বকুনির পর সোশ্যাল মিডিয়ায় দল নিয়ে ‘স্পিকটি নট’ মদন

"অফিসে যেমন কোলিগরা বলে চল ঝালমুড়ি খাই, এটা তেমনি দলের ভিতরের একটা কথা। দল ইউনাইটেড। এ নিয়ে এত ভাবার কোনও মানে হয় না।''

বকুনির পর সোশ্যাল মিডিয়ায় দল নিয়ে 'স্পিকটি নট' মদন
ছবি - ফেসবুক
Follow Us:
| Updated on: Jun 05, 2021 | 10:36 PM

কলকাতা: “নমস্কার আমি মদন মিত্র। আধ ঘন্টা পর লাইভে আসছি।” যখন সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি কিছুটা ব্যাকফুটে তখন ফেসবুকে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরেছিলেন মদন মিত্র (Madan Mitra)। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিত্ব হিসবেই নিজের একটা পরিচয় বানিয়েছিলেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা যে কোনও বড় ইউটিউবার বা সেলেবকেও টক্কর দিতে পারে। ফেসবুকে মদন মিত্র লাইভ, কিংবা মদনের প্যারডি গানের ভিডিয়োর জনপ্রিয়তা নেটাগরিকদের একটি অংশের পছন্দের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু শনিবার তৃণমূলের (TMC) মেগা বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় মদন অনুরাগীরা হয়ত কিছুটা ধাক্কা পাবেন। কারণ, তাঁদের প্রিয় ‘মদনদা’ আর রাজনৈতিক বিষয় (বিশেষত নিজের দলের) নিয়ে ফেসবুকে কোনও মন্তব্য করবেন না।

শনিবারের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রীরা আর জেলা সভাপতি থাকতে পারবেন না। মন্ত্রীদের গাড়িতে লালবাতি লাগানো যাবে না। একই সঙ্গে ফেসবুক-সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ইচ্ছে পোস্ট করা যাবে না। এমনকি, লাইভ করে দল সম্পর্কে যা ইচ্ছে বলা যাবে না। সূত্রের খবর, সে কারণে শনিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকও খেতে হয়েছে মদনকে। কিন্তু তার পরেও সেই ফেসবুক লাইভ করলেন কামারহাটির বিধায়ক। কারণ,  দলের তরফে এই নির্দেশ যখন এল, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ফেসবুক লাইভে দলনেত্রীর কাছে বিশেষ দায়িত্ব চেয়েছিলেন মদন মিত্র।

তিনি বলেছেন, ‘দরকার হলে দায়িত্ব দিয়ে দেখুন ৩ মাসের মধ্যে কামারহাটির চেহারা বদলে দেব। কোনও দিন বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।’ দলেরই এক শ্রেণির নেতাদের ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাঁদের মনে করেন দুদুভাতু খায়, তাঁরা যে কী জিনিস…’, যদিও এই ভিডিয়োটি পরে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়। আর তার অব্যবহিত পরেই দলের তরফে এল এই নির্দেশ। এ নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া কামারহাটির বিধায়কের?

মদনের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ভাল বলেছেন। যা বলা একজন নেত্রীর, ঠিক তাই বলেছেন। যা দেশের নিয়ম, যেটা অন্যায়, যেটা মানুষ অপছন্দ করেন… ঠিকই করেছেন।” মন্ত্রীদের গাড়িতে লালবাতি লাগানো যাবে না বলে দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে মমতার প্রশংসা করে মদন বলেন, উনি তো নিজের গাড়িতে কোনও বাতিই লাগাননি।

কিন্তু ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে মদনের কী বক্তব্য? এ নিয়েও কোনও আপত্তি দেখছেন না মদন মিত্র। বলেন, “ফেসবুকে যেটা মানুষ পছন্দ করে সেটাই বলা উচিত।” তাহলে ফেসবুকে আর তিন মাসের জন্য কামারহাটির দায়িত্ব দিন, এরকম আর্জি আর জানাবেন না? মদন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, “অফিসে যেমন কোলিগরা বলে চল ঝালমুড়ি খাই, এটা তেমনি দলের ভিতরের একটা কথা। দল ইউনাইটেড। এ নিয়ে এত ভাবার কোনও মানে হয় না।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযুক্তি, “দল যা বলবে তাই শুনব। নিশ্চয়ই শুনব।”

আরও পড়ুন: জাতীয় স্তরে উত্তরণ অভিষেকের, ছাড়লেন যুব তৃণমূল সভাপতির পদ 

এর পর বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে দলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মদন। জানান, “ছোট ভাই ছিল আজ আমার নেতা হয়ে গিয়েছে। যেখানে মমতা, অভিষেক বলবেন সেখানেই যাব। এর পর ফের শুভেন্দুকে কটাক্ষ তাঁর মন্তব্য, যে জায়গায় অভিষেককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন, সেখানেই যাব।” এর পর মদনের সংযুক্তি, “অনেকে জিজ্ঞেস করেন, দিদি কী বকলেন? দিদির কাছে আমার ফেসবুকের চেয়ে ফেস ভ্যালু বেশি। কোথাও কোনও দাগ নেই। কাটা, ছেঁড়ার দাগ নেই।’’ পাশাপাশি সেই ফেসবুক লাইভ থেকে হাসি মুখেই মদন জানালেন, ‘‘কাল থেকে সেই মদন মিত্রকে আর পাবেন না, যাঁকে কথায় কথায় পেতেন।”