প্র দী প্ত কা ন্তি ঘো ষ
বাংলার বিধানসভার বামেরা শূন্য। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলা চলে বামেদের। তবে এখন সেই ভয়ঙ্কর দুর্দশা থেকে খুব ধীর গতিতে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর পুরভোটে প্রাপ্ত ভোটে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে বামেরা। মঙ্গলবার শুরু হওয়া সিপিআইএমের রাজ্য সম্মেলনেও (CPIM State Conference) সেই কথা উঠে আসে। সূত্রের খবর, সূর্যকান্ত মিশ্র এই বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির কথা উত্থাপন করেছেন রাজ্য সম্মেলনে। বলেছেন, “স্বাধীনতার পরে কখনও এমন কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি আমাদের। বিজেপি আর তৃণমূলের মতো দু’টি চরম প্রতিক্রিয়াশীল দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। জনসমর্থন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিধানসভায় কোনও প্রতিনিধি নেই, এমন অবস্থা আগে কখনও হয়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম ও সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে।”
কয়েক বছর আগে দলের প্লেনামে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছিল সেই সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর না হওয়া নিয়েও রাজ্য সম্মেলনে মুখ খুলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি। দলীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে ইয়েচুরি বলেছেন, “প্লেনামের পরে ৬ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও প্লেনামের সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি। কমিটিতে আছেন কিংবা দায়িত্বে আছেন, কিন্তু সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। সক্রিয়তার অভাব রয়েছে। বাংলায় সংগঠন সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে, তা বললে ভুল হবে না।” এমনটাই মনে করছেন সীতারাম ইয়েচুরি।
উল্লেখ্য রাজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনে মূলত তিনটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে, স্বাধীন ও বহুত্ববাদী মিডিয়ার সমর্থনে এবং মহিলাদের অধিকার রক্ষা ও বিকল্পের জন্য সংগ্রামের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে মঙ্গলবার। সিপিআইএম বর্তমানে হিন্দুধর্ম বনাম আরএসএস-র হিন্দুত্ব – এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক তুলে ধরার উপর বিশেষ জোর দেওয়ার কথা বলেছে বলে সূত্রের খবর। তাদের মতে আরএসএস ভারতের ধারণার বিরোধী। আরএসএস কীভাবে কাজ করে, আরএসএস এবং ইতিহাস, আরএসএস-র প্রচার, আরএসএস-বিজেপি রাজনৈতিক নীতি সহ বিভিন্ন ইস্যুকে তুলে ধরার চিন্তাভাবনা করছে সিপিআইএম। কর্পোরেট ও সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাতের বিষয়টির উপরেও জোর চর্চা চলছে সিপিআইএমের অন্দরে।
বামেদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ মেরুকরণের ভোটের ফায়দা নিতে চায় তৃণমূল। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টায় মত্ত তৃণমূল। সংখ্যালঘু বিদ্বেষের মাটি তৈরি করা হচ্ছে এ রাজ্যেও। এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার মতাদর্শগত জোরই নেই তৃণমূলের। বিভাজনেও রাজনৈতিক মদত যোগাচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি। রাজনৈতিক পরিসরে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যাপকতম সমাবেশ এই লড়াইয়ে অঙ্গ। কমিউনিস্টদের এই লড়াইয়ে সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোভিড মহামারীতে ড্রপ আউট ও স্কুলছুটের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, এ ক্ষেত্রে মেয়েদের হার অনেক বেশি, তাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সঙ্গে সাক্ষরতা কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এর পাশাপাশি গরিব শ্রমজীবী মহিলারা যাতে তাঁর কাজের জায়গায় নিশ্চিন্তে যেতে পারেন, তাই তাঁর সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন মানুষকে যুক্ত করে ক্রেশ গড়ে তোলা যায় কী না তার চেষ্টা করতে হবে।
আরও পড়ুন : Hospital Negligence: জীবিত বাবাকে মৃত বানিয়ে দিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ, অতঃপর…