“ওঁর কথা দলের কথা নয়”, ‘দু’পয়সার সাংবাদিক’ বিতর্কে মহুয়ার পাশে দাঁড়াল না তৃণমূল
গত ৪৮ ঘণ্টায় কৃষ্ণনগরের সাংসদের মন্তব্য ঘিরে জলঘোলা হওয়ার পর এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, এটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। কখনওই দলের অবস্থান নয়। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে এ কথা বলেন সুব্রতবাবু।
কলকাতা: সাংসদ মহুয়া (Mahua Moitra) মৈত্রর “দু’পয়সার সংবাদমাধ্যম” বিতর্কে এই প্রথম মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) কোনও নেতা। গত ৪৮ ঘণ্টায় কৃষ্ণনগরের সাংসদের মন্তব্য ঘিরে জলঘোলা হওয়ার পর এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, এটা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। কখনওই দলের অবস্থান নয়। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে এ কথা বলেন সুব্রতবাবু।
মহুয়ার বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছিল রবিবার রাত থেকেই। কিন্তু গতকাল একটি টুইট করে সেই আগুনে যেন ঘি ঢেলে দেন মহুয়া নিজেই। তির্যক সুরের ক্ষমা চাওয়ার আঙ্গিকে লেখেন, ‘সঠিক কথাই’ বলেছিলেন তিনি।
My meme-editing skills are improving! pic.twitter.com/PyO69avwRi
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) December 7, 2020
ফলস্বরূপ এদিন একাধিক সংবাদমাধ্যম মহুয়াকে বয়কট করে। দলীয় সাংসদদের এরূপ বিবৃতি নিয়ে যখন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি মহুয়ার পাশে সরাসরি দাঁড়ালেন না। সুব্রতবাবু বলেন, ‘মহুয়া কী বলেছে আমি জানি না। আমি খতিয়ে দেখিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, এটা ওঁর কথা। আমাদের দলের কথা নয়। আমাদের দল এবং দলনেত্রী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেন। হৃদ্যতা বজায় রেখেই আমরা চলি। যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন।‘ বস্তুত এই বক্তব্যের মাধ্যমেই সুব্রত স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস মহুয়ার এই মন্তব্যকে সমর্থন করছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ দলীয় সাংসদের এই মন্তব্য়ের প্রতিবাদ জানান ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। তিনি লেখেন, ‘মন্তব্যটি চরম দুর্ভাগ্যজনক। আশা করব মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের যন্ত্রণাটি অনুভব করবেন এবং তাঁর প্রতিবাদযোগ্য মন্তব্যটি থেকে সরে আসবেন।’
গোটা বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত রবিবার। রবিবার নদিয়ার গয়েশপুরে তৃণমূলের কর্মিসভায় অংশ নিতে হাজির হন মহুয়া মৈত্র। কিন্তু সাংসদের সামনেই ‘বহিরাগত’ বিতর্ক নিয়ে তুমুল কোন্দল লাগে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কিল-ঘুষি বর্ষণ হতে থাকে মহুয়ার সামনেই। তিনি কোনও মতে দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয় না। এরপরই দলীয় কর্মসূচিতে সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে।
এই বৈঠকে মাইকে বক্তব্য রাখার সময় সংবাদমাধ্যমকে ‘দু’পয়সার প্রেস’ বলে উল্লেখ করেন লোকসভার এই জনপ্রিয় সাংসদ। তিনি বলেন, “কে এই দুই পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? সরাও প্রেসকে এখান থেকে। কেন প্রেস ডাকো তোমরা দলের মিটিংয়ে। কর্মী বৈঠক হচ্ছে আর সবার পেপারে ও টিভিতে মুখ দেখানোর শখ।” সংবাদমাধ্যমকে তিনি কেন এমন আক্রমণ করলে তা জানতে চাওয়া হলে মহুয়ার জবাব ছিল, ‘আমি তো আপনাদের রেকর্ড করতে বলিনি।’
আরও পড়ুন: দু’পয়সার বিতর্ক: ‘সঠিক’ মন্তব্যে অনড় মহুয়া, ‘ক্ষমা’ চাইলেন মিমে
এরপর মনে করা হয়েছিল, নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি ক্ষমা চাইবেন। সেই মতো গতকাল ক্ষমা তিনি চান ঠিকই, তবে মিম পোস্ট করে এমন তির্যক কথা লেখেন, তাতে আঁতে আরও বেশি ঘা লাগে সাংবাদিককূলের। মহুয়া ‘আমি ক্ষমাপ্রার্থী’ লেখেন ঠিকই। সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘কঠিন, বেদনাদায়ক এবং সঠিক কথা বলার জন্য আমি দুঃখিত।’ সাধারণত রসিকতা করতেই সোশ্যল মিডিয়ায় ব্যবহার হয় মিম। তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ‘ক্ষমা’ চাওয়ার আদৌ যৌক্তিকতা কতটা?