
কলকাতা: বিতর্ক আর অভিযোগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না স্কুল সার্ভিস কমিশনের(SSC)। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মাস সাতেক আগেই ২০১৬ সালের এসএসসি-র পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর। আবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরেও প্রথম থেকে বিতর্ক। এবার একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করার পর নতুন অভিযোগ উঠল। চিহ্নিত অযোগ্যকে ডাকা হয়েছে ইন্টারভিউয়ের জন্য। আর এই অভিযোগ ঘিরেই শোরগোল পড়েছে। কেন এই শোরগোল? ২০১৬ সালের এসএসসি-র প্যানেলের চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়ে কী নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্ট?
নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের জন্য যে তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি, সেখানে নাম রয়েছে রায়গঞ্জের নীতীশ রঞ্জন বর্মণের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে যে চিহ্নিত অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে নীতীশ রঞ্জন বর্মণের নাম রয়েছে। নীতীশের স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামীর নামই চিহ্নিত অযোগ্য তালিকায় ছিল।
এখানেই উঠছে প্রশ্ন। একজন চিহ্নিত অযোগ্য কীভাবে লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চিহ্নিত অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছিল এসএসসি। এরপর চিহ্নিত অযোগ্যদের কেউ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বসার জন্য আবেদন জানালেও তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করা হয়। সেখানে কী করে পরীক্ষায় বসলেন ওই চিহ্নিত অযোগ্য চাকরিহারা?
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়ে কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট?
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ৩ এপ্রিল ২০১৬ সালের এসএসসি-র প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দেওয়ার সময় কলকাতা হাইকোর্টের রায় কার্যত বহাল রেখেছিল শীর্ষ আদালত। আর সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, বিশেষভাবে সক্ষম চাকরিহারারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। প্রয়োজনে বয়সের ছাড় ও অন্যান্য ছাড় পাবেন। একইভাবে যাঁরা চিহ্নিত অযোগ্য নন, তাঁরাও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। তাঁরাও বয়সের ছাড় পাবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামায় চিহ্নিত অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
আর হাইকোর্ট তার রায়ে কী বলেছিল?
কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, কোনও চিহ্নিত অযোগ্য নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ
আদালতের এই নির্দেশের পরও কী করে চিহ্নিত অযোগ্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুধু লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নয়, চাকরির অভিজ্ঞতার জন্য নম্বরও দেওয়া হয়েছে। আর এই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। এই নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে এসএসসি সূত্রে খবর, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছে। প্রার্থীদের নথি ভেরিফিকেশন হবে। সেক্ষেত্রে কোনও চিহ্নিত অযোগ্য ডাক পেলে, তাঁর নাম বাদ যাবে।
এই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ভেরিফিকেশনের পর নাম বাদ গেলে কি নতুন তালিকা প্রকাশ করতে হবে? আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “অনেকে বলছেন, আদৌ শিক্ষক নন, এমন অনেকে নিজেদের পড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। ফলে ওখানে ১০ নম্বর পেয়েছেন। এখন ভেরিফিকেশনের পর দেখা গেল, তাঁদের নাম বাদ গেল। তাহলে কী হবে? তালিকা আবার পুনরায় তৈরি করতে হবে। আগে ভেরিফিকেশন করে তালিকা দিতে কী অসুবিধা ছিল?”