Hampi: বিজয়নগরের হিন্দু সাম্রাজ্যের ইতিহাস বহন করে চলেছে কর্ণাটকের এই হাম্পি!
এই হাম্পি মুসলিম সুলতান বাহিনীর দখলে চলে যায়। পতন সুনিশ্চিত হওয়ার আগে, সুলতানদের সঙ্গে এক নয় বরং একাধিক যুদ্ধ লড়েছে বিজয়নগরের এই সাম্রাজ্য। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি। হাম্পির মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যগুলি শেষ অবধি ধ্বংস হয়ে যায়।
গন্তব্যের জন্য কর্ণাটকের কথা ভাবলে, হাম্পির নাম সবার প্রথমে উঠে আসে। এই প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ শহরটি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস এবং এক সময় এটি ছিল মধ্যযুগের দ্বিতীয় সর্ব্ববৃহৎ শহর। তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে প্রায় ১৬ বর্গমাইল অঞ্চল জুড়ে হাম্পির ধ্বংসাবশেষটি অবস্থিত। ইউনেস্কো (UNESCO) এই হাম্পিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করেছে।
হাম্পি শহরটি ছিল ১৪ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী। ১৫৬৫ সালে বিজয়নগরের সর্বশেষ হিন্দু সাম্রাজ্যের পতন হয়। তারপর এই হাম্পি মুসলিম সুলতান বাহিনীর দখলে চলে যায়। পতন সুনিশ্চিত হওয়ার আগে, সুলতানদের সঙ্গে এক নয় বরং একাধিক যুদ্ধ লড়েছে বিজয়নগরের এই সাম্রাজ্য। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি। হাম্পির মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যগুলি শেষ অবধি ধ্বংস হয়ে যায়।
প্রায় ১৬০০ জীবিত স্থাপত্যের বাসস্থান এই হাম্পি শহর, যার মধ্যে রয়েছে; মঠ, আবাসন, দূর্গ, মন্ডপ, স্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ ও জলস্থাপত্য ইত্যাদি। ধ্বংস হলেও হাম্পি এখনও উচ্চ স্তরের ধর্মীয় মূল্যবোধ বহন করে চলেছে। হাম্পির অক্ষত মঠগুলি এখনও সেখানকার একনিষ্ঠ মানুষের ঐতিহাসিক জীবনযাপনকেই সমাজের সামনে তুলে ধরে।
সে যুগে সম্ভবত ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ ধনবান শহর ছিলো হাম্পি; যার সুবাদে পর্তুগীজ ও পারস্যের ব্যবসায়ীরা প্রবলভাবে শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। স্থানটি মধ্যযুগের গোড়ার দিকের তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি ছিল। সেই সময় এই তীর্থস্থানটি পম্পক্ষেত্র নামে পরিচিত।
হিন্দু মহাকাব্য গ্রন্থেও এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়। হাম্পি অঞ্চলটির সঙ্গে মহাকাব্যে বর্ণিত বহু জায়গার সাদৃশ্য পাওয়া গিয়েছে। আঞ্চলিক বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন এটাই রামায়ণে উল্লেখিত সেই স্থান, যা তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যা অধ্যায় থেকেই মূলতঃ স্থানটির খ্যাতি ছড়িয়েছে। রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যা অধ্যায়ে রাম ও লক্ষণের সঙ্গে হনুমানের সাক্ষাৎ ঘটে এবং এই অধ্যায়তেই সুগ্রীব ও বানর বাহিনী অপহৃত সীতার অনুসন্ধানে রত হয়।
শহরের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ও হাম্পির ঐতিহাসিক রাস্তাগুলিতে। হাম্পির অধিকাংশ স্থাপত্যই বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বিজয়ের স্মৃতিতে নির্মিত। এখানকার অনেক মন্দিরে শিব ও কৃষ্ণের মত দেবতারা পূজিত হয়ে থাকেন।
আজকের হাম্পি শ্বাসরুদ্ধকর এই দৃশ্য ভারত তথা কর্ণাটকের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। ভারতের সমৃদ্ধশালী ইতিহাস প্রত্যক্ষ করতে ও স্থাপত্যগত উৎকর্ষতা সম্বন্ধে জানার আগ্রহ থাকলে, অথবা যদি কোনও সুদৃশ্য ভ্রমণস্থানের সন্ধানে থাকেন, তাহলে হাম্পিই হবে আপনার জন্য সেই উপযুক্ত গন্তব্যস্থল।
আরও পড়ুন: হিমাচল মানেই কি সেই মানালি-সিমলা? এবার ঘুরে আসুন এই অফবিটে
আরও পড়ুন: বিশ্বের কিছু সেরা দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারেন এই উপত্যকায়!