AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পদবীর ইতিহাস: ঘোষেরা কারা জানেন? ঘোষ পদবী কীভাবে এল বাংলায়?

Ghosh Surname History: বাংলায় মূলত চার প্রজাতির গোয়ালা আছে। ঘোষ, গোপ, সদগোপ ও যাদব। মনে করা হয় গোষ্ঠ থেকে গুষ্ঠ বা গূষ্ঠ হয়ে গুহ পদবিরও উৎপত্তি। এখানেই শেষ নয়, ঘোষ পদবীর উৎস নিয়ে আরও নানা মত রয়েছে।

পদবীর ইতিহাস: ঘোষেরা কারা জানেন? ঘোষ পদবী কীভাবে এল বাংলায়?
কোথা থেকে এল এই ঘোষ পদবী?Image Credit: Meta AI
| Updated on: Apr 26, 2025 | 6:48 PM
Share

কথায় বলে ‘যত দোষ, নন্দ ঘোষ’! অবশ্য ঘোষরা যে কেবল দোষের ভাগীদারই হন এমনটা নয়। ঋষি অরবিন্দের মতো মনীষীর পদবীও ঘোষই। আমাদের আশেপাশে তাকালেই এমন বহু নামী-অনামী ব্যক্তির পদবী ঘোষ পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হল কোথা থেকে এল এই ঘোষ পদবী? কী ভাবে তাঁরা ঘোষ হয়ে উঠলেন? জানুন কী বলছে ইতিহাস!

ভাষাবিদদের কেউ কেউ বলেন, ঘোষ পদবীর উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘গোষ্ঠ’ শব্দ থেকে। সংস্কৃত ‘গোষ্ঠ’ শব্দের ইংরেজি তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘গ্রূপ’। আবার গরুর মতো কিছু প্রাণী গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বিচরণ করে। তাই গরু কে সংস্কৃতে গোষ্ঠ বা গো বলা হয়। গোষ্ঠ থেকেই গো, গরু, প্রভৃতি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

আর গরু যারা পালন করেন তাঁদের বলা হয় গোষ্ঠ জাতি। সেই গোষ্ঠ জাতি থেকেই ঘোষ পদবীর উৎপত্তি বলে মত। অর্থাৎ গো পালকদের একটা সময়ে ঘোষ বলা হত। ঘোষ বলতে গোয়ালা জাতিকেই বোঝানো হয়।

বাংলায় মূলত চার প্রজাতির গোয়ালা আছে। ঘোষ, গোপ, সদগোপ ও যাদব। মনে করা হয় গোষ্ঠ থেকে গুষ্ঠ বা গূষ্ঠ হয়ে গুহ পদবিরও উৎপত্তি।

এখানেই শেষ নয়, ঘোষ পদবীর উৎস নিয়ে আরও নানা মত রয়েছে। ভাষাবিদদের একাংশের মতে ঘোষ পদবীর উৎপত্তি অন্তঃনাম থেকে। অন্তঃনাম থেকে পদবীর উৎপত্তির বিষয়টি আরও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। মূল পূর্বপুরুষকে সম্মান জানাতে তাঁর নামের একটা অংশকে নিজের নামে রাখার প্রবণতা থেকেই জন্ম পদবীর। যেমন ধরুন রাজা শ্রীগুপ্তের পরেই সূচনা হয় গুপ্ত সাম্রাজ্যের। এই পদবী এসেছে শ্রীগুপ্তের নাম থেকেই। একই ভাবে ঘোষ পদবীর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।

অশ্বঘোষ, মিত্রঘোষ, বেদঘোষ, রুদ্রঘোষ, মন্ত্রঘোষ ইত্যাদি নামের প্রাচীন বাঙালিদের নামের শেষাংশ বংশ পরম্পরায় ব্যবহৃত হতে হতে ক্রমে পদবীতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ঘোষেদের মধ্যেও রয়েছে বেশ কিছু ভাগ। মনে করা হয় এই বাংলার যারা কায়স্থ ঘোষ তাঁরা মূলত সৌকালীন গোত্রীয় মকরন্দ ঘোষের উত্তরসূরী। দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ ঘোষেদের সকলেরই গোত্র সৌকালীন। এঁরা কুলীন হিসাবে পরিচিত।

আগেই বলেছি গোয়ালা সম্প্রদায়ের মানুষের পদবীও ঘোষ, সদগোপ ইত্যাদি। এই ঘোষেরা বিভিন্ন গোত্রের হয়ে থাকে। যেমন ধরুন মোদগল্য/মধুকুল্য, কাশ্যপ, শান্ডিল্য, নাগঋষি, আলিম্যান ইত্যাদি।

এদের পরস্পরের জাতিগত পেশার অমিল দেখা যায়। সদগোপরা কৃষিজীবি সম্প্রদায়, গোয়ালারা দুগ্ধব্যবসায়ী। গোয়ালা ঘোষরা পশ্চিমবঙ্গে ও.বি.সি সংরক্ষণের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সদগোপ ঘোষেরা বিহার এবং ঝাড়খন্ডে ও.বি.সি হলেও পশ্চিমবঙ্গে জেনারেল হিসেবে গণ্য করা হয়।

ঘোষ পদবীর উৎস নিয়ে রয়েছে আরও মত। কেউ কেউ মনে করেন ঘোষ হল আভীর বা যাদব জাতির পদবী। ঘোষ শব্দের অর্থ আওয়াজ, ধ্বনি,ডাক, চিৎকার,শব্দ ইত্যাদি।

নাট্যশাস্ত্রের রচয়িতা ভরতমুনির মতে আহিরানী,আহিরাটী প্রাকৃতে ঘোষ ধ্বনির ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। এখান থেকেই আভীর জাতির মধ্যে ঘোষ পদবীর উত্পত্তি হয়েছে। বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রে আভীর জাতির বাসস্থানকে ঘোষ পাড়া,ঘোষপল্লী বলা হয়েছে। সেই থেকেও ঘোষ পদবী এসেছে বলে মনে করা হয়।

ঘোষ পদবী মূলত ৩ প্রকার।

১. কুলীন/কায়স্থ ঘোষ- একটা সময়ে বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজ ৬ ভাগে বিভক্ত ছিল। দক্ষিণ রাঢ়ী, বঙ্গজ, উত্তর রাঢ়ী, বারেন্দ্র, মধ্যশ্রেণী এবং সিলেটী।

মকরন্দ ঘোষ, দশরথ বসু, কালীদাস মিত্র, পুরুষোত্তম দত্ত ও দশরথ গুহ পঞ্চ কায়স্থ কনৌজ থেকে আসেন বাংলায়। প্রথমে এঁদের ৫ পরিবার কায়স্থ সমাজে কুলীন বলে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজা বল্লাল সেনের সময়ে সমাজ সংস্কার হলে দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থদের মধ্যে ঘোষ, বসু, ও মিত্র কৌলিন্য উপাধী পান। কৌলিন্য প্রথা অনুসারে তাই এই পদবীধারীর বিয়ে হত নিজেদের মধ্যে। নাহলে কুল ভঙ্গ হত।

উত্তর রাঢ়ী কায়স্থদের মধ্যে শান্ডিল্য ও বাৎস্য গোত্রীয় ঘোষ পাওয়া যায়, কিন্তু তাঁরা কুলীন নয়। বারেন্দ্র, মধ্যশ্রেণী ও সিলেটী সমাজে ঘোষ পদবি কায়স্থদের মধ্যে পাওয়া যায় না

২. গোয়ালা/যাদব ঘোষ- এরা হলো যদু বংশের। এদেরও তাই ,শুধু নিজেদের মধ্যে বিয়ের চল ছিল। মূলত পশুপালন করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন এঁরা।

৩. সদগোপ – সদগোপ বর্ণের মধ্যে অনেক পদবী পড়ে। তার মধ্যেই একটি হল ঘোষ।