর শুনতে চাই না।” তিলোত্তমার বাবা বলেন, “মাঝে মধ্যেই ফোন আসত। মেসেজ আসত।” তিলোত্তমার মা বলেন, “আমাদের খালি মেসেজ পাঠাত-ফোন করত। আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম এর মতো লোকের ফোন ধরার দরকার নেই।”
এরপর এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “তিলোত্তমার বাবা আমায় আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, আমি নাকি ফোন করে করে রফার চেষ্টা করতাম। এতদিন বাদে বলছেন? কতটা মিথ্যা বলতে শেখালে এতদিন পর এটা বলেন। তারপর আবার নাকি হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট বের করে দেখিয়েছেন। আমি হাত জোড় করে তিলোত্তমার বাবাকে বলছি, আপনার কাছে সমন যাবে। কোর্টে এসে দয়া করে এগুলো একটু মাননীয় বিচারককে দিন। ওইভাবে না দেখিয়ে প্রিন্ট আউট করে সাংবাদিকদের দিন। সবাই দেখুন কুণাল ঘোষ তিলোত্তমার বাবাকে কী লিখেছিলেন। এগুলো নিয়ে রহস্য বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। আমি যা যা লিখেছি, আপনার ফোনে যা আছে বিচারক-সংবাদ মাধ্যমকে দিন-সোশ্যাল মিডিয়ায় দিন। মানুষ আমায় ভালবাসে। এগুলো দেখে মানুষ বুঝবে কুণাল ঘোষ লিখতে পারে। এগুলো এক বছর ধরে আমার কাছে আছে আমি দিইনি। আমি আপনার মেয়ের মৃত্যুর উপর দাঁড়িয়ে আমার ইমেজ বিল্ডিং করতে চাইনি।”