Poila Baisakh 2022: বছর পয়লায় বাঙালির শেষপাতে থাকুক একটু মিষ্টি, ভুরিভোজ জমুক সাবেক-ফিউশন মিষ্টান্নে

Poila Boisakh Special Sweets: কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এবার বছর পয়লা একটু শুভ হবে বলেই আশাবাদী সকলে। আর তাই ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে সব দোকানই একদম কোমর বেঁধে প্রস্তুত।

Poila Baisakh 2022: বছর পয়লায় বাঙালির শেষপাতে থাকুক একটু মিষ্টি, ভুরিভোজ জমুক সাবেক-ফিউশন মিষ্টান্নে
বছর পয়লায় মুখমিষ্টি হোক সকলের।
Follow Us:
| Updated on: Apr 15, 2022 | 10:39 AM

শেষপাতে একটু মিষ্টি না হলে বাঙালির ভুরিভোজ ঠিক জমে না। আর উপলক্ষ্য যখন পয়লা বৈশাখ, তখন মিষ্টিমুখ তো করতেই হবে। কিন্তু কী মিষ্টি খাবেন? সাবেক নাকি ফিউশন… বছর পয়লায় আপনার পাতে কোন দোকানের কোন মিষ্টিটা অবশ্যই থাকা উচিত তারই হদিশ দেওয়ার চেষ্টা করেছে TV9 বাংলা। বাংলার নামজাদা মিষ্টির দোকানের কর্ণধাররা কিন্তু বলছেন বছরভর ফিউশনের চাহিদা থাকলেও পয়লা বৈশাখে প্রায় সকলেই একটু সাবেকি মিষ্টি কেনেন। সেই সঙ্গে দোকানে এসে প্রায় সকলেই খোঁজ করেন ‘নতুন কী আছে এবার’। কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এবার বছর পয়লা একটু শুভ হবে বলেই আশাবাদী সকলে। আর তাই ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে সব দোকানই একদম কোমর বেঁধে প্রস্তুত। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন দোকানে বছর পয়লায় ‘স্পেশ্যাল’ কী থাকছে।

কে সি দাশ:

রসগোল্লার জন্য এই দোকান শুধু বঙ্গে নয়, সাগরপাড়েও বিখ্যাত। তাই বছর পয়লায় রসগোল্লার চাহিদা তো থাকছেই। সেই সঙ্গে গ্রাহকদের জন্য থাকছে আরও অনেক মিষ্টি। নামেই তাদের যা বাহার, খেতে নিঃসন্দেহে সরেস হবেই। কর্ণধার ধীমান দাশ জানালেন, পয়লা বৈশাখে ১০০ থেকে ১২৫ রকমের মিষ্টি থাকছে। ছানার সঙ্গে ফ্রেশ ক্রিম মিশিয়ে তৈরি হয়েছে একটা সন্দেশ। উপরে রয়েছে সরের প্রলেপ। মুখে দিলেই মিলিয়ে যাবে। একটায় এলাচ দেওয়া হয়েছে বলে নাম ‘এলাচ মালাই রোল’। আর একটা কেশর দিয়ে বানানো হয়েছে তাই ‘কেশর মালাই রোল’। এ ছাড়াও ‘নববর্ষিকা’ বলে একটা মিষ্টি প্রতিবারই হয়। এবারও সেটা থাকছে। ধীমানবাবু জানিয়েছেন, ক্রেতার বয়সের ফারাক হয়েছে বটে, কিন্তু তাঁদের দোকানে লোকে এখন সাবেক মিষ্টি খুঁজতেই আসেন। তাই রসগোল্লা, লবঙ্গলতিকা (ভাজা মিষ্টি), জলভরা সন্দেশ, রসমালঞ্চ (মালপোয়া রোল-ক্ষীর আর সন্দেশ মিশিয়ে করা)। এ ছাড়া অমৃতির চাহিদাও খুব বেশি। তবে সবসময় অত পরিমাণে করে ওঠা হয় না।

নকুড়:

কলকাতার অন্যতম পুরনো মিষ্টির দোকান গিরীশ চন্দ্র দে এবং নকুড় চন্দ্র নন্দী। এই দোকানের কর্ণধার প্রজেশ নন্দী জানালেন, বছরভর ক্রেতারা যেমন মিষ্টি কেনেন, সেই অনুযায়ীই মিষ্টি তৈরি করেন তাঁরা। আলাদা করে স্পেশ্যাল কিছু তৈরি হয় না। আর বছর পয়লায় নকুড়ে সাবেক মিষ্টি যেমন বিকোয়, তেমনই পাল্লা দেয় চকোলেট, বাটারস্কচ সন্দেশ। আগে লোকে সাদা সন্দেশ আর নরমপাকই বেশি পছন্দ করতেন। জলভরা নরম পাকের সাদা সন্দেশ, বরফি, মৌসুমী সন্দেশ, গোলাপ সন্দেশ—এইসবই ছিল ক্রেতাদের মূল পছন্দ। তবে এখন কড়াপাক আর ফিউশনও থাকে সমানতালে। ম্যাঙ্গো সন্দেশ, চকোলেট সন্দেশ বা বাটারস্কচ সন্দেশের সঙ্গে লোকে কিন্তু একটু জলভরা বা মৌসুমী কিংবা গোলাপ সন্দেশও কেনেন। কড়াপাকের ১লা বৈশাখ লেখা বা শুভ পয়লা বৈশাখ লেখা মিষ্টিও থাকে। পুরনো দিনের মিষ্টি আর নতুন ফিউশন—সবই থাকছে। তবে এই দোকানে এলে হাল্কা মিষ্টির লেবু সন্দেশ, দিলখুশ সন্দেশ, মালাই রোল আর পারিজাত সন্দেশ… এগুলো চেখে দেখার কথাও বলছেন প্রজেশবাবু। করোনার দাপট কাটিয়ে এবার সবাই পয়লা বৈশাখে একটু আনন্দে মিষ্টিমুখ করবেন এই আশাই রাখছেন তিনি। তাই সকলের স্বাদ অনুযায়ী শখ পূরণের ব্যবস্থা রাখছেন কলকাতা অতি প্রাচীন এই মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।

বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক:

এই দোকানের অন্যতম প্রধান প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা সন্দেশ প্রতিবারের মতো এবারও থাকছে। এর সঙ্গে থাকছে পানের ফাঁদ সন্দেশ। বাঙালিয়ানার সঙ্গে পানের একটা সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে। আর তাই এই সন্দেশের আবিষ্কার। এছাড়াও এখন আমের সময়। তাই পয়লা বৈশাখের দিন থেকেই থাকছে ম্যাঙ্গো জিলাতো। এর সঙ্গে ম্যাঙ্গো সুফলে, আমের মালাই চমচম, আমের আবার খাবো সন্দেশও থাকছে। এছাড়াও থাকছে লিচুর পায়েস। আর লিচুর ভিতরের বীজ ফেলে দিয়ে ছোট গুলাবজামুন স্টাফ করে তৈরি হচ্ছে একটা স্পেশ্যাল মিষ্টি। যেটা খাওয়ার সময় দেখে মনে হবে বীজ রয়েছে, কিন্তু আদতে সেটা গুলাবজামুন। এর পাশাপাশি চকোলেট গনাশ বলে একটা সন্দেশ থাকছে। বিভিন্ন ধরনের দইয়ের সম্ভারও থাকছে বছর পয়লায়। পয়োধি বা এমনি মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে থাকছে ব্লুবেরি দই। যাঁরা হাল্কা মিষ্টি পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য থাকছে ডাব সন্দেশ (ডাবের জল আর শাঁস দিয়ে তৈরি), সরের রোল, স্নো-হোয়াইট সন্দেশ। বছর পয়লায় অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ডাবের রাবড়ি। তবে এত ফিউশনের ভিড়ে সাবেক মিষ্টি কেনার চল যে ক্রেতাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যায়নি, সেকথাও জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো মিষ্টি পছন্দ করেন না। কিন্তু মিষ্টি তো বাঙালির আভিজাত্য। তাই সকলেই যেন অন্তত বছর পয়লায় একটু মিষ্টিমুখ করতে পারেন সেই জন্যই বিভিন্ন ফিউশনের মিষ্টি বানানো হয়।’’

ফেলু মোদক:

হুগলি জেলার প্রখ্যাত মিষ্টির দোকান ফেলু মোদক। বয়স প্রায় ১৭৪ বছর। করোনাকাল কাটিয়ে এবছরের পয়লা বৈশাখে তাই সেজে উঠেছে এই মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। কর্ণধার অমিতাভ দে জানিয়েছেন, প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে একটা নতুন মিষ্টি থাকে। এবারও যেমন থাকছে আমের রাবড়ি। গোয়ার কাছে রত্নগিরি থেকে আম এনে তার পাল্প দিয়ে তৈরি হয় এই রাবড়ি। এছাড়াও থাকছে ফেলু মোদক স্পেশ্যাল মোহিনী সন্দেশ। আমের রাবড়ি আর মোহিনী সন্দেশ কিন্তু পয়লা বৈশাখ থেকেই দোকানে তৈরি শুরু হয়। মোহিনীর ভিতরে সময় অনুসারে থাকে আম, গুড় বা চকোলেটের পাল্প। বছর পয়লায় কিন্তু লাড্ডু কেনেন বাঙালি। আর তাই ফেলু মোদকে থাকে বোঁদের লাড্ডু, দরবেশের লাড্ডু। এছাড়াও থাকছে ছানার মুড়কি, গজা, বালুসাই, গুটকে কচুরি। নতুন বছরে বাঙালি কিন্তু সাবেক মিষ্টিই ফিরে পেতে চায়, এমনটাই মত অমিতাভবাবুর। নোনতাতেও রয়েছে চমক। পরোটা নিমকি, পদ্ম নিমকি, তিনকোণা সাবেক নিমকি (জোয়ান দেওয়া) এইসবও থাকছে ফেলু মোদকের সম্ভারে। আর থাকছে নিরা (নারকেল ফুলের রস) দিয়ে তৈরি নো অ্যাডেড সুগার মিষ্টি। তবে পয়লা বৈশাখে ফেলু মোদকের ইউএসপি হল আম রাবড়ি, কালোজাম, ছানার মুড়কি, লবঙ্গলতিকা, লর্ড চমচম।

গ্রাফিক্স ও অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস