Hindustan Samachar: ‘আমরা কোথায় বাস করি? ভারত না উত্তর কোরিয়া?’, প্রসার ভারতীর চুক্তি নিয়ে সরব বিরোধীরা
Prasar Bharati contract with Hindustan Samachar: এবার থেকে দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওতে খবরের জোগান দেবে দিল্লির সংবাদ সংস্থা 'হিন্দুস্তান সমাচার'। এই নিয়ে একযোগে মোদী সরকারের সমালোচনা করল বিরোধীরা।
নয়া দিল্লি: এবার থেকে দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওতে খবরের জোগান দেবে দিল্লির সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্তান সমাচার’। এই বিষয়ে হিন্দুস্তান সমাচারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে প্রসার ভারতী। এর আগে প্রসার ভারতীর সঙ্গে এই বিষয়ে চুক্তি ছিল ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির অলাভজনক সমবায়, প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বা পিটিআই-এর। ২০২০ সালে সেই চুক্তি থেকে সরে এসেছিল প্রসার ভারতী। এদিকে একেবারে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই হিন্দুস্তান সমাচার ডানপন্থী রাজনীতি ঘেঁষা বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। উল্লেখ্য এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা সংগঠনের প্রথম সাধারণ সম্পাদক শিবরাম শঙ্কর আপ্তে। এই কারণেই ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে হিন্দুস্তান সমাচারের এই চুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে নয়া বিতর্ক। এমনকি, ‘আমরা কি উত্তর কোরিয়ায় আছি?’, এমন প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম নেতা পিনারাই বিজয়ন, এই চুক্তিকে বিরোধী মতের কন্ঠরোধ করে, খবরের গৈরিকীকরণ করার অভিযোগ করেছেন। এই ধরণের ‘সাম্প্রদায়িক প্রকল্প’কে রুখতে দেশের সব ‘ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে বলেছেন, “দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওতে খবরের নামে একচেটিয়াভাবে আরএসএস-এর তৈরি বিষয়বস্তু সম্প্রচার করবে।” সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ্যাকের মতে, প্রসারভারতীকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়ার বদলে, এই সংস্থাকে আরএসএস-এর পদানত করা হল।
২০১২ থেকে ২০১৬ -টানা চার বছর প্রসার ভারতীর কার্যনির্বাহী কর্তার পদে ছিলেন প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। বর্তমানে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ। তিনি বলেছেন, “অবশেষে। প্রসারভারতী এবং বিজেপিকে একিভূত করলে সবথেকে ভাল হয়।” তেলঙ্গানা যুব কংগ্রেসের নেতা রামশেট্টি বিষ্ণু, সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে, উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে বর্তমান ভারতের তুলনা টেনেছেন। প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের ইচ্ছে ছাড়া কোনও কিছু করা যায় না। সংবাদ পরিবেশনের উপরও কড়া সেন্সরশিপ রয়েছে। এই অবস্থায় রামশেট্টি বিষ্ণু প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কোথায় থাকি? ভারতে না উত্তর কোরিয়ায়?”
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে, হিন্দুস্তান সমাচারের সঙ্গে খবর সংগ্রহ সংক্রান্ত চুক্তির পিছনে কোনও রাজনীতি থাকার দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝোঁক আছে বলে, হিন্দুস্তান সমাচারকে এই বরাত দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রসার ভারতীর সিইও গৌরব দ্বিবেদী। তিনি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত একেবারেই ব্যবহারিক সুবিধা বিচারে নেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কথাও বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু, সবগুলিই ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় উপলব্ধ। অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তারা খবর পরিবেশন করে না। একমাত্র হিন্দুস্তান সমাচারই হিন্দি-ইংরাজির বাইরে বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় খবর দেয়। আর এই কারণেই প্রসার ভারতীকে সংবাদ জোগানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হিন্দুস্তান সমাচারকে।