কলকাতা: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কি গ্রেফতার করতে চায় রাজ্য সরকার? এই জল্পনা উস্কে গিয়েছে মঙ্গলবার। কারণ সোমবার হাইকোর্ট শুভেন্দুকে রক্ষাকবচ দেওয়ার পর এ দিনই সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সিঙ্গেল বেঞ্চ শুভেন্দুর গ্রেফতারির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে মঙ্গলবার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায় রাজ্য।
শুভেন্দু অধিকারীকে কেন রক্ষাকবচ? সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেছে রাজ্য। গতকাল শুভেন্দু অধিকারীর প্রাক্তন দেহরক্ষী মামলা-সহ তিনটি মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গলবেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করল রাজ্যের। কাল শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে।
প্রসঙ্গত, গতকালই এই মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থা উল্লেখ করেন, ‘গ্রেফতার আসলে প্রতিহিংসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই দেশে এটাই প্রচলিত, কোনও নতুন কিছু নয়। তিন বছরে কিছু হয়নি৷ এমনকি স্ত্রীও আসেন নি। এটাই উদ্বেগের।’ তিনি আরও বলেন, ‘বলছি না তদন্ত করবেন না। গ্রহণযোগ্য কিন্তু এই মুহুর্তে জরুরি কি না সেটা দেখতে হবে।’ গতকাল শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হওয়া পাঁচটি মামলার শুনানি হয়, তার মধ্যে তিনটি মামলর তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
দেহরক্ষী খুনের মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থার প্রশ্ন করেন, “কোনও বিশেষ কারণ আছে? যার জন্য এই মামলার নতুন করে তদন্ত করতে হচ্ছে?” জবাবে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত পাল্টা প্রশ্ন করেন, “শুভেন্দু কেন সিবিআই তদন্তের কথা বলছেন? একজন বিরোধী দলের নেতা, একজন বিধায়ক কিভাবে তদন্ত এড়াতে পারেন?” এরপর বিচারপতি আরও বলেন, ‘তিন বছর প্রয়োজন হল না কাউকে জিজ্ঞেস করার। এখন কি পরিবেশ বদলাল, যে তদন্ত পুনরায় শুরু করা হল? অ্যাডভোকেট জেনারেলের উত্তর ছি, “প্রাথমিক তদন্ত চলছিল। এবার আসল তদন্ত শুরু হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের প্রয়োজন হয়।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর। সেই মামলার প্রায় তিন বছর পর গত জুলাই মাসে তদন্তের দাবি তুলে এফআইআর দায়ের করেন শুভেন্দুর প্রাক্তন দেহরক্ষীর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? সেই প্রশ্ন তুলে, সঠিক তদন্তের দাবিতে এফআইআর করেন নিহত দেহরক্ষীর স্ত্রী। অ্যাম্বুলেন্স পেতে অনেক দেরি হওয়ায় কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় শুভব্রতর। এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর সন্দেহ, ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেদিন দেরিতে এসেছিল? এফআইআর-এর বয়ানে সেই প্রশ্নই তোলেন সুপর্ণা।
জুলাই মাস থেকেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। শুভব্রতর পরিবারের বয়ান রেকর্ড করা হয়। একে একে ডেকে পাঠানো হয় শুভব্রতর তৎকালীন সহকর্মী তথা শুভেন্দুর বাকি দেহরক্ষীদের। আজ, সোমবার তাঁকে ভবানী ভবনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, হাজিরা দেননি তিনি। পাশাপাশি, হাইকোর্টের কাছে সুরক্ষাকবচ চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আরও পড়ুন: ‘এসএসসি-র ওপর আমার কোনও বিশ্বাসই নেই’, আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠল একাধিক প্রশ্ন