Governor C V Anand Bose: বর্ষপূর্তির লগ্নে রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা রাজ্যপাল, বললেন অন্তরের কথা
Governor C V Anand Bose: প্রসঙ্গত, আচার্য বিলে সই করা নিয়ে যে বিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল, তা গড়ায় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ জটিলতায়। যার জল গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্তও। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় উপাচার্য নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতে হয় শীর্ষ আদালতকে
কলকাতা: বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। আদ্যান্ত বাঙালিয়ানায় সেই বিশেষ মুহূর্ত উদযাপন করতে চলেছেন রাজ্যপাল বোস। এই এক বছরে রাজ্য-রাজ্যপাল সম্পর্কের একাধিক ‘শেড’ দেখেছেন বঙ্গবাসী। রাজ্যপাল হিসাবে আসার পর সরস্বতী পুজোয় রাজভবনে তাঁর হাতেখড়িই হোক, কিংবা নবান্নের সঙ্গে তাঁর মিষ্টি বিতরণের পর্ব। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সম্পর্কে ছায়া পড়েছে অতীত অভিজ্ঞতার। একাধিক ইস্যুতে রাজ্য-রাজ্যপালের দ্বৈরথেরও সাক্ষী থেকেছে বাংলা। রাজ্যপালের আসনে তাঁর বছর পূর্তির লগ্নে এসে রাজ্যপাল TV9 বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করলেন, রাজ্যের সঙ্গে তাঁর কোনও দ্বন্দ্ব নেই।
মঙ্গলবার রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। তারপরই TV9 বাংলাকে একান্তে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দেন। রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যের তোলা সমান্তরাল সরকার চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে। তাতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বোস বলেন, “রাজ্য ও রাজ্যপালের মধ্যে কোনও সংঘাত রয়েছে বলে আমি মনে করি না। সমালোচনা বাইরে থেকে আসে। সেগুলিকে গ্রাহ্য করার কোনও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।”
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়। তারপর আচার্য বিল আর রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে জটিলতা বাড়ে। যার জল গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্তও। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় উপাচার্য নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতে হয় শীর্ষ আদালতকে। তাছাড়াও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক বিলে সই না করারও অভিযোগ তোলে রাজ্য। বোসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনি কি আপনার প্রশাসনিক সহকর্মীর কাছে কোনওভাবে রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে উঠছেন?”
রাজ্যপাল উত্তরে বলেন, “আমি কারোর কাছেই চ্যালেঞ্জ নই। কোনও ব্যক্তির কাছে তো নই-ই। আমি মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। যদি রাজভবনের হঠাৎ কোনও সিদ্ধান্তে সমালোচনা হয়ে থাকে, সেটা মেনে নিই। কারণ গণতন্ত্রে সমালোচনা রয়েছে, বিতর্কও।” পাশাপাশি রাজ্যের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “সমালোচনা আমার কাছে শিক্ষনীয়। আমার করা সমালোচনা থেকেও রাজ্য শিক্ষা নিক।”
উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে জটিলতা প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, “এটা একটা ইস্যু হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। আমি আশা করছি, রাজ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হবে।”
রাজ্যে এই মুহূর্তে চলছে শিল্প সম্মেলন। সেখানে রাজ্যপালকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্যের যে কোনও ভাল সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি আছি। এটা কোনও নিয়ম নেই যে বিজনেস সামিটে রাজ্যপালকে ডাকতেই হবে।” তবে রাজ্যের যে কোনও খারাপ পরিস্থিতি, সে দুর্নীতি হোক কিংবা সন্ত্রাস, রাজভবন যে একসঙ্গে লড়তে প্রস্তুত, তার বার্তা দেন রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল হিসাবে নিজের বর্ষপূর্তিতে উদযাপনে মেতেছেন বোস। ২৩ নভেম্বর থেকে রাজভবনে একাধিক আয়োজন থাকছে। সে বৃত্তি প্রদানই হোক, কিংবা ‘মিল উইথ গর্ভনর’-এর মতো কর্মসূচি। অর্থাৎ রাজভবনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজ করবেন রাজ্যপাল। আমাদের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এরকম একাধিক জনপ্রতিনিধি, নেতা নেত্রীদের দেখা গিয়েছে, গ্রাম বাংলায় নিতান্ত সাধারণ অতি নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়িতে পাত পেড়ে খেতে। বিশ্লেষকদের মতে, তা রাজনৈতিক জনসংযোগের হাতিয়ারই বটে। কারণ জনপ্রতিনিধিরা এটাই বোঝাতে চান, তাঁরা সাধারণের জন্য। তাহলে রাজ্যপালের কেন এমন উদ্যোগ? প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল তাঁর কাছে।
রাজ্যপাল তারও উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, “আমি একজন সিভিল সার্ভেন্ট। আমি সাধারণ মানুষের জন্যই। আমার প্রাথমিক কাজ, সাধারণের জন্য কাজ করা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকা। আমি কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতো আচরণ করছি না। আমি গণতন্ত্রের রক্ষা করছি।”