Buddhadeb Bhattacharya: দান করা হবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃতদেহ! কোন উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় সেই দেহ? শেষ পরিণতি বা কী?
ঠিক কোন পদ্ধতিতে তাঁর মরদেহ সংরক্ষণ করা হবে এনআরএস হাসপাতালে? বিশিষ্ট্য ব্যাক্তিদের দেহ সংরক্ষণের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে? সেই তথ্য তুলে ধরলেন, মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপিকা ডাঃ সুস্মিতা দত্ত।

প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৮ তারিখ দুপুরে পাম অ্যাভিনিউ-এর বাড়ি থেকে সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ‘পিস ওয়ার্ল্ডে’। হিমঘরেই থাকবে রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। একটু পরে তাঁর মৃতদেহ, বিধানসভা ভবন, মুজফফর ভবন, দীনেশ মজুমদার ভবন হয়ে নিয়ে যাওয়া হবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। কারণ আগামী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য নিজের দেহ দান করে গিয়েছিলেন তিনি। বিকেল ৪টে শেষ যাত্রা করে দেহদান করা হবে তাঁর।
কিন্তু ঠিক কোন পদ্ধতিতে তাঁর মরদেহ সংরক্ষণ করা হবে এনআরএস হাসপাতালে? বিশিষ্ট্য ব্যাক্তিদের দেহ সংরক্ষণের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে? সেই তথ্য তুলে ধরলেন, মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপিকা ডাঃ সুস্মিতা দত্ত।
যে কোনও হিম ঘরে দেহ রাখা হয় মূলত ‘কোল্ড স্টোরেজের’ মধ্যে। এক নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হিমাঙ্কের নীচে রাখা হয় মরদেহকে। যেহেতু এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য মরদেহকে রাখা হয় তাই কোনও রাসায়নিক বা অন্য কোনও পদ্ধতির অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ে না। ডাঃ সুস্মিতা দত্তের কথায় “এই ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনও রাসায়নিক দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। হিমঘরে যে তাপমাত্রায় মরদেহ রাখা হয়, তাতে দেড় থেকে দু’দিন দেহের কোনও ক্ষতি হয় না। তা ভাল থাকে।”
তবে সেই দেহ যদি তারপরে দান করা হয়, তা হলে তখন সেই দেহকে সংরক্ষণের জন্য কিছু বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্য নেওয়া হয়। তবে সেই পদ্ধতি শুরু করার আগে প্রয়োজন ঠিক কোন কারণে, কী পরিস্থিতিতে সেই ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে তা জানা। এমনকি মৃত্যুর সময়ে বা তার আগে কোনও কারণে কোনও অঙ্গ নষ্ট হয়ে গিয়েছে কি না তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। সেই তথ্য সঠিক ভাবে জেনে তারপর প্রয়োজন অনযায়ী দেহে একাধিক রাসায়নিক ইনজেক্ট করা হয়। সেই সব রাসায়নিক প্রয়োজন অনুসারে একেক সময় একেক অনুপাতে মেশানো হয়। দেহের অবস্থার উপরে নির্ভর করেই সেই অনুপাত নির্ধারণ করা হয়।
ডাঃ সুস্মিতা দত্ত জানাচ্ছেন, “যদি সঠিক অনুপাতে সব রাসায়নিক দেহে ইনজেক্ট করা যায় তা হলে একটি দেহ প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছর ডাক্তারি পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।” তবে তার জন্য সেই দেহের সঠিক পরিচর্যাও প্রয়োজন। আসলে বিশেষ রাসায়নিকের মিশ্রণে দেহকে সারা বছর রাখা হয়। কেবল যখন প্রয়োজন সেই সময় বার করে আনা হয়। তা ছাড়া রাসায়নিকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। বিশেষ করে এই বর্ষার মরসুমে বা গরমে আরও বেশি সাবধান হওয়া প্রয়োজন। না হলে দেহ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বর্ষাকালে ছাতা ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে এই দেহদানের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। তিনি জানান, “ডেথ সার্ফিকেট দেখে তারপরেই দেহ নেওয়া হয়। যদি কোনও দেহের পোস্টমর্টেম বা ময়না তদন্ত হয়, তাহলে সেই দেহ কোনও কাজে লাগে না। বা কোনও জটিল রোগে দেহের অঙ্গপ্রতঙ্গ আগেই নষ্ট হয়ে গেলে সেই দেহ নেওয়া হবে কি না ভেবে দেখা হয়।”
বিশেষ ব্যাক্তির দেহ সংরক্ষণের জন্য কি বিশেষ নজর দেওয়া হয়?
অধ্যাপিকা জানান, “না, একবার দেহদান করা হয়ে গেলে তারপর আর পাঁচটা দেহের মতো করেই একসঙ্গে সেই দেহকে রাখা হয়। এমনকি যখন কোনও ক্লাসে সেই দেহ ব্যবহার করা হয়, তখন ছাত্র ছাত্রীদের সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়। যাতে তাঁরা সমাজের বিশেষ কোনও ব্যাক্তির দেহ দেখলে তার সঙ্গে কোনও রকম আবেগে জড়িয়ে না পড়ে।”
মরোণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে কী বলছে আইন?
সুস্মিতা দত্ত বলেন, “এমনিতে সেই রকম আইনি জটিলতা কিছু নেই। আমরা দুটো জিনিস দেখে নিই, এক মৃত ব্যাক্তির ইচ্ছা পত্র এবং দুই নিকট আত্মীয়ের অনুমতি পত্র। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রথমটি থাকে না। কিন্তু নিকট আত্মীয়ের অনুমতি পত্র পেলে আর অসুবিধা হয় না।”
দেহ দান করলে কী চিরকাল অমলীন থাকে সেই দেহ?
না, আসলে সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছর পরে আর দেহ পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করার মতো অবস্থায় থাকে না। তখন সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশন বা পুরসভাতে খবর দেওয়া হয়, দেহের শেষ কৃত্য সম্পন্ন করার জন্য।
তবে সঙ্গে ডাঃ সুস্মিতা দত্ত জানান দেহদান মহৎ দান। এই ক্ষেত্রে যিনি দেহদান করছেন তাঁর সঙ্গেই বলতে হয় তাঁর বাড়ির লোকের কথা। কারণ নিজের প্রিয় মানুষের দেহ পড়াশোনার কাজে দান করা ছোট ব্যাপার নয়। এর জন্য অনেক বড় মনের দরকার। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা দেহ না করলে পড়াশোনা করানোই দায় হয়ে যেত।
