মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার ২৪ বছর পর ১৯৭৭-এ স্যার এডমন্ড হিলারি ও তাঁর পুত্র পিটার হিলারি গঙ্গার মোহনা থেকে উৎসমুখ পর্যন্ত একটি জেটবোট অভিযান করেন। ‘ফ্রম ওশান টু স্কাই’ শীর্ষক সেই অভিযানের স্মৃতিকে উসকে দিয়ে ৪৫ বছর পর ওই একই পথে বাইক নিয়ে অভিযানে চললেন দুই বাঙালি মাউন্টেন বাইকার। নৈহাটির সুজয় মণ্ডল আর বারাসাতের রবিশঙ্কর গায়েন ১০ সেপ্টেম্বর বাইকে স্টার্ট দিচ্ছেন। পাড়ি দেবেন প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার পথ। আর এই গোটা যাত্রাপথ জুড়ে তাঁরা ছড়াতে-ছড়াতে যাবেন গঙ্গাকে নির্মল ও নিষ্কলুষ রাখার সচেতনতার বার্তা। কথাবার্তা বলবেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে। জানবেন পুণ্যতোয়া গঙ্গার দূষণ নিয়ে তাঁদের ভাবনা।
পর্বতারোহণের প্রশিক্ষক হিসেবে ৩০টিরও বেশি রক-ক্লাইম্বিং কোর্স করিয়েছেন নৈহাটির বিজয়নগরের সুজয়বাবু। ১২টি পর্বতারোহণ অভিযানে লিডার, ডেপুটি লিডার এবং ক্লাইম্বিং লিডার হিসেবেও কাজ করেছেন। আর ২০১২-এ পাহাড়ে বাইকিংয়ের নেশায় করে ফেলেছেন দু’টি জাতীয় রেকর্ডও। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ৯টি গিরিবর্ত্ম ঘুরে এসেছে সুজয়ের ১০০ সিসির মোটরসাইকেল। আর অন্য দিকে, বারাসাত নবপল্লির রবিশঙ্কর গায়েন পাহাড়ের নেশায় ছেড়েছেন ভারতীয় রেলের নিশ্চিত চাকরি। মেট্রো রেলওয়ের চাকরি থেকে নিয়েছেন স্বেচ্ছা অবসর। তারপর পর্বতারোহণ আর বাইকিং। তবে এত দীর্ঘ পথে বাইক নিয়ে কখনও যাননি রবিশঙ্কর।
১০ সেপ্টেম্বর রওনা হয়ে ১০ অক্টোবর ফিরে আসার পরিকল্পনা এই দুই মাউন্টেন বাইকারের। মোট প্রায় ৬০০০ কিলোমিটারের মতো বাইকে আর প্রায় ৪০ কিলোমিটার ট্রেক করবেন তাঁরা এক মাসের অভিযানে। তাঁদের যাত্রাপথে পড়বে ভাগলপুর, বারানসী, কানপুর, দিল্লি, হরিদ্বার আর উত্তরকাশি। গঙ্গোত্রী থেকে ফেরার পথে এই দুই বাইকার যাবেন শ্রীনগর হয়ে বদ্রীনাথ, মানা পাস ও কর্ণপ্রয়াগ। ফিরতি পথে নৈনিতাল, বারেলি, এলাহাবাদ, বারানসী, গয়া ও ধানবাদ হয়ে ২২০ সিসির মোটরসাইকেল নিয়ে ফিরবেন বাংলায়। যাত্রাশুরু করে দশম দিনে গঙ্গোত্রী পৌঁছনোর পরিকল্পনা সুজয় মণ্ডল আর বারাসতের রবিশঙ্কর গায়েনের।
স্যার এডমন্ড হিলারির অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা ছিল নিউজিল্যান্ড সরকারের। আর এই দুই বাইকার চলেছেন সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে। নারী, শিশু বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজার শুভেচ্ছাও পেয়েছেন সুজয় আর রবিশঙ্কর। সুজয় মণ্ডলের নৈহাটির বাড়িতে এখন শেষ মুহূর্তের গোছগাছ চলছে। খুব কম খরচে এবং কম জিনিসপত্র নিয়ে কীভাবে দুরপাল্লার বাইকিং করতে হয় এ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত সুজয়। এর আগে পাহাড় ছাড়াও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাইকিং করেছেন তিনি। সেসব যাত্রার স্মৃতি কিছু নুড়ি, পাথর, স্ফটিক, জীবাশ্ম, জেলিফিস, শৈবাল কিংবা ভূর্জপত্র স্কুলের ছোটরা দেখতে বড় আগ্রহী। তারা সুজয়ের মনের খুব কাছের। তাঁদের ওই আপাত ফেলনা, আদতে খেলনার চেয়েও দামি সম্ভার দেখিয়ে প্রকৃতি বীক্ষণের প্রথম পাঠ দেন সুজয় মণ্ডল। এবার গঙ্গার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত দু’পাড়ের অববাহিকার কিছু সংগ্রহ আসতে চলেছে এই সম্ভারে। “মানুষের সঙ্গে কথা বলব, মিশব। তাই দামি বাইকিং জ্যাকেট বা খুব বেশি পাওয়ারফুল বাইক নয়। যতটুকু দরকার ততটুকুই আমরা নিয়ে যাচ্ছি’’, বললেন সুজয় মণ্ডল।
আরও পড়ুন: বিজয়নগরের হিন্দু সাম্রাজ্যের ইতিহাস বহন করে চলেছে কর্ণাটকের এই হাম্পি!
আরও পড়ুন: উত্সবের আগে আবারও উপহার রেলের! এবার শুরু হতে চলেছে ‘শ্রী রামায়ণ যাত্রা’